ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

টেরাকোটার ক্যানভাসে ফুটে উঠল বাঙালির গৌরবগাথা

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩
টেরাকোটার ক্যানভাসে ফুটে উঠল বাঙালির গৌরবগাথা মৌলভীবাজারে নবনির্মিত টেরাকোটা। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: টেরাকোটায় উঠে এসেছে বাঙালির বিভিন্ন ঘটনাবলি। ভাষা আন্দোলন, গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতি নানা সংগ্রাম ও অধিকারের প্রতীকী চিত্র।

এই চিত্রগুলোই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের আত্মপরিচয়।  

মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনে উপস্থাপিত হচ্ছে টেরাকোটায় বাঙালির গৌরবগাথা। বাঙালি জাতির আন্দোলন ও সংগ্রামগুলো এখানে প্রতীকী অভিব্যক্তিতে প্রকাশ করা হয়েছে।

এই টেরাকোটাতেই জাগ্রত হয়েছে সংগ্রামী চেতনাবোধ। শিল্পীর শৈল্পিক ছোঁয়ায় টেরাকোটার ফ্রেমে নির্মাণশৈলীর দিক দিয়ে স্থাপনাটি এক অনন্য নিদর্শন।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নির্মিত টেরাকোটার দৈর্ঘ্য ৬০ ফুট ও প্রস্থ ৫ ফুট। কোনোটা বড় আকারের মুখোশ, কোনোটা নারীর গড়ন। মধ্যখানে বড় পরিসরে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তেজোদ্দীপ্ত তর্জনী।

মৌলভীবাজার হানাদারমুক্ত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর। এ দিবসটি শীতের সকালে বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে যোদ্ধারা। যেন একটি নতুন উদীয়মান সূর্যের উন্মোচন করতে সকালের কুয়াশা উঠেছিল। দীর্ঘ প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, আন্দোলন এবং স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত নয় মাসের লড়াইয়ে বিজয় উল্লাসের স্মৃতিপট।  

টেরাকোটার ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনসহ পরবর্তী ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান। ৭০ এর নির্বাচন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চা বাগানে গণহত্যা। অদম্য সাহসী যোদ্ধা সর্বকনিষ্ঠ বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি শহীদ হামিদুর রহমানের অসম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধের কাহিনি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিশ যে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন আমাদের স্বাধীনতার প্রথম দিকে রাজারবাগ থেকে শুরু মহাকাব্যগুলো এই স্মরণীয় টেরাকোটার কাঠামোতে ফুটে উঠেছে।

টেরাকোটার কাজটি করছেন শিল্পী আহসান আহমেদ। অসাধারণ কাজের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে বাংলাদেশের বিবর্তন ও পরিবর্তনের ঐতিহাসিক এই মুহূর্তগুলো।

সম্প্রতি দেখা যায়, পুলিশ লাইনের মূল ফটকের উত্তর দিকে সবুজ ও সতেজতায় ল্যান্ডস্কেপে কংক্রিটের সেটে লম্বাকৃতির একটি সংমিশ্রণ, পোড়ামাটির ম্যুরাল এবং কংক্রিটের গ্রাফিক্যাল ভাস্কর্যে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের তেজোদীপ্ত ভাষণের কারুকার্য, স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ দেশমাতৃকার বীর সন্তানদের মুক্তিযুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের সময়ের সুচারু অবয়ব। এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রাইফেল হাতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নজরকাড়া বিপ্লবী ভঙ্গিমা। ধারাবাহিকভাবে ধরা দিয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসের দৃশ্যপট। দূর থেকে দেখলে মনে হয় খোলা আকাশের নিচে বীর সৈনিক বিজয়ীর বেশে নির্ভীক প্রহরীর মতো স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন।

পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান বলেন, পুলিশ সদস্যদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরো কাজটি সম্পন্ন হবে। এরপর এটি উদ্বোধন করা হবে। এমন স্থাপত্যের মাধ্যমে শুধু পুলিশ সদস্যরা নয়, দর্শনার্থীরাও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং পূর্ববর্তী ঘটনাবলি সম্পর্কে জানতে পারবে। বুকে ধারণ করবে দেশপ্রেমের প্রতিজ্ঞা।

তিনি বলেন, টেরাকোটার চিত্রপটে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধে বীর শহিদদের আত্মত্যাগ, দুঃখ ও শোকের প্রতীক দৃশ্যমান। যা প্রতি ক্ষণে মনে করিয়ে দিচ্ছে বাংলার স্বাধীনতার গৌরবময় স্মৃতির কথা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।