ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ২ নীলগাই শাবকের জন্ম!

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ২ নীলগাই শাবকের জন্ম! বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে মা নীলগাই ও তার ২ শাবক। ছবি: বাংলানিউজ

শ্রীপুর, (গাজীপুর): এশিয়ার বুনো পরিবেশে এখনও ব্যাপকভাবে নীলগাইয়ের দেখা মিললেও আমাদের দেশে ১৯৪০ সালের পর আর নীলগাইয়ের দেখা মেলেনি। যা সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল পঞ্চগড়ে।



এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশ ভারতে নীলগাইয়ের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। আমাদের পরিবেশে বিলুপ্তের তালিকায় ছিল ওই বন্যপ্রাণী। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রতিবেশী ভারত থেকে কয়েকটি নীলগাই ভুল পথে আমাদের দেশের সীমানায় ঢুকে স্থানীয়দের হাতে আটক হয়। আর সেখান থেকে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দুটি নীলগাই উদ্ধার করে সংরক্ষণ করে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে।

অবশেষে প্রাকৃতিক পরিবেশে ওই নীলগাই দুটি শাবকের জন্ম দেয়। আর এতেই তৈরি হয়েছে আশার আলো।

গত ১ আগস্ট ওই শাবকের জন্ম হলেও পার্ক কর্তৃপক্ষ ১৭ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) শাবক জন্মের ঘটনা প্রথম প্রকাশ করেন। শাবকের নিরাপত্তার কথা ভেবে এতদিন তা চেপে রাখেন কর্তৃপক্ষ।

সাফারি পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার (বন্যপ্রাণী পরিদর্শক) সারোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা থেকে স্থানীয়দের জবাই করার প্রস্ততিকালে একটি মাদী নীলগাই উদ্ধার করে সাফারি পার্কে হস্তান্তর করেন বিজিবির সদস্যরা।
 
এর আগের বছর ২২ জানুয়ারি নওগাঁর মান্দার জোতবাজার এলাকা থেকে স্থানীয়দের জবাইয়ের প্রস্তুতিকালে স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে একটি পুরুষ নীলগাই উদ্ধার করা হয়। পরে সেটিকে রামসাগর জাতীয় উদ্যানে রাখা হয়। সেখানে পুরুষ নীলগাইটি একা হয়ে পড়লে গত বছরের ১৯ আগস্ট তাকে সাফারি পার্কের স্ত্রী নীলগাইয়ের সঙ্গে মিলিত করা হয়। পরে নিবিড় পর্যবেক্ষণ শেষে তাকে পার্কের কোর সাফারি জোনে উন্মুক্ত করা হয়। সেখানে উভয়ের মধ্যে দারুণ একটি জুটি তৈরি হয়। পরে এ জুটি থেকে প্রায় ১ বছর পর গত ১ আগস্ট দুটি শাবকের জন্ম হয়। তবে, শাবক দুটি পুরুষ না মাদী তা এখনও জানা যায়নি।
 
তিনি আরও বলেন, নীলগাই ভারতীয় উপমহাদেশে অ্যান্টিলোপ জাতীয় প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বৃহদাকার। নীলগাই দেখতে খুব সুন্দর তবে, অনেকটা বিদঘুটে চেহারার ঘোড়ার মতো। এদের দেহের পেছনের দিক কাঁধ থেকে নিচু। এদের ঘাড়ে বন্য শূকরের কেশরের মতো ঘন লোম থাকে। পুরুষ নীলগাইয়ের গাত্র বর্ণ গাঢ় ধূসর, প্রায় কালচে রঙের। আর মাদী নীলগাই ও শাবকের গাত্র লালচে বাদামি হয়। পুরুষ নীলগাইয়ে শিং হয়। তৃণভোজী প্রাণী হিসেবে ঘাস, শস্য ও কাঠ জাতীয় তৃণ খেতে এরা ভালোবাসে। পানি ছাড়া দীর্ঘক্ষণ কাটাতে সক্ষম তারা। এমনকি গরমের দিনও এরা তেমন পানি খায় না। এরা দৌড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। শক্তিশালী ঘোড়ার পিঠে না চড়ে নীলগাই ধরা প্রায় অসম্ভব। হেমন্ত থেকে শীতকালের শুরুর দিকে এদের প্রজননের সময়। পুরুষ নীলগাই সম্মতিসূচক লেজ নাড়া-চাড়ার পর মাদী নীলগাই মিলিত হয়। এদের গর্ভধারণকাল ২৪৩দিন। জন্মের সময় অর্ধেকেই জমজ শাবকের জন্ম হয়। ক্ষেত্র বিশেষ ৩টি শাবকেরও জন্ম হয়। শাবক জন্মের ৪০ মিনিটের ভেতর দাঁড়াতে পারে। পুরুষ শাবক ৩ বছর ও মাদী শাবক ২ বছরে প্রজননের উপযোগী হয়। এদের গড় আয়ু হয় ২১ বছর।  

সাফারি পার্কে নীলগাইয়ের শাবকের জন্ম হওয়ার পর শাবকের নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা ঝোপের আড়ালে দীর্ঘদিন লুকিয়ে ছিল। অনেক প্রচেষ্টা করেও তাদের দেখা যায়নি। পরে শাবকগুলো একটু বড় হলে তারা বের হয়ে আসে। মা ও তার শাবক সুস্থ রয়েছে। শাবক জন্মের পর তাদের পুষ্টির কথা বিবেচনা করে পার্ক থেকে ঘাস, গাজর, কদম পাতাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার দেওয়া হচ্ছে।  

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার দীর্ঘ প্রায় ৮০ বছর পর প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে সীমান্তবর্তী এলাকায় নীলগাই বাংলাদেশে প্রবেশ করে। স্থানীয়দের জবাই করার মুহূর্তে ছুরির নিচ থেকে এ দুটি নীলগাই উদ্ধার করা হয়। পরে এগুলো প্রজননের জন্য সাফারি পার্কে আনা হয়। তা থেকে দুটি শাবক পাওয়া যায়।
 
তিনি আরও বলেন, এ প্রাণীর মাংস খুবই সুস্বাদু, একদিক দিয়ে বন কমে যাওয়ায় অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন নীলগাইগুলো জবাই করে খেয়ে ফেলায় তা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল আমাদের প্রকৃতি থেকে। এর জন্যই ৮০ বছর আগে দেশে এর সমাপ্তি টানা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর সাফারি পার্কে জন্ম হওয়ার মাধ্যমে আবার প্রকৃতিতে ফিরবে নীলগাই। এটা সবার জন্য একটি ভালো খবর।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।