ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস আজ 

মানুষের সঙ্গে ক্রমশই প্রতিহিংসা বাড়ছে বন্যপ্রাণীর

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২২
মানুষের সঙ্গে ক্রমশই প্রতিহিংসা বাড়ছে বন্যপ্রাণীর শহরের মাঠে মরে পড়েছিল নিশাচর গন্ধগোকুল। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: ক্রমগত বৃদ্ধি পাচ্ছে জনসংখ্যা। চারদিকের পরিত্যক্ত জায়গাগুলো আজ পূর্ণতা হচ্ছে মানুষের বিচরণ।

জনহীন বা খালি জায়গা বলতে যা বোঝায় তা আর অবশিষ্ট নেই একটুও। ফলে মানুষের আশ-পাশে বসবাসকারী প্রাণীরা আজ মারাত্মক হুমকির মুখে। গ্রাম বা শহর সংলগ্ন বসবাসকারী বন্যপ্রাণীরা আজ শুধু নিরাপত্তাহীন।

এই চিত্র গ্রাম এবং শহরে। গ্রামে যদিও পরিস্থিতি ততটা ভয়াবহ নয়, তবে শহরে এই পরিস্থিতি খুবই সংকটাপন্ন। কিছুতেই আর বন্যপ্রাণীরা শহর সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করতে পারছে না। এতো কাল ধরে এভাবে বসবাস করলেও আজ নানা কারণে মারা যাচ্ছে প্রাণীগুলো।  

পাহাড়, টিলা আর সংরক্ষিত বনাঞ্চল নিয়েই শ্রীমঙ্গল শহর। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রাপ্তের ১৮৪ দশমিক ২৯ বর্গকিলোমিটারের শতকরা ৪৩ দশমিক ৩৪ এলাকাই চা বাগান অঞ্চল অধ্যুষিত।

এছাড়াও পাহাড়, রেইন ফরেস্ট এবং হাওর-বিলের জন্য দারুণ জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ এলাকা শ্রীমঙ্গল। কিন্তু এখানেই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এবং বিচরণ।  সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরে কিছু দিনের ব্যবধানে দুটি ‘গন্ধগোকুল’ প্রাণ হারিয়েছে। একটি গন্ধগোকুল শ্রীমঙ্গল শহরের গুহরোডে এবং অপরটি ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে মৃত অবস্থায় পড়েছিল। খবর পেয়ে মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জ এদের নিয়ে গিয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের পর মাটিচাপা দেয়।  

এসব ঘটনাবলী থেকেই এখন বোঝা যায়, আমাদের চারপাশে বসবাসকারী বন্যপ্রাণীর সঙ্গে মানুষের দ্বন্দ্বটা শুরু হয়ে গেছে। এর পরিসমাপ্তি কবে, কেউ বলতে পারবে না।

এদের ইংরেজ নাম ‘এশিয়ান পালম সিভিট’ বা ‘কমন পালম সিভিট’। গন্ধগোকুলের বৈজ্ঞানিক নাম Paradoxurus hermaphroditus. গন্ধগোকুল মাঝারি আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। লেজসহ এদের দৈর্ঘ্য ৯২ থেকে ১১২ সেন্টিমিটার এবং ওজন আড়াই থেকে ৫ কেজি হয়ে থাকে। এরা নিশাচর এবং দীর্ঘ লেজের মাংসাশী প্রাণী।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) গবেষণায় এই প্রাণীটিকে আন্তর্জাতিকভাবে এবং বাংলাদেশের প্রকৃতিতে ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ বা (এলসি) প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। পুরাতন বড় আকারের গাছ-পালা, বন-জঙ্গল, ঝোপঝাড় কমে যাওয়ায় দিন দিন এদের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। গন্ধগোকুল এখন অরক্ষিত প্রাণী হিসেবে বিবেচিত।  

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর এবং বন্যপ্রাণী বিষয়ক গবেষক ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‌‘গন্ধগোকুল রাস্তায় যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলে অবশ্য গাড়ির ধাক্কায় মারা গেছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই স্পিডব্লেকার (গতি নিয়ন্ত্রক) থাকতে হবে, ‘বন্যপ্রাণী বিচরণকারী এলাকা’ শিরোনামে বিলবোর্ড থাকতে হবে। আর প্রাণীটি যদি মাঠে মারা গিয়ে থাকে তাহলে একে কেউ মেরেছে কিনা তা দেখার বিষয়। ’বিশেষ করে আমাদের সমাজের লোকজনের মধ্যে বন্যপ্রাণী নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার এবং অবাস্তব-ভিত্তিহীন গল্প আছে। এসবের ফলে দেখা যায় বন্যপ্রাণী দেখলেই একশ্রেণির লোকজন এদেরকে না মারা পর্যন্ত শান্তি পায় না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।  

উপকারিতার বিষয়ে এ গবেষক বলেন, ‘এদিক দিয়ে আমাদের সচেতনতা আরও বেশি বেশি করে বাড়াতে হবে। প্রত্যেকটা বন্যপ্রাণীই আমাদের উপকার করে থাকে। এই গন্ধগোকুলের কথাই যদি ধরি এরা কিন্তু ক্ষতিকর ইঁদুর, সাপ, সাপের বাচ্চা, ডিম এগুলো থেকেই কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাহলে এই উপকারী প্রাণীটিকে আমরা যদি মেরে ফেলি তাহলে পরিবেশে এর বিরূপ প্রভাব পড়বেই। ’ 

আমাদের চারপাশ থেকে এখন গন্ধগোকুলদের দিনের বেলায় লুকানোর বা আত্মগোপন করে থাকার জায়গাও যদি না থাকে তাহলে তো এই প্রাণীটি টিকতে পারবে না। সেক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। বন্যপ্রাণীর প্রতি মানুষের টলারেন্স লেবেল (ধৈর্যের স্তর) যদি বাড়ে তাহলেই নিরীহ বন্যপ্রাণীরা আমাদের প্রকৃতিতে টিকে যাবে বলে জানান ড. কামরুল হাসান।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।