ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

কুয়াকাটার সুন্দর

গোফরান পলাশ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১০
কুয়াকাটার সুন্দর

আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে কুয়াকাটা এক দশকের বেশিকাল ধরে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছে। বলা হয়, পৃথিবীর দুটি মাত্র অঞ্চলে একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়।

বাংলাদেশের সেই স্থানটি হলো কুয়াকাটা। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে সেখানে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক জড়ো হন।

ঢাকা থেকে আরিচা হয়ে কুয়াকাটার দূরত্ব ৩৮০ কিলোমিটার। মাওয়া থেকে এর দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার কমে যায়। তবে সড়ক ও নৌ উভয় পথই ব্যবহার করা যায় কুয়াকাটা আসতে। খুলনা-যশোর থেকে বিআরটিসি, চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া পরিবহন এবং ঢাকা থেকে দ্রুতি পরিবহন, ঈগল পরিবহন, সুগন্ধা পরিবহন, মেঘনা পরিবহন, সাকুরা পরিবহনের দুরপাল্লার বাসগুলো সায়েদাবাদ কিংবা গাবতলী বাস টারমিনাল থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এছাড়া রেন্ট-এ-কার কিংবা প্রাইভেট কার নিয়েও আসা যায়। তবে বরিশালের পর সড়ক পথে কুয়াকাটা পৌঁছতে দবদবিয়া, লেবুখালী, কলাপাড়া, হাজীপুর ও মহিপুর এ পাঁচটি ফেরি পার হতে হয়। যেসব পর্যটকরা ঢাকা থেকে কুয়াকাটা লঞ্চযোগে আসতে চান তারা ঢাকা সদরঘাট থেকে এমবি আঁচল-৬, পারাবত, সুন্দরবন, দ্বীপরাজ, সুরভী, কীর্তনখোলা, সৈকত, প্রিন্স অব বরিশালে চড়ে বরিশাল কিংবা পটুয়াখালী এসে নামতে পারেন। সেখান থেকে গাড়িতে করে কুয়াকাটা।

কুয়াকাটায় পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের পর্যটন হলিডে হোমস মোটেল। এছাড়া আছে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, সওজ, এলজিইডি ও পাউবোর বাংলো। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে প্রায় ৫০টি আবাসিক হোটেল। এর মধ্যে কুয়াকাটা ইন্টারন্যানাল, স্কাইপ্যালেস, নীলাঞ্জনা, সি-ভিউ, গোল্ডেন প্যালেস, বিসভেলি, গ্রেভার ইন, বনানী প্যালেস ও আনন্দবাড়ি রেস্টহাউজ অন্যতম। এসব হোটেলের রুম পর্যটকরা ফোন দিয়ে অগ্রিম বুকিংও নিতে পারেন।

কুয়াকাটায় সমুদ্র ভ্রমণে স্পিডবোট ও ছোট ছোট ট্রলার রয়েছে। এসব স্পিডবোট ও ট্রলারে চড়ে সুন্দরবনের পূর্বাংশ ট্যাংরাগীরির ফাতরার বন, সোনারচর, হাঁসের চর, কটকা ও গঙ্গামতি লেক ইত্যাদি স্থানে ভ্রমণ করা যায়। এছাড়া সমুদ্র সৈকতে রয়েছে অসংখ্য মোটর সাইকেল ও ভ্যান। এগুলোর মাধ্যমে কুয়াকাটা সৈকতের ১৮ কিমি দীর্ঘ বিচ, মিশ্রিপাড়ার বৌদ্ধবিহার, মম্বিপাড়া সৎসঙ্গের আশ্রম, শুঁটকি পল্লী, গঙ্গামতির ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, ইকোপার্ক, রাখাইন মার্কেটসহ রাখাইন পল্লীর এলাকাগুলোতে ঘুরে বেড়ানো যায়।

কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাগরের নীল ঢেউ, বালুকারাশি, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মতো লোভনীয় সৌন্দর্যই পৃথিবীর ভ্রমণপিপাসুদের মাঝে কুয়াকাটার পরিচিতি এনে দিয়েছে। ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে এ উপকূলীয় অঞ্চলে আদিবাসী রাখাইনদের আগমনের ফলে এ এলাকায় মানুষের প্রথম বসবাস শুরু হয়। তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ বিভারেজের অনুসন্ধানী জরিপ মতে অঞ্জু মং-এর নেতৃত্বে এ এলাকায় প্রথম আদিবাসী রাখাইন সম্প্রদায়ের আগমন ঘটে। পরে থুঙ্গারী ও হাঙ্গারী মং দু ভাইয়ের নেতৃত্বে বন জঙ্গল কেটে রাখাইন সম্প্রদায় আবাসভূমি গড়তে শুরু করে বলে ম্যাজিস্ট্রেট এইচ বিভারেজ তার তৎকালীন সময় প্রকাশিত একটি বইতে বর্ণনা করেছেন। কুয়াকাটায় মিষ্টি পানির অভাব মেটাতে রাখাইনরা বালুমাটি খুঁড়ে ছোট ছোট কূপ খনন করে পানি সংগ্রহ করত। সেই কুয়া থেকে আজকের কুয়াকাটা নামকরণ করা হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

কুয়াকাটা প্রেসকাবের সভাপতি মো. নাসির উদ্দীন বিপ্লব বাংলানিউজকে জানান, কলাপাড়া-কুয়াকাটা ২২ কিমি সড়কের সংস্কারসহ তিনটি ব্রিজ স্থাপন, কুয়াকাটায় এক্সকুসিভ ট্যুরিস্ট জোন নির্মাণ, অনলাইন ব্যাংকিং স্থাপনসহ সৈকতের ভাঙনরোধে স্থায়ী পদপে গৃহীত হলে প্রতিদিন অগণিত দর্শনার্থীর সমাগম হবে এখানে। এর মধ্য দিয়ে কুয়াকাটা পর্যটন এলাকা থেকে বছরে কোটি টাকার রাজস্ব আয় করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ০০২৩, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।