ঢাকা, রবিবার, ২৫ কার্তিক ১৪৩১, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

যমুনার কারখানায় কালিয়াকৈরে তিন গ্রামে জলাবদ্ধতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১৩
যমুনার কারখানায় কালিয়াকৈরে তিন গ্রামে জলাবদ্ধতা

ঢাকা: ‘আগে জমিতে ধান নয়, যেন সোনা ফলত। সারা বছরের খোরাকির পর ধান বিক্রির টাকায় সংসার চালিয়েও বাড়তি আয় থাকত।

শুনেছি বাপ-দাদারাও কোনো দিন ক্ষেতে পানি জমতে দেখেনি। এখন ওইজমি ১২ মাসেই পানি ও কচুরিপানায় তলিয়ে থাকে। বর্ষা বা সামান্য বৃষ্টি হলে ঘরে হাঁটুপানি উঠে যায়। ফসল দূরে থাক জমে থাকা পানিতে লাফ দিয়ে ব্যাঙ পড়লেও মরে ভেসে উঠে। এমন অবস্থা শুধু আমার একার নয়, উজানের রাখালিয়ার চালা, মৌচাক ও শফিপুর পূর্ব পাড়া গ্রামের হাজারো মানুষের।

পানি ও কুচুরিপানায় তলিয়ে থাকা জমি দেখিয়ে কথা গুলো বললেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের আন্দারমানিক গ্রামের বয়োবৃদ্ধ কৃষক সামাদ বেপারী। এ বৃদ্ধের মতই গ্রামবাসীর অভিযোগ, এলাকার  নীচু জমি ও পানির ড্রেন ভরাট করে কারখানা নির্মাণ করায়  এ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।   ১৩-১৪ বছরেও এ দুভোর্গ থেকে এলাকার মানুষ রেহাই পায়নি। তাই যমুনা গ্রুপের ওই কারখানা তাদের কাছে শুধুই ‘অভিশাপ’।  
  pic-5
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কালিয়াকৈরের শফিপুর মৌজার আন্দারমানিক এলাকার প্রায় দেড়শতাধিক বিঘা নীচু জমি ভরাট করে যমুনা গ্রুপ গড়েছে শামীম রোটার, শামীম স্পিনিং, যমুনা স্পিনিং, যমুনা ডেনিম, পেগাসাস লেদার, মার্গোসা প্রসেসিং ও  মদ উৎপাদককারী ক্রাউন বেভারেজ কারখানা। কারখানা নির্মাণের সময় যমুনা গ্রুপ পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালটি ভরাট করে দখল করায় উজানের তিন গ্রামের বাসিন্দা পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে বসবাস করছে।

কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, স্বাধীনতার পর কালিয়াকৈরের সফিপুর, সফিপুর পূর্বপাড়া, রাখালিয়াচালা গ্রামের পানি নিষ্কাশনের জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সফিপুর পূর্বপাড়া এলাকা থেকে আন্দারমানিক পূর্বপাড়া পর্যন্ত একটি খাল খনন করা হয়। প্রায় ১৫ বছর আগে যমুনা গ্রুপ প্রথমে নীচু জমি ও পরে ওই খালটি ভরাট করে দখল করে নেয়। নীচু জমি ও খালটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হয়। এতে সেসময় ওই তিন গ্রামের দুই শতাধিক বাড়ি-ঘর, স্কুল ও ফসলি জমি তলিয়ে যায়। বিষয়টি যমুনা গ্রুপকে জানানো হলেও তারা কোন কর্ণপাত করেনি। এতে এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। পরে ওই তিন গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের পাঁচ শতাধিক লোক খালের মুখ খুলে দেওয়ার দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে দেয়। এক পর্যায়ে গ্রামবাসী খালের মুখে দেওয়া বাঁধ কেটে ফেলার চেষ্টা করলে যমুনার নিরাপত্তা কর্মী ও শ্রমিকরা গ্রামবাসীর উপর হামলা চালায়। এতে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে পুলিশ দিয়ে গ্রামবাসীকে ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় যমুনার মালিক নুরুল ইসলাম বাবুল গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তার এড়াতে আন্দোলনকারী গ্রামবাসী পালিয়ে যায়। এলাকাবাসীর দাবির মুখে ওই সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রহমত আলী খালের বাঁধ খুলে দেন। ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও ওই খালের মুখ এখনো খুলে দেওয়া হয়নি। পানি প্রবাহের খালটি বন্ধ করে দেওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রামের বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে দুভোর্গ পোহাচ্ছেন।
  pic-42
সফিপুর পুর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যমুনা গ্রুপের সৃষ্ট জলবদ্ধতার কারণে আমার ৪ বিঘা জমি সারা বছরই পানির নিচে পড়ে থাকে। এ কারণে ১৫ বছর ধরে চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না।   খালটি বন্ধ করে দেয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়ি-ঘর তলিয়ে যায়। জমে থাকা পানি কচুরিপানায় ঢেকে গেছে। গ্রামবাসী মিলে প্রতিবাদ করায় আমাদের উপর হামলা ও মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। বাবুল খুবই ভয়ংকর লোক। এমপি মন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকজনকেও সে অসম্মান করে। তাই বাবুলের ভয়ে কেউ কিছু বলার বা করার সাহস পায় না।

তিনি জনান, পানি পচে সব সময় উৎকট গন্ধ বের হয়। অসুখ বিশুখ লেগেই থাকে। এ ঘটনার পর থেকে যমুনার কারখানা আমাদের কাছে ‘অভিশপ্ত’।

সফিপুর এলাকার বাসিন্দা গাজী মকবুল হোসেন জানান, আকাশে মেঘ দেখলেই তাদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। সামান্য বৃষ্টি হলেই বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি তলিয়ে যায়। বছরের পর বছর স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে জমিতে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে গেছে। খাল ভরাটের প্রতিবাদে আন্দোলন করেও গ্রামবাসী ফল পায়নি।

‘যমুনার মালিক বাবুল সাব ক্ষমতার জোর দেখিয়ে খালের মুখ বন্ধ করে দিয়ে আমাগো সুখ-শান্তি কাইরা নিছেন। প্রতিবাদ করতে গিয়া শতাধিক মানুষের নামে মামলা দিয়েছিল বাবুল সাব। আমিও সে মামলার আসামি ছিলাম। তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো নেই’। পানি চলাচলের সেই খাল পুনরায় খনন করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
pic-320
রাখালিয়া চালা এলাকার আতিকুর রহমান চোখের পানি ফেলে বলেন, ‘যমুনার মালিক আমার সবকিছু কাইরা নিছে। বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে দিয়ে আমাকে উচ্ছেদ করেছে। এখন আমি নি:শ্ব। ’

তিনি বলেন, ‘কানার টেকে আমার বাড়ি ছিল। পরিবার-পরিজন নিয়ে আমি সুখে শান্তিতে বসবাস করতে ছিলাম। কিন্ত যমুনার মালিক ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে দিয়ে জমি দখল করে নিয়েছে।   ওই জমিতে এখন মদ তৈরির হান্টার কারখানা করছে বাবুল মিয়া। ’  

মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব মিয়া বলেন, যমুনা গ্রুপ সফিপুর পূর্বপাড়া এলাকা দিয়ে চলে যাওয়া খালটির মুখ বন্ধ করে দিলে আশপাশের দুই তিনটি গ্রামের বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে যায়। এ নিয়ে গ্রামবাসী মহাসড়ক অবরোধ করে দেয়। পরে বিষয়টি মীমাংসার জন্য ওই খালের পাশ দিয়ে সরু একটি ড্রেনের মত করে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে ওই ড্রেনটি আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে ওই খালটি বন্ধ করা ঠিক হয়নি।     

মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বিরেন্দ্রনাথ বর্মন জানান, এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে গণদাবির প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সেসময় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে বিকল্প নালা করে পাসিসন সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু এ নালা দিয়ে পর্যপ্ত পানি যেতে না পারায় এখনো সমস্যা রয়েই গেছে।

যমুনার বর্জ্য দূষণে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী
সফিপুরের আন্দারমানিক গ্রামে একই সীমানা প্রাচীরের ভেতর যমুনা গ্রুপের শামীম রোটার, শামীম স্পিনিং, যমুনা স্পিনিং, যমুনা ডেনিম, পেগাসাস লেদার, মার্গোসা প্রসেসিং ও মদ উৎপাদক ক্রাউন বেভারেজ নামে কারখানা রয়েছে ৭টি। এসব কারখানার তরল বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই সরাসরি পাশের কৃষি জমিতে ফেলে পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি করা হচ্ছে। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যুক্ত এসব বর্জ্যের প্রভাবে জমির ফসল বিল ও জলাশয় এবং নদীর পানি নষ্ট হচ্ছে, মাটি উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে। দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। নানা রোগ ব্যাধিতে ভুগছে মানুষ।
pic-22013
এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, যমুনা গ্রুপের ৭টিসহ পাশের সাহাবুদ্দিন ও সামসুদ্দিন টেক্সটাইল এবং লিবাস ও হ্যামকো গার্মেন্টের বর্জ্য পানি আন্দারমানিক গ্রামের পূর্ব পাড়া দিয়ে বের হয়ে পশ্চিমের খোলা কৃষি জমির উপর দিয়ে সফিপুরের আনসার ও ভিডিপি একাডেমির খালে পড়ে। পরে খাল দিয়ে পানি মকষ বিল ও তুরাগ নদে মিশে অহরহ পানি দূষিত করছে।

আন্দারমানিক পূর্বপাড়ার বটতলার চা বিক্রেতা রইস উদ্দিন জানান, দুই টেক্সটাইল ও দুই গার্মেন্ট দিয়ে যে পরিমাণ বর্জ্য দৈনিক বের হয়, একই তার দশ গুণ বের হয় যমুনা গ্রুপের ৭ কারখানা দিয়ে। কালো পানির গন্ধে মানুষ ঠিকমত চাও খেতে পারে না। ঝাঁঝালো গন্ধে বমি হওয়ার উপক্রম হয়। তিনি জানান, এসব প্রতিষ্ঠানের পর্জ্য পানির কারণে শত শত বিঘা জমিতে ১৪-১৫ বছর ধরে ফসল হয় না।

হ্যামকো কারখানার শ্রমিক অঞ্জনা বেগম (৩০) ও  একে সোয়েটার কারখানার শ্রমিক মিলন মিয়া (৩৫) বলেন, বর্জ্য পানির ড্রেনের পাশেই ঘর। সবসময় দুর্গন্ধ আসে। তাই সারাক্ষণ ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হয়।

তিনি জানান, বৃষ্টি হলে এলাকা তলিয়ে যায়। তখন দূষিত পানি ঘরে উঠে যায়। কারখানায় ডিউটিতে যেতে অসুবিধা হয়। ওই পানি গায়ে লাগলে চুলকায়, শরীরে ঘা হয়। ঘরের টিন দেখিয়ে তারা বলেন, বর্জ্যপানির দূষণে ঘরের টিন দুই বছরেই ঝরঝরে ফুটো হয়ে গেছে।

এলাকার বাসিন্দা সুলতান হোসেন (৬০) বলেন, বর্জ্যপানি যেতে যেতে কৃষি জমিতে নালার সৃষ্টি হয়েছে। পাইপ দিয়ে নালা ঢেকে দিলে এত দুর্গন্ধ ছড়াত না। পানি কৃষিজমিতেও পড়ত না। বাবুল মিয়া ক্ষমতাশালী। মন্ত্রী-এমপি তারে ভয় পায়। আমরা তো সাধারণ মানুষ। হয়রানির ভয়ে ড্রেনের বিষয়ে কেউ কিছু বলে না। প্রশাসনও সাধারণ মানুষের কথা শোনেনা। নইলে এত বছর ধরে কারখানাগুলো এভাবে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ ও ফসল নষ্ট করছে, কত জায়গায় কত অভিযানের কখা শুনি। অথচ এখানে কেউ আসে না।

জানা গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি শিল্প এলাকার কাশিমপুর সড়কের পাশে প্রায় ১৫ একর জমিতে নির্মিত যমুনা কমপ্লেক্সের ভেতরে রয়েছে যমুনা গ্রুপের আরো তিন প্রতিষ্ঠান। যমুনা নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, যমুনা ডেনিম অ্যান্ড ফেব্রিক্স, যমুনা ডেনিম গার্মেন্ট নামের কারখানার বিরুদ্ধে রয়েছে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের অভিযোগ। ইটিপি ব্যবহার না করে রাসায়নিক তরল বর্জ্য ফেলে তুরাগ নদ দূষণের অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর গত বছরের এপ্রিল মাসে যমুনার ওই তিন কারখানাকে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি জরিমানা করে। তারপরও প্রতিষ্ঠানটি দুষণ বন্ধ করেনি।
pic-1201311011
কারখানা সংলগ্ন হরিণহাটি এলাকার বাসিন্দা কারখানা শ্রমিক জাবায়ের হোসেন ও মুদি দোকানি খলিলুর রহমান জানান, যমুনার পানি গড়িয়ে হরিনহাটি-জেলাখানা সড়কে পড়ায় সড়কটি ১২ মাসই জলমগ্ন থাকে। যানবাহন দূরে থাক, সড়ক দিয়ে হেঁটেও যাতায়ত করা যায় না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুরের উপ পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যমুনা গ্রুপ কোবাড়িতে ২০০৬ সালে তিনটি কারখানা স্থাপন করলেও ৪ বছর পর ২০১০ সালে পরিবেশগত ছাড়পত্র লাভ করে। গত বছরের জুন মাসে ছাড়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তারা নবায়নের আবেদন করেনি। কাগজে কলমে তিন প্রতিষ্ঠানই একটি ইটিপি দিয়ে কারখানার তরল বর্জ্য পরিশোধন করে। গত বছরের ২৫ এপ্রিল পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালকের (এনফোর্সমেন্ট) নির্দেশে একটি দল আকস্মিক ওই কারখানায় অভিযান চালায়। এসময় তারা দেখতে পায়, কারখানা কর্তৃপক্ষ ইটিপি থেকে মাটির নীচ দিয়ে বাইপাস লাইন বসিয়ে পরিশোধন ছাড়াই রাসায়নিক মেমিক্যাল যুক্ত তরল বর্জ্য বাইরে ফেলা হচ্ছে। মারাত্মক ক্ষতিকর এসব তরল বর্জ্য কারখানার ভেতরই দেওয়াল দিয়ে ঘেরা একটি জায়গায় জড়ো করে রাখা হচ্ছে। দেয়ালের গেটে তালা দিয়ে রাখায় বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই ওইস্থানে বর্জ্য রাখা আছে। জমাকৃত স্থান থেকে বর্জ্য ড্রেনের মাধ্যমে জরুন খাল হয়ে তুরাগ নদে ফেলে পানি দূষিত করা হচ্ছে।

এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যরা যমুনা ডেনিমস থেকে কেমিকেল মিশ্রিত দেড় লক্ষাধিক ঘণমিটার তরল বর্জ্য স্থানীয় জমি হয়ে তুরাগ নদে পড়ার  প্রমাণ পায়। ঘটনাস্থলে কারখানার কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তরল বর্জ্যের নমুনা বিশ্লেষণ করে দ্রবীভূত অক্সিজেন পাওয়া যায় শূন্য দশমিক ৬৭ মিলিগ্রাম/লিটার, যা পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য ধবংসাত্মক। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী, তরল বর্জ্যে দ্রবীভূত অক্সিজেনের আদর্শমাত্রা ৪ দশমিক ৫ থেকে ৮ মিলিগ্রাম/লিটার। পরে ইটিপি বন্ধ রেখে বাইপাস রাইনের মাধ্যমে সরাসরি তরল বর্জ্য ফেলার মতো বেআইনি কাজের জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষকে পরিবেশ অধিদপ্তরে তলব করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরে হাজির হলে তুরাগ নদ দূষণের দায়ে অপরাধে যমুনা নিটিং অ্যান্ড ডাইং কারখানাকে তৎকালীন অধিদফতরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী ৫২ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

সদ্য বিদায়ী পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুরের উপ-পরিচালক নূর আলম জানান, জরিমানার টাকা পরিশোধ না করে যমুনা নিটিং অ্যান্ড ডাইং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আপিল করে। আপিলে সচিব জরিমানা কমিয়ে ২৫ লাখ করেন। ওই টাকাও তারা পরিশোধ করেনি। যেহেতু তারা জরিমানার টাকা পরিশোধ করেনি, তাই কারখানাটির পরিবেশ ছাড়পত্রের মেয়াদও নবায়ন করা হয়নি।

তিনি জানান, বর্তমানে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই কারখানাটি বেআইনিভাবে উৎপাদন পরিচালনা করছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৩
জেডএম/আরকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।