ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

ভাষা শেখানোর জন্য ‘ইংলিশ দেবীর মন্দির’

আহ্সান কবীর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১০
ভাষা শেখানোর জন্য ‘ইংলিশ দেবীর মন্দির’

ভারতের উত্তর প্রদেশের দলিত সম্প্রদায় অধ্যুষিত লাখিমপুর খেরি জেলায় এবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ‘ইংলিশ দেবীর মন্দির’। পশ্চাৎপদ দলিত জনগোষ্ঠীকে ইংরেজি শেখানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে অখ্যাত অজপাড়ায় স্থাপিত এ মন্দিরটি ২৫ অক্টোবর উদ্বোধন করার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে পিছিয়ে আগামী নভেম্বরে নেওয়া হয়েছে।



চলতি বছরের এপ্রিলে শুরু করে এরই মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করে আনা কালো গ্রানাইট পাথরের একতলা ওই মন্দির ভবনে স্থাপন করা হয়েছে ৩ ফিট উঁচু ‘দলিতদের ইংলিশ দেবী’কে। কম্পিউটার আকৃতির একটি ভিত্তির ওপর স্থাপন করা হয়েছে নয়া এই মন্দিরের আরাধ্য দেবীকে। দেবীর আকৃতি গড়া হয়েছে স্ট্যাচু অব লিবার্টির অনুকরণে। আর যে ডেস্কটপ কম্পিউটারের ওপর দেবী দাঁড়িয়ে, তার পর্দায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ধর্মচক্রের (বুদ্ধপ্রতীক) রূপ।  

গায়ে আলখাল্লা আর মাথায় ইংলিশ হ্যাট পরা তামাটে বর্ণের এই দেবীর বাম হাতে রয়েছে ভারতীয় সংবিধানের একটি কপি আর অপর হাতে হাতটি উঁচু করে তাতে ধরা আছে জ্ঞানের প্রতীক একটি কলম।

অনগ্রসর দলিত সম্প্রদায়ের শুভাকাঙ্ক্ষীদের দানের টাকায় লাখিমপুর খেরি জেলার বাংকা গ্রামে দলিতদের পরিচালিত ‘নালন্দা পাবলিক শিক্ষা নিকেতন’-এর আঙ্গিনায় স্থাপিত মন্দিরটি পরিচালিত হবে একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে।  

প্রথমে মন্দিরটি উদ্বোধনের শুভক্ষণ ধার্য হয়েছিল দলিতদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য স্মরণীয় লর্ড ম্যাকাউলের জন্মদিন অক্টোবরের ২৫ তারিখে। ‘কিন্তু অনিবার্য কিছু কারণে এখন এর উদ্বোধন হবে নভেম্বরে কোনও একদিন,’ ইংলিশ মন্দিরের পরিকল্পক ও রূপকার চন্দ্রভান প্রসাদ জানান পিটিআইকে।

তিনি বলেন, ‘ভারত স্বাধীন হওয়ার পর এর রাষ্ট্রভাষা নিয়ে যখন বিতর্ক চরমে, তখন একমাত্র দলিত সম্প্রদায়ের নেতা ড. আম্বেদকরই উচ্চকণ্ঠে ইংরেজির পক্ষে মত দিয়েছিলেন। অন্য নেতারা কিন্তু এর বিরোধিতা করেছিলেন একজোটে। আর আজ আমরা দেখছি সমাজে ভারসাম্যের মানদণ্ড গড়ে দিচ্ছে ইংরেজি জানা আর না জানার বিষয়টি। যারা ইংরেজি জানে না তারা পিছিয়ে পড়ছে ক্রমশ। ’

উদ্যোক্তারা জানান, মন্দিরটি গড়া হয়েছে ইংরেজিকে এখানকার দলিতদের মাঝে জনপ্রিয় করে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে। কারণ দলিতরা শুধু এই গ্রামেই নয়, সংখ্যার দিক দিয়ে অত্র এলাকায় একটি উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী। কিন্তু তারা সমাজের পশ্চৎপদ অংশ। ইংলিশ দেবীর মন্দিরের প্রভাবে এখানকার দলিতদের জীবনমানের উন্নতি হবে- এটাই তাদের আশা।

প্রসাদ আরও বলেন, ‘যে কোনও জাতি বা গোষ্ঠীর ক্রমবিকাশের জন্য ইংরেজি জানাটা এখন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। ’ তার বিশ্বাস, ‘আগামী ২০ বছর সময়ের মধ্যে ইংরেজি না জানা লোকদের জন্য ভদ্রস্থ কোনও কাজ জোটানোও অসম্ভব হয়ে পড়বে। ’

অভিনব এ ধর্মশালার আবহে আধুনিকতার ছাপ আনতে এর দেওয়ালগুলোতে খোদাই করা থাকবে পদার্থ-রসায়ন আর গণিতের বিভিন্ন সূত্র ও প্রতীক। থাকবে বিখ্যাত সব ইংরেজি প্রবাদও। এ ছাড়া মন্দিরের ছাদে যাওয়ার সিঁড়ির ধাপগুলোও এমনভাবে নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে এগুলোকে একসঙ্গে দেখতে কম্পিউটারের কি-বোর্ডের মতো লাগে।

মন্দির-এলাকার দলিত সম্প্রদায় এরই মধ্যে একটি গানও বেঁধে ফেলেছে, যা মন্দিরের প্রতিদিনের প্রার্থনায় গাওয়া হবে।

উদ্যোক্তাদের আশা, অচিরেই এই মন্দির স্থানীয়দের জীবনাচারের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হবে। বিশেষ করে নবজাতকদের নিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার পালন এবং বিয়েশাদির আনুষ্ঠানিকতাগুলো এ মন্দিরকে ঘিরেই করবে দলিত সম্প্রদায়। এর ফলে রথ দেখার সঙ্গে সঙ্গে কলা বেচার মতো ধর্মাচারের পালকিতে সওয়ার হয়ে ইংরেজি শেখার কাজটিও অনেকদূর এগিয়ে যাবে।    

সূত্র : এনডিটিভি, পিটিআই ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৭৫০, অক্টোবর ২৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।