ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

দিল্লির দুর্গাপূজা

রক্তিম দাশ, কলকাতা করসেপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১০
দিল্লির দুর্গাপূজা

অনেকেরই ছোটবেলা কেটেছে কলকাতায়। অথচ জীবন-জীবিকার জন্য আজ তারা দিল্লিবাসী।

সারা বছর অনেকটাই পাশ্চাত্য জীবনধারায় অভ্যস্ত। কিন্তু বাঙালিয়ানা তো মিশে আছে রক্তে। এরই টানে দুর্গা পূজার কটা দিন পুরোদস্তুর বাঙালি হয়ে ওঠেন তারা। কলকাতার মতোই দিল্লির দুর্গা পূজার আছে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস।

ঘটপুজো করে দিল্লিতে দুর্গা পূজা শুরু হয় ব্রিটিশ ভারতে, ১৮৪২ সালে। ১৯১২ সালে বাঙালি খ্রিস্টান পরমানন্দ বিশ্বাস প্রথম প্রতিমা এনে দুর্গা পূজা করেন। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে দুর্গা পূজায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েন দিল্লিবাসী বাঙালিরা।

এখন পূজা উপলক্ষে দিল্লিতে সবচেয়ে বেশি মেতে ওঠে নতুন দিল্লি কালিবাড়ি, দক্ষিণ দিল্লি কালিবাড়ি, মাতৃমন্দির, চিত্তরঞ্জন পার্ক, নিবেদিতা এনকেভ, মিন্টো রোড, মুখার্জি নগর, সরোজিনি নগর, রামকৃষ্ণপুরম, মতিবাগ, করোলবাগসহ বিভিন্ন এলাকা। তবে দিল্লিতে সবচেয়ে বেশি দুর্গা পূজা হয় বাংলাদেশ থেকে থেকে আগত মানুষজনের এলাকা চিত্তরঞ্জন পার্কে।

দিল্লি প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী এবার ৩৫০টি দুর্গা পূজা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে মতান্তর আছে। বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যাটা ৫০০-রও বেশি।

শারদ উৎসবের এই কটা দিন দিল্লির বাঙালিরা পুরোপুরি বাঙালি বেশভুষায় সাজেন। পরেন গিলে করা ধুতি-পাঞ্জাবি। লালপেড়ে শাড়ি, বড় সিন্দুরে টিপ এবং ঘোমটা মাথায় বাঙালি নারীরা হয়ে ওঠেন চিরাচরিত বাঙালি বধূ।

পূজার দিনগুলিতে কেউ বাসায় রান্না করেন না। ম-পেই থাকে খাওয়ার ব্যবস্থা। অষ্টমী-নবমীতে ব্যাপক ভোজের আয়োজন। তার সঙ্গে ঢাকের তালে উদ্দাম ধুনচি নাচ। এর মধ্যে দুটি পূজা কমিটি ভোজের আয়োজন করে পাঁচতারা হোটেলে। কলকাতার মতোই দিল্লিতে সার্বজনীন পূজাগুলিতে আছে থিম পূজার প্রতিযোগিতা। সঙ্গে থাকে প্রতিদিন বলিউড আর কলকাতার চিত্রতারকা ও শিল্পীদের দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

তবে এবার কমনওয়েলথ গেমসের জন্য দিল্লি সরকারের কড়াকড়ি এই আনন্দ কিছুটা হলেও ম্লান করেছে। এবার গেমসের জন্য দিল্লি সরকার নতুন করে কোনও পূজার অনুমতি দেয়নি। শুধু তাই নয়, গেমস চালু থাকার জন্য যষ্ঠী ও সপ্তমীর দিন উৎসবের ওপর জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা, লাউড স্পিকার ও ব্যাপক জনসমাবেশ সবই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে পূজা ঘিরে মেলাকেও।

এভাবে রাজ্য সরকার দিল্লিবাসী বাঙালিদের দুর্গা পূজা আয়োজনের পথে বাধা সৃষ্টি করায় বেশ চটেছেন তারা। ধিক্কার দিচ্ছেন দিল্লি ও ভারত সরকারকে।

প্রতিবাদ না করায় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি, লালকৃষ্ণ আদভানি ও বিজেপি দলকেও তারা গালিগালাজ দিতে ছাড়ছেন না। কিন্তু তাতে হেলদোল নেই সরকারের। কাজেই এবারের মতো দুর্গা পূজার আনন্দ প- হওয়ার মুখে দিল্লিবাসী বাঙালিদের।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২২৩০, অক্টোবর ১৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।