ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বনায়নের গাছ রক্ষার অজুহাতে শতাধিক কৃষকের সবজি গাছ কাটার অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৩
বনায়নের গাছ রক্ষার অজুহাতে শতাধিক কৃষকের সবজি গাছ কাটার অভিযোগ

বাগেরহাট: বাগেরহাট সদর উপজেলার কোমরপুর এলাকায় ভৈরব নদীর পাড়ের সামাজিক বনায়নের গাছ রক্ষার অজুহাতে শতাধিক কৃষকের বিভিন্ন ধরনের সবজি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে।  

রোববার (২৭ আগস্ট) বিকেলে জেএমকে সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিক ও সদস্য আলতাফ শেখের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন রামদা ও ছুরি নিয়ে এসব গাছ কাটেন।

এতে ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, ভৈরব নদীর পশ্চিম পাশে কোমরপুর এলাকায় নিজ মালিকানা ও সরকারি জমি লিজ নিয়ে মৎস্য ঘের করতেন কাটাখালী গ্রামের শতাধিক কৃষক। কয়েক বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভৈরব নদী খনন করে। খননের পর থেকে মৎস্য ঘের সংলগ্ন নদীর তীরে কৃষকরা নানা রকম সবজির আবাদ করে আসছিলেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক বনবিভাগ এ নদীর পাড়ে ২০ হাজার ফলদ ও বনজ গাছ রোপণ করে। বনায়নের পরও সামাজিক বনবিভাগের অনুমতিতে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকরা ঢেঁড়স, লাউ, করলা, ডাঁটা, বরবটি, লাফা, শিম, ধুন্দলসহ নানা ধরনের সবজি চাষ করেন। কিন্তু জেএমকে সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিক ও সদস্যরা কৃষকদের গাছ লাগাতে নিষেধ করতেন। তাদের নিষেধ না মানায় সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিকের নেতৃত্বে কৃষকদের সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অশোক কুমার ভৌমিকের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন কৃষকরা।

কৃষক শেখ এনায়েত বলেন, বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে নিজেদের মৎস্য ঘের সংলগ্ন ভৈরব নদীর তীরে নানা ধরনের সবজি লাগিয়েছিলাম। কিন্তু গাছ রক্ষার অজুহাতে জেএমকে সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিক ও তার লোকজন আমাদের গাছগুলো কেটে ফেলেছে। আমার ঘেরের চকিঘরও (বাসা) ভেঙে ফেলেছে তারা। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই।
জামিলা বেগম নামে এক নারী কৃষক বলেন, সবজি লাগিয়ে আমরা কিছু আয় করতাম। কিন্তু অশোক কুমার ভৌমিকের তা সহ্য হয়নি। এ কারণেই তারা আমাদের সবজি গাছ কেটে ফেলেছে।

কৃষক মো. কাওছার আলী মোড়ল বলেন, বেশিরভাগ গাছে ফুল এসেছিল, ফলও হয়েছিল কিছু গাছে। কেটে আমাদের শেষ করে দিয়েছে। কৃষকদের ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

শেখ নজরুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, ফলন্ত গাছ কাটায় যে কষ্ট পেয়েছি, আমার গলা কেটে ফেললেও এতো কষ্ট পেতাম না।

সঞ্জয় নন্দি নামে আরেক কৃষক বলেন, বনবিভাগ লাগিয়েছে ফলদ ও বনজ গাছ। আমাদের সবজি গাছ তাদের গাছের কোনো ক্ষতি করেনি। তাহলে আমাদের গাছ কাটল কেন? তাছাড়া বনবিভাগ তো আমাদের সবজি চাষ করতে নিষেধ করেনি।

ভৈরব নদীর তীরে লাগানো গাছগুলো পাহারা দেওয়ার জন্য সামাজিক বনবিভাগের পক্ষ থেকে রুহুল আমিন ও সোবহান শেখ নামে দুজনকে রাখা হয়েছে। গাছ কাটার বিষয়ে তাদেরও কিছু বলা হয়নি বলে জানান রুহুল আমিন। তিনি বলেন, বনবিভাগের পক্ষ থেকে গাছ পাহারা দিই। সমিতির লোকজন সবজি গাছ কাটবে, এটা আমাকে বলেনি।

বারুইপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর (কাটাখালি) ওয়ার্ডের সদস্য আবু সাইদ বলেন, গাছ কাটায় কাটাখালী এলাকার শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তদন্ত করে দোষীদের বের করে শাস্তি এবং কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাই।

সমিতির সভাপতি অশোক কুমার ভৌমিক বলেন, বনবিভাগের নির্দেশে আমরা সবজি গাছ কেটেছি। গাছ রক্ষার জন্যই এসব গাছ কাটা হয়েছে।

তবে সামাজিক বনবিভাগ বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ এসএফএনটিসির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চিন্ময় মধু বলেন, কৃষকদের সবজি গাছ কাটতে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে গাছ কাটার একটি খবর পেয়েছি। দুই পক্ষকে খবর দেওয়া হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২৩
এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।