ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

শহরেও বিকল্প জ্বালানির উৎস হতে পারে সৌরশক্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৩
শহরেও বিকল্প জ্বালানির উৎস হতে পারে সৌরশক্তি

ঢাকা: পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বিশ্বকে দিতে পারে নতুন প্রাণ। বিভিন্ন জ্বালানি ব্যবস্থাপনার মধ্যে সোলার এনার্জি বা সৌরশক্তি হতে পারে বিকল্প একটি উৎস।

গ্রামাঞ্চলে সৌরশক্তি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও কিছু পদ্ধতিগত পরিবর্তন না আনায় শহরাঞ্চলের মানুষ এখনো এর যথাযথ সুবিধা নিতে পারছেন না।

পুরো বিশ্বেই বর্তমানে জ্বালানি শক্তির ঘাটতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। একইসঙ্গে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করার কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েছে আগের থেকে অবিশ্বাস্য হারে। যা প্রধানত  জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। উন্নত বিশ্বে এখন বেড়েছে ক্রয় ক্ষমতাও। পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশেও তাই ঘটছে। আর সেকারণে শহরাঞ্চলে দেখা যাচ্ছে বিদ্যুতের ঘাটতি, ঘন ঘন লোডশেডিং।

অতিরিক্ত এ জ্বালানি সরবরাহ করতে কোনো বিশেষ বিকল্প উৎস নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে পারে সেই বিকল্প উৎস। কিন্তু মূল গ্রিডে কোনোভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি অবদান রাখতে পারছে না বলে সৌরশক্তির ব্যবহার গ্রামাঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ালেও শহরাঞ্চলে কম জনপ্রিয়।

শহরাঞ্চল জাতীয় গ্রিডের আওতাধীন থাকায় বিকল্প উৎসের প্রতি কারও তেমন একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। একজন ব্যবহারকারী ব্যাটারির উপর নির্ভরশীল সৌর প্যানেলের বিদ্যুৎ শুধুমাত্র লোডশেডিংয়ের সময়ে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু সেই ঘাটতি আইপিএস দিয়েই মেটানো যায়। তবে আইপিএসের থেকেও বেশি খরচে কেন সোলার প্যানেল কিনবে মানুষ? অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা তো এখানে মিটছে না।

৫ কিলোওয়াটের একটি প্যানেলকে যদি ব্যাটারি দিয়ে না চালিয়ে ‘গ্রিড টাইম সিস্টেম’এর মাধ্যমে চালানো যায়, তবে তা থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়ে মূল খাতে যুক্ত হতে পারে। কিন্তু এ ব্যবস্থাটি উন্নত বিশ্বে চালু থাকলেও আমাদের দেশে এ ব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে কোনো ধরনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা সূর্যের আলো পাওয়া যায়। ৫ কিলোওয়াট ক্ষমতার একটি প্যানেলের মাধ্যমে এই সৌরশক্তি থেকে দিনে উৎপাদিত হয় প্রায় ৪০ একক বিদ্যুৎ, যার বাজারদর প্রতি এককে প্রায় ১০ টাকা। এতে করে একজন প্রতিদিন প্রায় ৪শ’ টাকা সাশ্রয় করতে পারেন, যদি এই বিদ্যুৎ মূল খাতে যোগ হয়ে যেত।

কিন্তু তা করা যাচ্ছে না শুধু পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে। আর তাই এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমাদের দেশের সৌর প্যানেল ব্যবহারকারীরা।

 এসব তথ্য বাংলানিউজকে জানান বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সাব্বির চৌধুরী।

তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণারত। বাংলাদেশের সৌরবিদ্যুৎ ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণার সময় এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নেট মিটারিং ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রতিটি বাড়িতে প্যানেলটিকে যদি একটি মিটারের সঙ্গে সংযোগ দেওয়া হয়, তবে কতটুকু বিদ্যুৎ মূল খাতে যাচ্ছে তার হিসাব করা সম্ভব হবে। তবে বছর শেষে একটি ৫ কিলোওয়াটের প্যানেল ব্যবহারে সাশ্রয় দাঁড়ায় একলাখ টাকা। আর এভাবেই দু’থেকে তিন বছরের মধ্যে প্যানেলের খরচ উঠিয়ে আনতে পারবেন একজন ব্যবহারকারী।

একটি সোলার প্যানেলের গড় ব্যবহার যোগ্যতা ২৫-৩০ বছর। যা জাতীয় বিদ্যুৎ খাতে অনেক বড় সময়ের জন্য অবদান রাখতে সক্ষম। উন্নত বিশ্বে যে বাড়িতে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়, সে বাড়ির মিটারের কাঁটা বিপরীত দিকে ঘুরতে থাকে। আর মাস শেষে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ মূল সংযোগের সঙ্গে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে নেওয়া হয় অথবা পরবর্তী মাসের বিল কমিয়ে রাখা হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘অন গ্রিড সিস্টেম’।

তিনি আরও জানান, আমাদের দেশে এখন যে পদ্ধতির সৌর প্যানেল ব্যবহৃত হচ্ছে, তা ‘অফ গ্রিড’। এ ধরনের সৌর প্যানেল ব্যবহারে আগ্রহী নয় শহরাঞ্চলের মানুষ। একে জনপ্রিয় করতে হলে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনাটা জরুরি। এজন্য কাজ করতে হবে জাতীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে। সরকারের সদিচ্ছাই পারে বিদ্যুৎ খাতের ঘাটতি কমিয়ে আনতে। একইসঙ্গে পরিবেশ বান্ধব ব্যবস্থা বলে এটি কার্বন নির্গমনের হারও কমিয়ে আনতে অবদান রাখতে পারবে বলে জানান সাব্বির।

সরকারসহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার বর্তমান উদ্যোগ সৌরশক্তি ব্যবস্থাকে অনেক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সত্যিই, কিন্তু তা ব্যাপকহারে শহরাঞ্চলে প্রসার ঘটাতে পারছে না। এর পেছনের মূল কারণ শহরাঞ্চলের ক্রেতারা সৌর প্যানেল কেনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কিস্তি সুবিধা পাচ্ছেন না। কিন্তু ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ইডকল) গ্রামাঞ্চলে এই সুবিধাটা দিচ্ছে। আর তাই গত বছরের তুলনায় এবছর জুন মাসে ৪৭টি সংস্থার উদ্যোগে প্রায় ২৫ হাজার বেশি সোলার প্যানেল বিক্রি হয়েছে বলে জানালেন রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন’র নির্বাহী পরিচালক রুহুল কুদ্দুস।

তিনি জানান, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় এই জনপ্রিয়তা এত বাড়ছে। কিন্তু শহরাঞ্চলের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ২০০৯ সালে করা নতুন বিল্ডিং নীতিমালা অনুযায়ী, ১০ তলার চেয়ে বেশি উঁচু বিল্ডিংয়ের জন্য ছাদে সোলার প্যানেল বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই শহরাঞ্চলে কিছু ব্যবহার লক্ষ্য করা গেলেও স্বেচ্ছায় ব্যবহার করছে না বিশেষ কেউ। পরিবেশ বান্ধব এই জ্বালানি উৎসকে জনপ্রিয় করতে অবশ্য এ বছর বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে আরও কিছু উদ্যোগ।

বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ইডকলের উদ্যোগে গ্রামাঞ্চলে প্রায় দেড় হাজার ডিজেলচালিত পাম্প সরিয়ে সোলার পাম্প বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ এদেশে নিঃসন্দেহে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার আরও বাড়িয়ে দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৩
সম্পাদনা: এম জে ফেরদৌস ও আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।