ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

গাজীপুরে বনের গাছ কেটে অবৈধ ব্যবসা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৩
গাজীপুরে বনের গাছ কেটে অবৈধ ব্যবসা

গাজীপুর: দেশের ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল গড়ের ঢাকা বন বিভাগের গাজীপুর অঞ্চলে গাছ কেটে ও বনের জমিতে অবৈধ ঘর নির্মাণ করে অবাধে চলছে ঈদ উৎসব। বন সাবাড়ের সুযোগ দিতে বনকর্তারা অফিস বন্ধ রেখে করছেন ঈদ বাজার।

ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ঈদের কেনা-কাটায়।

সরেজমিনে গাজীপুর জেলার সদর উপজেলা, ভাওয়াল গড়, কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর এলাকাঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে বড় বড় গজারি গাছ পড়ে আছে।

এ ছাড়ও রাস্তার দুধারে পড়ে আছে অবৈধ গাছের স্তুপ। বনখেকোরা ঈদকে সামনে রেখে বনকর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে বনের জায়গা জবরদখল করে বাসা-বাড়ি নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

কালিয়াকৈর-ফুলবাড়িয়া-মাওনা সড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার কে এন বি বাজারে (বেতার কেন্দ্র বাজার নামে পরিচিত) দুটি স-মিল আছে। এর মধ্যে হাজী স-মিল নামে একটি মিলে দেখা গেল অসংখ্য অবৈধ গাজারি গাছ।

স-মিল কর্মচারী হাবিবুর রহমান জানান, গজারি গাছের তক্তা ও অন্যান্য জিনিসপত্রের অর্ডার নেওয়া হয়। প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট মালামাল সংরক্ষিত আছে এখানে।

জানা গেল, কে এন বি বাজার এলাকাটি স্থানীয় জাথালিয়া বন বিট ও কাঁচিঘাটা রেঞ্জ অফিসের অধীন।

এ বিষয়ে জানতে ওই দুই অফিসে গিয়ে দেখা গেল প্রধান কর্তা-ব্যক্তিদের কক্ষে তালা। কাঁচিঘাটা রেঞ্জ অফিসের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনের মোবাইলে ফোন করলে তিনি জানান, আমি ঢাকায় আছি। গাছ কাটার বিষয়ে কিছু জানি না।

এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় বনকর্মকর্তা অবনিভূষণ ঠাকুরের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। গাছ কাটা হতে পারে। তবে যত খুশি তত গাছ কাটা যায়, এটি সত্য নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেতার কেন্দ্র, পাবুরিয়ার চালা, শিকদার ঘাট, মনসুরাবাদসহ বেশ কিছু জায়গায় প্রতিনিয়ত অবৈধ গজারি গাছের স্তুপ পড়ে থাকে।

এরপর রাতের বেলায় ট্রলার যোগে জলপথে ও ট্রাক যোগে সড়কপথে পাচার করা হয় এসব গজারি গাছ। অবৈধ গজারি কাঠ ভর্তি ট্রাক বা ট্রলার রওনা হওয়ার আগে রাস্তায় বন অফিস ও পুলিশকে আগাম ম্যানেজ করা হয়।

এদিকে কালিয়াকৈর থানার সোনাতলা বিটে গিয়ে দেখা যায়, শত শত বাড়ি ঘর বনের জায়গায় অবৈধভাবে নির্মাণ করে হাজার হাজার লোক স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তারা বলছেন, আমরা অনেকদিন ধরেই এখানে আছি। দেখি কিভাবে টিকে থাকা যায়।

এ ছাড়া মৌচাক-ফুলবাড়িয়া রুটের দুধারে বনের জায়গায় গড়ে উঠেছে হাজার হাজার স্থায়ী স্থাপনা। সেনাতলা বিটের বিট অফিসার আবদুল মোমেন জানান, জমি দখলের কোনো সংবাদ আমার কাছে নেই।

কালিয়াকৈর রেঞ্জ অফিসের রেঞ্জ অফিসার কাজী নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বন উজাড় করার চেষ্টা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একই ধরনের দায়সারা বক্তব্য দিয়েছেন, চন্দ্রা ও মৌচাক বিটের বিট কর্মকর্তারা।

মৌচাক এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, বনের জায়গায় গড়ে উঠছে হাজার হাজার বাসা-বাড়ি। মৌচাক গোরস্তান এলাকায় বনের জায়গার বাসিন্দা নাছিমা বেগম জানালেন, বাসাবাড়ি করে আছি। কয়েক রুম ভাড়া দিয়েছি। জমিগুলো সরকারি। বনের লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই আছি।

স্থানীয়রা জানালেন, বনের জায়গায় একটি ২/৩ কাঠার প্লট নিয়ে বাসা-বাড়ি করলে বন অফিসকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। এরপর বাড়ি করার খরচ। সরেজমিনে বনের জায়গায় একাধিক প্লটে মাটি-বালি ভরাট করে বাসা নির্মাণের প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, করাতকল আইনে বনাঞ্চল এলাকায় পৌরসভার বাইরে কোনো করাতকল (স-মিল) স্থাপন নিষিদ্ধ। অথচ ওই আইনের তোয়াক্কা না করে বনকর্তাদের নাকের ডগায় গড়ে উঠেছে শত শত করাত কল (স-মিল)।

গোপন সূত্র জানায়, বে-আইনিভাবে গড়ে ওঠা ওইসব করাতকল বন অফিসকে মাসোহারা দিয়ে দেদারছে ব্যবসা করে যাচ্ছে। ধ্বংস করছে ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল গড়।

এ রকম ভাওয়াল গড় উজাড়ের উৎসব অব্যাহত থাকলে আগামি কবছরের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বাংলাদেশের মনোলোভা প্রকৃতির সম্পদ ও ঐতিহ্য ভাওয়াল গড়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৩
আরএ/সম্পাদনা: মাহমুদুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর/ সাব্বিন হাসান

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।