ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বক বসতি আর পানকৌড়ির পুকুর!

আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৩
বক বসতি আর পানকৌড়ির পুকুর!

চাপাইর, কালিয়াকৈর থেকে ফিরে: পুকুরের স্বচ্ছজলে হঠাৎ একটি কালো পাখির ডুব দেখে থমকে দাঁড়াতে হলো। ডুব দিয়েই ভুঁস করে উঠলো সে।

মুখে তার একটি সোনালি পুঁটি। চকচকে রোদে মুখ থেকে ছুঁড়ে দিলো উপর পানে। তার পর লাফিয়ে গপ্ করে ধরে খেয়ে ফেললো সে।

এর পর পুকুরের একপাশে পুঁতে রাখা বাঁশের ওপর গিয়ে বসলো। পুকুরের উঁচু-নিচু পাড় ধরে আমরাও তার পিছু নিলাম। গিয়ে দেখলাম অন্য এক চিত্র! সে একা নয়। রয়েছে তার শত সঙ্গী।

দূর থেকে আমি ও স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট নূর যেগুলোকে হাঁস বলে ভেবেছিলাম, সেগুলো আসলে জল ও স্থলে হঠাৎ দেখা মিষ্টি পাখি পানকৌড়ি।

ঢাকা থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে রাস্তার পাশে বিশাল বিশাল পুকুর ও তার চারপাশ ঘিরে গাছগুলোতে তাদের বসতি। বলা যায় নিরাপদ বসতি।

তাদের আবার ভারি সখ্যতা ঘাড় লম্বা সাদা বকগুলোর সঙ্গে। উভয়ের লক্ষ্য একটাই, মাছ ধরা। কিন্তু তাতে কী! এখানে যেন কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। মিলে-ঝিলেই থাকে তারা।

আমাদের দেখে তাদের আনন্দ যেন কেটু বেশিই বেড়ে গেল। পানকৌড়িগুলো সব নেমে গেল পানিতে। উল্টে-পাল্টে, সাঁতরে, মাছ শিকার করে আমাদের যেন দেখাতে চাইলো, দেখো! আমরা কত ভালো আছি! আমাদের এভাবেই থাকতে দাও।

বকও যেন আচরণে সেটাই প্রকাশ করলো। কাছে যেতেই সব উড়ে গিয়ে বসলো দূরের একটি গাছে। জানান দিলো- তোমরা আমাদের মারো, আমরা জানি। আমাদের পাশে এসো না। তাহলে আমরা ভয় পাবো। তোমরা না এলেই আমরা ভালো থাকবো!

আশপাশের মানুষ এ পুকুরকে বলেন- ‘পানকৌড়ি পুকুর’। তবে বকও কম যায় না। পুকুরের চারপাশের গাছের পাতার সাদা রং বলে দেয় তাদের বসতিও এখানে পাকাপোক্ত।

আরেকটি দূরে এগিয়ে গেলাম। সেখানে আরও তিন/চারটি পুকুর। সবগুলোই বড় বড়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবগুলোর মালিক একজনই।

একটি গাছের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, পুরোগাছ কালো। অবাক হলাম। আবার ভাবলাম হয়ত কাকের বসতি। কিন্তু, আরও কাছে গিয়ে দেখলাম, গাছটি আসলে পানকৌড়িতে ভরা। এ অপরূপ দৃশ্য দেখার মতো! সচরাচর পানকৌড়িদের এভাবে থাকতে দেখা যায় না।

দেখা গেল, পাশের গাছটিতে বকগুলো বসে বিশ্রাম করছে। বেশ ভালো আছে তারা।

কথা হলো, আশপাশের মানুষদের সঙ্গে। তারা প্রত্যেকেই বললেন বক ও পানকৌড়িদের কেউ বিরক্ত করে না। মালিক অনেক বড়লোক। কিছু মাছ খেলেও কিছু বলে না।

নিরাপদ আশ্রয় না পেলে হাওর-বাওর ছাড়া পুকুরে এ ভাবে পানকৌড়ি আর বক দেখতে পাওয়া সত্যি বিরল ঘটনা। দেশের সব মানুষ যদি এভাবে পাখিদের জন্য অভয়াশ্রম তৈরি করে দিতো!

কালো কুচকুচে রঙের ছোট পানকৌড়ি। সারাদিন পানির ধারে মাছ শিকারের সন্ধানে থাকে এরা। পুকুর, ঝিল ও জলাভূমিতে ছোট-বড় দল বেঁধে থাকে। তা ছাড়া সাগর পাড়ে কিংবা হ্রদেও পানকৌড়ির দেখা মেলে।

এরা পানির তলায় ডুব দিয়ে মাছ শিকার করে। কখনও কখনও দল বেঁধে পানিতে মাছ শিকারে মেতে ওঠে। এই জাতের পাখি মাছকে তাড়া করে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে আর বার বার ডুব দিয়ে মাছ শিকার করে। এভাবে ছুটে ছুটে প্রচুর মাছ ধরে এরা। একটা মাছ আড়াআড়ি করে ধরেই পানির উপর ভেসে উঠে মাছটাকে উপরে ছুঁড়ে ফেলে নিচে পড়ার সময় টপ করে গিলে ফেলে।

এভাবে একটা মাছ গিলে ফেলার পর আরেকটি শিকার ধরার জন্য ছুটে বেড়ায় পানকৌড়ি। পানির ধারেই বড় কোনো গাছে কাঠিকুটি দিয়ে অগভীর পাটাতনের মতো বাসা তৈরি করে ওরা। ওই বাসাতেই ওরা ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা চার থেকে পাঁচটা ও ডিমের রং নীলচে সবুজ হয়। তিন ধরনের পানকৌড়ি রয়েছে।

বক, পানকৌড়ি প্রকৃতির আশ্চর্য বিস্ময়। এরা প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে পরিবেশের ভারাসাম্য রক্ষা করে। সে কারণে পাখি ও প্রকৃতি সংরক্ষণে সবার এ এলাকার মানুষের মতো পাখিবান্ধব হওয়া দরকার। তাহলেই দেশ এক অফুরন্ত সম্পদশালী দেশে পরিণত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৩
সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।