ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

মানিকগঞ্জের ঢাক-ঢোল পাড়া

আশরাফুল আলম লিটন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১০
মানিকগঞ্জের ঢাক-ঢোল পাড়া

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া গ্রামের মুনিদাশ পাড়াকে সবাই ঢাক-ঢোল পাড়া হিসেবেই চেনে। মুনিদাশ পাড়ার সবার ব্যস্ত সময়  কাটে ঢাক, ঢোল, ডুগি, তবলা আর কঙ্গ তৈরির কাজে।

সেখানে অলস বসে না থেকে ছোট-বড় সবাই কোনও না কোনও  কাজ করেন।   এখানে নারীরাও আছেন সহযোগীর ভূমিকায়। তারা বানান ডুগি-তবলার বিড়া। গৃহস্থালির কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তারা লেগে যান পুরুষদের সাথে। দিন-রাত চলে বিরামহীন কাজ। বসে থাকার কোনও জো নেই। আর পূজা এলে তো কথাই নেই। ব্যস্ততা বেড়ে যায় বহু গুণ। খাওয়া-নাওয়ার সময়ও পাওয়া যায় না।

মনিদাশ পাড়ার শতবর্ষী খগেন্দ্র দাশের সাথে কথা বলে জানা যায়, মনিদাশ পাড়ায়  প্রায় ২৫টি পরিবার এই ঢাক-ঢোল বানানোর কাজে জড়িত । কেউ পৈতৃক পেশা হিসেবে, আবার কেউ শখ করে এই কাজ করে থাকেন। এখানে প্রায়  ত্রিশ বছর ধরে এই কাজ করা হচ্চে। ঘিওরের এই মুনিদাশ পাড়ায় আর মানিকগঞ্জের গড়পাড়ায় ২-৩টি পরিবার এই কাজের সাথে জড়িত।  

পাড়ার আরেক প্রবীণ ব্যক্তি খোকা রাম (৮০) জানান, মুক্তিযুদ্ধের কয়েক বছর পরে শ্রীকান্ত বাবু নামের এক লোকের কাছ থেকে আমরা কয়েকজন এই কাজটি শিখেছিলাম। পরে অনেকেই এই কাজের সাথে জড়িত হয়েছেন। পাড়ার সবাই এই কাজ করেই সংসার চালান। এখানে পাইকারি এবং খুচরা বাদ্যযন্ত্র বিক্রি করা হয়। ঢাকার বড় বড় বাদ্যযন্ত্রের শোরুমে এমনকি বিদেশ থেকেও  অর্ডার আসে এখানে।  

বকুল চন্দ্র দাশ (৪৫) জানান, আমি প্রায় ২০ বছর ধরে এই কাজের সাথে জড়িত। বাদ্যযন্ত্র বানাতে আমরা আম, নিম, রেন্ডিকড়ই, শিমুল কাঠ ব্যবহার করে থাকি। এখানে আমরা ঢাক, ঢোল, ডুগি, তবলা, কঙ্গ ও বাচ্চাদের ঢোল তৈরি করে থাকি। এখানে কাঠ ও আকারভেদে বাদ্যযন্ত্রের দাম বিভিন্ন রকমের। তবে একটি ঢাক ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, তবলা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়ে থাকে। একেকটি যন্ত্র তৈরি করতে প্রায় ৪-৫ দিন লেগে যায়। ক্রেতারা যেভাবে অর্ডার দেন আমরা সেভাবেই কাজ করে দিই।

নারায়ণ চন্দ্র দাশ (৪৪) জানান, আমাদের তৈরি বাদ্যযন্ত্র ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জায়গায় যায়। এ বছর আমরা ঢোলের সবচেয়ে বড় অর্ডার পেয়েছি রামপুরার বাংলাদেশ তাল তরঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা এমনকি দেশের বাইরেও ঘিওরের মুনিদাশ পাড়ার বাদ্যযন্ত্রের অনেক সুনাম আছে। পরিশ্রম বেশি, তবে লাভ খুব একটা না-- এমনটাই জানালেন ঢাকঢোল পাড়ার বাসিন্দারা। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো এ শিল্পটি আরো সমৃদ্ধ হবে এমনটিই প্রত্যাশা তাদের।  

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০৪৫, অক্টোবর ১৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।