ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হাকালুকিতে মাছ খেয়ে মরছে হাঁস!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
হাকালুকিতে মাছ খেয়ে মরছে হাঁস! হাকালুকি হাওরে মরে আছে হাঁস

সিলেট: পানিতে বিষক্রিয়ায় মরা মাছ খেয়ে মরছে হাঁস। সিলেটের হাওরগুলোতে সহস্রাধিক হাঁস মারা গেছে এ কয়দিনে। 

একেতো বন্যায় পানিতে তলিয়েছে ধান। হাওর পাড়ের মানুষের সারা বছরের ‘অন্ন সংস্থান’ নেই।

এবার হাঁস মারা যাওয়ায় আরেক দফা হোঁচট খেতে হলো হাওর পাড়ের মানুষকে। মরা হাঁস বহন করা খামারির জন্য কি-যে যন্ত্রণার, তাদের চেহারা দেখলেই অনুমেয়।  

সিলেটের হাকালুকি হাওরসহ বিভিন্ন হাওরে মাছ ও পোকা খেয়ে মরছে পোষা হাঁস। গত কয়দিনে সহস্রাধিক হাঁসের মারা গেছে দাবি খামারিদের।

কৃষকরা বলছেন, গত শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাতে কালবৈশাখী ঝড়ের পর বাতাসের সঙ্গে ভয়ানক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন থেকে হাওরের মাছ মরতে দেখা যায়। সেই মাছ খেয়ে মারা যাচ্ছে হাঁস।  

সরেজমিন হাকালুকি হাওরে মরা হাঁস পানিতে ভাসতে দেখা গেছে। তা কুঁড়িয়ে আনছেন খামারিরা। শুধু হাকালুকি নয়, অন্যান্য হাওরাঞ্চলেও এভাবে হাঁস মারা যাওয়ার খবর জানা গেছে। মরা হাঁস নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা 

কৃষি ক্ষেতের পাশাপাশি এনজিও থেকে উত্তোলিত ঋণের টাকায় হাঁস কিনে ডিম বিক্রি করে সংসার চালানোর আশা করেছিলেন হাওরবাসী। এনজিও থেকে তোলা সেই ঋণ এখন তাদের গলার ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে।  

হাকালুকি হাওরপাড় আশিঘর গ্রামের মাইজভাগ এলাকার বাসিন্দা কাদিম শাহ বাংলানিউজকে বলেন, খামারিরা হাওরে হাঁস ছাড়লে মাছ ও পোকা খেয়ে একের পর এক হাঁস মারা যায়।  

হাকালুকি পাড়ের বাসিন্দা কৃষক আবুল হোসেন, মলিক মিয়া ও সবু মিয়ারা বলেন, পানিতে ধান নিয়েছে। অভাবের সংসার হাঁসের ডিম বিক্রি করে চালাতেন। হাঁস মরে যাওয়ায় একটি এনজিও থেকে তোলা ঋণ কিভাবে শোধ করবেন এ নিয়ে চিন্তিত তারা।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থোড় অবস্থায় কাঁচা ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তা পচে পানিতে টক্সিন বা অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে বিষক্রিয়ায় মাছ মারা যাচ্ছে। আর এ বিষাক্ত মাছ খেয়ে একের পর এক মরছে হাঁস। হাকালুকি হাওরে মরে আছে হাঁস

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপ পরিচালক ড. মামুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, কাঁচা ধান পচে গিয়ে পানিতে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে বিষাক্ত টক্সিনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মাছ মরছে। আর মরা মাছ খেয়ে মরছে হাঁসও।  

সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, পুরোপুরি অ্যামোনিয়া গ্যাসে আক্রান্ত মরা মাছ খেলে হাঁসও মারা যাবে। তবে বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এ ব্যাপারে কৃষকদের বা হাঁসের খামারিদের সতর্কতা অবলম্বন করতে পরামর্শ তার।

সিলেট ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মাহবুব আলম বাংলানিউজকে বলেন, মাইক্রোটক্সিন বা বিষক্রিয়া এবং ভারিবর্ষণে ডার্কপ্লেগ ভাইরাস; এ দু’টি কারণের একটিতে হাঁস মারা যেতে পারে। তবে কৃষকরা হাঁস নিয়ে আসলে পোস্ট মর্টেম করে মারা যাওয়ার কারণ নিশ্চিত হতে পারতেন।  

হাঁস মারা যাওয়ার খবর সুনামগঞ্জ হাওর থেকেও এসেছে। ফলে ওই হাওরে তাদের একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছেন বলেন তিনি। হাকালুকি হাওরে মরে আছে হাঁস

তবে রোগাক্রান্ত হাঁস না খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিজম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদের প্রধান ড. নাসরিন সুলতানা লাকি বাংলানিউজকে বলেন, রোগাক্রান্ত হাঁস শিশু ও বৃদ্ধদের দেহে বেশি আক্রান্ত করে।  

তিনি বলেন, হাওরে পানির নিচে ধান পঁচে সৃষ্ট অ্যামোনিয়ার প্রভাবে মাছ মারা যাচ্ছে। এ কারণে হাঁসও মারা যেতে পারে। তবে হাঁস মারা যাওয়ার অন্য আরেকটি প্রধান কারণ ডার্ক প্লেগ। এ রোগ পশুপাখির জন্য মহামারী। কোনো একটি খামারে হলে তাৎক্ষণিক প্রাণী চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলে পুরো খামার শেষ হয়ে যাবে।  

সিকৃবির ফিশারিজ অ্যান্ড ফ্যাকাল্টি অনুষদের ডিন ড. মো. শাহাব উদ্দিন অ্যামোনিয়া গ্যাসে আক্রান্ত পচা মাছ দিয়ে শুঁটকি না করার পরামর্শ দিয়েছেন। এসব মাছে পানিবাহি ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।   

বাংলাদেশ সময়:  ১৭৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
এনইউ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।