ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

দেশে হুমকির মুখে বিপন্ন ‘কালোঘাড় খরগোশ’   

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৬ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২১
দেশে হুমকির মুখে বিপন্ন ‘কালোঘাড় খরগোশ’    চা বাগানের বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী ‘কালোঘাড় খরগোশ’। ছবি: খোকন সিং

মৌলভীবাজার: একটা সময় ছিল যখন চা বাগানে প্রচুর সংখ্যক বুনো খরগোশ পাওয়া যেত। ঝোপের আড়ালে বনের নিজস্ব আবাসস্থল থেকে সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে আপনমনে বের হতো ওরা।

কিন্তু বর্তমানে ওরা চা বাগান আর বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে উধাও!
 
মাত্র কয়েকটি বছরের ব্যবধান। এর মধ্যে বুনো খরগোশদের সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এ কমে যাওয়াকে কয়েকটি বিশেষ কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন গবেষকেরা। প্রথমত শিকার, তারপর তার প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস, তার খাদ্যসংকট প্রভৃতি কারণ রয়েছে ধারবাহিকভাবে।  
 
তবে আশার কথা হচ্ছে দেশে এই প্রথম ‘কালোঘাড় খরগোশ’ ক্যামেরা-ট্রাপে উত্তর-পূর্ব বনের কোর জোন থেকে পাওয়া গেলো। সাদা-কালো ছবিটি ক্যামেরা-ট্রাপ থেকে ধারণ করা। আর রঙিন ছবিটি চা বাগানের দুর্গম এলাকা থেকে বহু কষ্ট করে তুলেছেন স্থানীয় বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী খোকন সিং।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক ও বন্যপ্রাণী গবেষক মুনতাসির আকাশ বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের দু’টি খরগোশ প্রজাতির মধ্যে একটি প্রজাতি হলো ‘কালোঘাড় খরগোশ’। এটিকে ‘কালোঘাড় শশক’ও বলা হয়। ইংরেজিতে Blacknaped Here বলা হয়। এর অস্তিত্ব দেশে মারাত্মক হুমকির মুখে। ২০১৫ সালে প্রজাতিটিকে ‘বিপন্ন’ ঘোষণা করা হয়েছে।
 
প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো চা বাগান এলাকায় রয়েছে। তবে আগের চেয়ে কম সংখ্যায়। সিলেটের চা বাগান ছাড়াও এ খরগোশগুলোকে পঞ্চগড়েও পাওয়া যায়। এছাড়াও রাজশাহীর চরগুলোতে পাওয়া রেকর্ড রয়েছে। নদীর চরগুলোতে ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকে। তবে সংখ্যায় একদমই কম। ক্যামেরা-ট্রাপে ধরা পড়লো ‘কালোঘাড় খরগোশ’।  ছবি: মুনতাসির আকাশ
 
এগুলোর কমে যাওয়ার একটাই কারণ, তাহলো অনিয়ন্ত্রিত শিকার।  চা বাগানের জনগণসহ বিভিন্ন বনের বসবাসকারী নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীরা অন্য বন্যপ্রাণীর মতো খরগোশ শিকার করে প্রাণীটিকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে জানান এ গবেষক।   
 
ক্যামেরা-ট্রাপ সম্পর্কে তিনি বলেন, এই কালোঘাড় খরগোশের ছবিটি সম্প্রতি সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গভীর বন থেকে রাতের অন্ধকারে ক্যামেরা-ট্রাপে তোলা। আমরাও বুঝলাম না বনের এত ভিতরে এসে সে কী করছে। কারণ, ওরা গভীর বনে কখনোই থাকে না। বনের আশপাশে বেশি বিচরণ করে।   
 
এ গবেষক আরো বলেন, এই প্রজাতির খরগোশগুলো বনের প্রায় ১ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে ‘ট্যারিটরি’র বিস্তার ঘটায় বা তার এলাকা সে নিজে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্য কোনো খরগোশকে সে সেখানে ঢুকতে দেয় না। এই খরগোশের কানগুলো অনেক লম্বা লম্বা। কিন্তু আমাদের দেশে আরো এক প্রজাতির খরগোশ রয়েছে যার কানগুলো ছোট ছোট। এর নাম ‘আসামি খরগোশ’। এ প্রজাতিটি অতি বিরল।  
 
খরগোশ সন্ধ্যা ও রাতে চলাচল করে। যেসব বনে দিনের বেলায় মানুষের অ্যাক্টিভিটি (চলাচল) বেশি, প্রেসার (চাপ) বেশি, হান্টিং (শিকার) বেশি সেসব বনে ওরা দিনে বের হয় না। বনের ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকে। সন্ধ্যার পর বা রাতে বনের গভীর নীরবতায় তারা জীবনযাপনের নানান প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে বলে জানান ঢাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক মুনতাসির আকাশ।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২১
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।