ঢাকা, শনিবার, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সেই মহাবিপন্ন ‘বনরুই’ গেলো সেবা ফাউন্ডেশনে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৮
সেই মহাবিপন্ন ‘বনরুই’ গেলো সেবা ফাউন্ডেশনে পৃথিবীব্যাপী মহাবিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী ‘বনরুই’। ছবি- বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন 

মৌলভীবাজার: স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারছিল না সে। তারপরও বহু চেষ্টায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য সামনের দুই পা বাড়ায়। কিন্তু অল্প কিছু দূরে গিয়েই উল্টে যেতে হয় তাকে। কারণ পেছনের দুটো পা-ই তার অবশ। উল্টে থাকা পেছনের দুই পায়ে একেবারে জোর নেই।

পৃথিবীব্যাপী বিপন্ন প্রজাতির এ প্রাণীটিকে বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ইসবপুর এলাকা থেকে সবজি ক্ষেতে জালে আটকে থাকা অবস্থায় উদ্ধার করে বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন।

হাঁটতে না পারা অবস্থাতেই এই মহাবিপন্ন প্রাণীটিকে রোববার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের অরক্ষিত রেসকিউ সেন্টারে আনা হয়।

পরে বন্যপ্রাণী গবেষক ও স্থানীয় সংবাদকর্মীদের আপত্তির মুখে পুনরায় এই বনরুইটিকে বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে ফিরিয়ে নেওয়া হলো।  

মহাবিপন্ন ‘বনরুই’ এর সংবাদ শুনে রোববারই ঢাকা থেকে ছুটে আসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আসলে পেঙ্গলিনটা (বনরুই) জালে জড়ানো অবস্থাতেই ধরা পড়েছিল। দীর্ঘক্ষণ ধরে জালে জড়ানো কিংবা আগত উৎসুক মানুষের মাধ্যমে সে হয়তো আঘাতপ্রাপ্তও হয়েছিল। ফলে এর পেছনের পা দুটো অনেকটা ‘প্যারালাইসড’। সে পেছনের পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারে না। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে না পারার ফলে তার নরমাল লাইফ লিড করতে পারছে না।

বনরুইতিনি আরো বলেন, কেউ কেউ বলেছেন যে এটা তার জন্মগত সমস্যা হতে পারে। আসলে এটি জন্মগত সমস্যা নয়। জন্ম থেকে এ পর্যন্ত সে কয়েক বছর পার করেছে। জন্মের সময় যদি এই সমস্যা হতো তাহলে তার পায়ে সেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটার কোনো কোনো চিহ্ন থাকতো এবং পায়ের নরমাল স্যাইপ থাকতো না; ডিফর্ম হয়ে যেত বা ক্ষয় হয়ে যেত। আমি পা ধরে দেখলাম ওর পা একদম নরমাল। অল্প ক’দিন আগেও সে এই পা দিয়ে হাঁটতো। ’     

এর পা সম্পর্কে অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান আরো বলেন, ওর পেছনের পা ধরলে বা চাপ দিলে সে কিন্তু ‘রিঅ্যাক্ট’ করে। এটি একটি গুড সাইন। একে যদি কিছুদিন মানুষের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে বাঁচিয়ে রাখা যায় এবং প্রতিদিন যদি একটু একটু পেছনের পা দুটো এক্সারসাইজ করানো যায় আশাকরি ওর এই নার্ভজনিত সমস্যা কেটে যাবে। এক্স-রে করে দেখা গেছে ওর পায়ে তেমন কোনো ক্ষত বা আঘাতের চিহ্ন নেই, এটি কেবল নার্ভজনিত সমস্যা।  

‘আম-কাঠাল গাছে বসবাসরত লালপিঁপড়ের বাসা সংগ্রহ করে পিঁপড়েসমেত ডিমগুলো খেতে দেওয়া যেতে পারে বলে জানান অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান।  

সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগ) এএম শামসুল মোহিত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘সিতেশ রঞ্জন দেব বলেছেন লাউয়াছড়ার রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে রাখতে। সুস্থ হওয়ার থাকলে সুস্থ হয়ে যাবে। চলে যাওয়ার থাকলে রেসকিউ সেন্টারের মাটি খুঁজে সে নিজ থেকেই সে বের হয়ে চলে যাবে। সিতেশ রঞ্জন দেবের পরামর্শ মতোই এটাকে এখানে রাখতে চেয়েছিলাম। এখন আবার বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ’ 

উল্লেখ্য, সিতেশ রঞ্জন দেব শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। তবে শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন পরিচালক সজল দেব বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কখনো চাইনি সুস্থভাবে হাঁটতে না পারা মহাবিপন্ন প্রাণীটিকে এভাবে এই নির্জন রেসকিউ সেন্টারে ফেলে রাখতে। এই অসুস্থ প্রাণীটি রেসকিউ সেন্টারে রাখার প্রস্তাবটি দিয়েছেন মৌলভীবাজার ইকোপার্কের বিট কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন।  

এসময় উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান, সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগ) এএম শামসুল মোহিত চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন পরিচালক সজল দেব, বন্যপ্রাণী গবেষক তানিয়া খান, বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ, বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ফারজানা রিক্তা প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৮
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।