ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

নীলফামারীতে লুকিয়ে থাকা বাঘের খোঁজ মেলেনি, সতর্ক থাকার আহ্বান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২২
নীলফামারীতে লুকিয়ে থাকা বাঘের খোঁজ মেলেনি, সতর্ক থাকার আহ্বান

নীলফামারী: নীলফামারীতে মুরগি খেতে গিয়ে খামারে পেতে রাখা বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মৃত চিতা বাঘটির সঙ্গে আরও একটি চিতা এসেছিল বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু অনেকে খুঁজেও আরেকটি বাঘের সন্ধান মেলেনি।

তাই স্থানীয়দের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

রোববার (২০ মার্চ) বনবিভাগের বিশেষ টিম অনেক খুঁজেও বাঘটি না পেলে ফিরে গেছে। দুপুরে নীলফামারী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার এবং একা না চলতে পরামর্শ দিয়েছে বনবিভাগ।  

সদর উপজেলার চওরাবড়গাছা ইউনিয়নের চৌরঙ্গী বাজারের নতিবাড়ি গ্রামে একাধিক বাঘের পায়ের ছাপ দেখার কথা শোনা গিয়েছিল। তবে এগুলো বাঘের পায়ের ছাপ নয় বলে নিশ্চিত করেছে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য বিভাগ।

শুক্রবার (১৮ মার্চ) ওই ইউনিয়নের দলবাড়ি গ্রামের একটি মুরগির খামারে পেতে রাখা বৈদ্যুতিক ফাঁদে বিদ্যুতায়িত হয়ে একটি চিতা বাঘ মারা যায়। এসময় আরও একটি বাঘকে খামারের পাশের ভুট্টা ক্ষেতে লুকিয়ে থাকতে দেখেছেন বলে জানান গ্রামবাসী। রাজশাহী ও ঢাকা থেকে আসা বনবিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট এবং রংপুর বনবিভাগের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাঘটি খুঁজতে গিয়ে ওই গ্রাম থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নতিবাড়ি চৌরঙ্গী বাজার গ্রামে বাঘের পায়ের মতো কিছু ছাপ দেখতে পায়। তবে সেখানে বাঘের দেখা মেলেনি বলে জানিয়েছেন রংপুর বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা স্মৃতি সিংহ রায়।  

বাঘের পায়ের ছাপ দেখায় চওড়া বড়গাছা ও গোড়গ্রাম ইউনিয়নের প্রায় ছয়টি গ্রামের মানুষের মধ্যে বাঘ আতঙ্ক বিরাজ করছে।
 
গ্রামবাসীকে সতর্ক থাকতে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পক্ষ থেকে গ্রামের মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছিল বলে জানান চওরাবড়গাছা ইউপির চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বিটু এবং গোড়গ্রাম ইউপির চেয়ারম্যান মাহবুবু জজ।  

চওড়া বড়গাছা ইউপির দলবাড়ি গ্রামের মুরগির খামারের আশপাশে বনবিভাগের পক্ষ থেকে লাল পতাকা দিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ করা হয়। দলবাড়ি, বাঘপাড়া, ডারিরপাড়, ধোবাডাঙ্গা, তীলবাড়ি ডাঙ্গা, কাঞ্চনপাড়া, হিন্দুপাড়া গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না।  

রংপুর বনবিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা স্মৃতি সিংহ রায় বলেন, আমরা টিম শুক্রবার দুপুর থেকে গ্রামটিতে অবস্থা করেছি। তাছাড়া রাজশাহী ও ঢাকা থেকে বনবিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমনের দু’টি ইউনিট আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। আমরা দলপাড়া গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় সন্ধান চালিয়েছি বাঘটির অবস্থান নিশ্চিত হতে। বাঘের সন্ধান পাওয়া না গেলেও ঘটনাস্থল দলবাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নতিবাড়ি চৌরঙ্গী এলাকায় বাঘের পায়ের মতো কিছু ছাপ দেখতে পেয়েছি। তবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে পায়ের ছাপগুলো মেছো বিড়াল বা কুকুরের। আমরা নিশ্চিত, এখানে আর কোনো বাঘ নেই। তাই আমরা বাঘ খোঁজার কাজ শেষ করে চলে যাচ্ছি।

এলাকাবাসীকে বলেছি, ভয়ের কিছু নেই, এ এলাকায় এখন কোনো বাঘ নেই। যে চিতা বাঘটি মারা গেছে, আমরা ধারণা করছি, সেটি ভারতীয় সীমানা থেকে এসেছে। এ অঞ্চলেও চিতা বাঘ দেখা যেত আগে, কিন্তু আমাদের এ অঞ্চলে বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় এখন আর বাঘ দেখা যায় না। এ গ্রাম থেকে ভারতীয় সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার। তাতেই অনুমান করা যায়, ভারতের কোনো জঙ্গল থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাঘ বাংলাদেশের এ গ্রামে এসেছিল।  

তিনি বলেন, বাঘটিকে হত্যা করা হয়েছে, নাকি এটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছে, তা ভিসেরা রিপোর্ট ঢাকা থেকে হাতে এলেই জানা যাবে। তারপরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। হত্যা প্রমাণিত হলেই শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

আরও পড়ুন:

পায়ের ছাপে চিতাবাঘ খুঁজছে এলাকাবাসী, সতর্ক বন বিভাগ

ফাঁদে চিতা বাঘের মৃত্যু, সঙ্গীকে খুঁজছে বিশেষ টিম

খামারে মুরগি খেতে গিয়ে মারা পড়ল চিতা!

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।