ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

নাটোরে গাছের ডালে মেছো বাঘ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
নাটোরে গাছের ডালে মেছো বাঘ নাটোরে গাছের ডালে মেছো বাঘ-বাংলানিউজ

নাটোরে গাছের ডালে উঠেই প্রাণ রক্ষা করলো একটি মেছো বাঘ। স্থানীয় লোকজন কেউ এটাকে পান্ডা, কেউ বা বাঘ ভেবে প্রথমে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ এটাকে  মানুষের বন্ধু ও প্রকৃতির সেবাদানকারী বলায় তার শেষ রক্ষা হয়।

নাটোর: নাটোরে গাছের ডালে উঠেই প্রাণ রক্ষা করলো একটি মেছো বাঘ। স্থানীয় লোকজন কেউ এটাকে পান্ডা, কেউ বা বাঘ ভেবে প্রথমে হত্যা করতে চেয়েছিল।

কিন্তু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ এটাকে  মানুষের বন্ধু ও প্রকৃতির সেবাদানকারী বলায় তার শেষ রক্ষা হয়।

সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সদর উপজেলার পূর্ব ডাঙ্গাপাড়ায় এই ঘটনাটি ঘটে।

পূর্ব ডাঙ্গাপাড়ার মহিম উদ্দিন জানান, দুপুরে তার বাড়ির পাশের মেহগনি গাছের মাথায় প্রাণীটিকে দেখতে পান তিনি। বিষয়টি স্থানীয় লোকজনকে জানালে, তারা মারার চেষ্টা করেন। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশে খবর দেন তারা। পুলিশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের লোকজন এসে এটাকে মারতে নিষেধ করেন।

এনিয়ে পুরো গ্রাম জুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়। একপর্যায়ে প্রাণীটিকে দেখতে দূর দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসে এই গ্রামে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

এসময় পুলিশ বিষয়টি রাজশাহী বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগকে জানালে তারা বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং ওই প্রাণীটি সনাক্ত করে এটিকে হত্যা করতে নিষেধ করেন।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের কর্মীরা জানান, মেছো বাঘটি রাত হলেই নিজের বাসস্থানে ফিরে যাবে।

একই গ্রামের সোলায়মান হোসেন জানান, সন্ধ্যা পর্যন্ত এই প্রাণীটি গাছেই ছিল। পরে রাত ৮টার দিকে আর গাছে দেখা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, প্রাণীটি তার বাসস্থানে ফিরে গেছে।

রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ও জীব-জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিভাগ সূত্র জানায়, এটি মূলত মেছো বিড়াল। যা মেছো বাঘ নামেও পরিচিত। নিশাচর এই প্রাণীর ( Fishing Cat) বৈজ্ঞানিক নাম Felis viverrina।   ব্রাজিল, কোস্টারিকা, বাংলাদেশ, ভারত, বলিভিয়া, লাউস ও শ্রীলঙ্কায় এরা স্থানীয়ভাবে মেছো বাঘ বা বিড়াল নামে পরিচিত। এদের আবাসস্থল থাইল্যান্ড ও এল সালভাদোরে। বিগত কয়েক দশকে এই প্রাণীটির সংখ্যা উদ্যেগজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। জনবসতি স্থাপন, কৃষিজমিতে রূপান্তর ও অন্যান্য কারণে এদের আবাসস্থল সংকুচিত ও হ্রাস পাওয়াই এর মূল কারণ। আইইউসিএন ২০০৮ সালে এই প্রাণীটিকে বিপন্ন প্রজাতির অন্তর্ভূক্ত করে।

রাজশাহী বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ও জীব-জৈববৈচিত্র সংরক্ষণ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এরা লোকালয়ের বাইরে দিনের বেলা গাছের খোড়লে, মাটির গর্তে কিংবা ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে  লুকিয়ে থাকে। এদের শরীরের গড়ন লম্বাটে। সামান্য হলুদে মেশানো ধূসর রঙের চামড়ায় ছোপ ছোপ কালো দাগ রয়েছে।

এদের কান ছোট এবং গোলাকার। মুখমণ্ডল বাঘের মাসি বিড়ালের মতো। চোখের পেছন থেকে গলার শেষ পর্যন্ত ছয় থেকে আটটি কাল বর্ণের ডোরাকাটা দাগ থাকে। পূর্ণ বয়স্ক মেছো বিড়ালের ওজন পাঁচ কেজি থেকে ১৬ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

এরা ১৫ মাস বয়স হলে প্রজনন উপযোগী হয়। সাধারণত মার্চ মাস থেকে জুন মাস এদের প্রজননের সময়। মেয়ে মেছো বিড়াল একসঙ্গে দুই-তিনটি বাচ্চা প্রসব করে। সাধারণত প্রতিটি বাচ্চার ওজন হয় গড়ে ১৭০ গ্রাম। এরা ১০ বৎসর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। রাতের বেলা খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। এরা মাংস, শামুক, পোকা মাকড়, ইঁদুর ও মাছ জাতীয় খাদ্য খেয়ে জীবন ধারণ করে।

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. সাইফুল আলম বাংলানিউজকে জানান, এই প্রাণী মানুষের বন্ধু। পরিবেশের জন্যও উপকারি। কোনো মাঠে এর দুই-চারটি থাকলে ধান-গম, আখসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতিকারক ইঁদুর আর থাকে না।

বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।