ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রভাব

বিশ্বজুড়ে অস্তিত্ব সংকটে মৌমাছি

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১২
বিশ্বজুড়ে অস্তিত্ব সংকটে মৌমাছি

ঢাকা : প্রকৃতির অত্যন্ত উপকারি পতঙ্গ মৌমাছির অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে পৃথিবীজুড়ে। মাত্রাতিরিক্ত নিওনিকোটিনয়ড নামে এক ধরণের ক্ষতিকারক রাসায়নিকের ব্যবহারের কারণে ব্যাপকহারে মৃত্যু ঘটছে মৌমাছির।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফলে এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়েছে, এই অবস্থা চলতে থাকলে পৃথিবীতে মৌমাছির টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছর ধরেই গণহারে মৌমাছিদের মৃত্যুর ঘটনা দেখা যাচ্ছে৷ তথ্য অনুযায়ি, বিশ্বের বহুদেশেই এই বিপর্যয় দেখা গেলেও ইউরোপ, উত্তর অ্যামেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে উদ্বেগজনক হারেই মৃত্যু ঘটছে মৌমাছির। বিগত ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এবং জার্মানিতে ২০০৮ সালে নিওনিকোটিনয়ড রাসায়নিক ব্যবহারে ব্যাপকহারে মৌমাছি মারা যায়৷

ফ্রান্স এবং ব্রিটেনে পরিচালিত এক গবেষণার বরাত দিয়ে ডয়েচে ভেলে অনলাইন জানায়, অল্প পরিমাণে হলেও নিওনিকোটিনয়ড মৌমাছির জন্য ক্ষতিকারক৷ তাই এই রাসায়নিক সরাসরি গাছের ওপর না ছিটিয়ে গাছের বীজগুলোকে এই রাসায়নিকের মধ্যে ডুবিয়ে নিয়ে রোপণ করা হয়৷ এর মাধ্যমে মৌমাছিগুলোর গায়ে আর সরাসরি ক্ষতিকারক নিওনিকোটিনয়ড লাগে না৷

গবেষকরা পরীক্ষা চালানোর জন্য মৌচাকে বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করে ছয় সপ্তাহ পর দেখতে পান শতকরা ৮৫ ভাগ মৌচাকে আর কোনো রাণী মৌমাছি জন্ম নিচ্ছে না৷ এছাড়া মৌচাকগুলোও ক্রমান্নয়ে ছোট হয়ে আসছে৷

দ্বিতীয় ধাপে অপর একটি পরীক্ষা চালানো হয়, ৬৫৩ টি মৌমাছির ওপর৷ এতে দেখা গেছে, যেসব মৌমাছির গায়ে সামান্য পরিমাণে রাসায়নিক নিওনিকোটিনয়ড লেগেছে তাদের অনেকের উড়ন্ত অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। গবেষকদের ধারণা, বিষের কারণে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে মৌমাছিরা।

খবরে আরো বল হয়, রাসায়নিক ছাড়াও ভারোনা নামে এক ধরণের রক্তচোষা পোকা মৌমাছির অস্তিত্ব সংকট তৈররি ক্ষেত্রে কাজ করছে। এই পোকা এতই ক্ষুদ্র যে তা ছোট্ট মৌমাছির গায়ে বসে রক্ত খায়৷ বিশেষ করে, ইউরোপ আর উত্তর অ্যামেরিকার মৌমাছিগুলো এই পোকার শিকার হয়৷ তবে এশিয়ার মৌমাছিরা ভারোনা পোকার কামড় সহ্য করেই দিব্যি চলতে ফিরতে পারে ।

জার্মানির পরিবেশবাদী দল নাবুর তথ্যমতে, গত কয়েক বছরে গোটা ইউরোপে শতকরা দশ ভাগ কমে গেছে মৌমাছির সংখ্যাৎ৷ যুক্তরাষ্ট্রে সেটা শতকরা ৩০ ভাগ আর মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বেশি- ৮৫ ভাগ৷

সাধারণত একটি মৌচাকে ৬০ হাজার মৌমাছি থাকে৷ গত শীতের মৌসুমে কেবল জার্মানিতে তিন লাখ মৌচাক ধ্বংস হয়ে গেছে, সে অনুযায়ি এক মৌসুমেই মারা গেছে ১৮ বিলিয়ন মৌমাছি৷

কেবল মধুই উৎপাদনেই নয়, ফুল, ফল ও ফসলের পরাগায়নেও সহায়তা করে মৌমাছি। প্রকৃতির ভারসাম্য বিধানে অসামান্য ভূমিকা রাখে এই মৌমাছি। কীটতত্ত্ববিদদের পরিসংখ্যানমতে, মৌমাছির পরাগায়ণের কারণে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি যে পরিমাণ মুনাফা করে তার পরিমাণ প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ বিলিয়ন ডলার৷

উল্লেখ্য, পৃথিবীতে ৯ টি স্বীকৃত গোত্রভুক্ত প্রায় ২০,০০০ হাজার মৌমাছি প্রজাতি আছে। বিজ্ঞানীদের কাছে এদের বেশির ভাগেরই কোনো বর্ণনা নেই এবং এর প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। উল্লেখ্য, অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত পৃথিবীর সব মহাদেশে যেখানেই পতঙ্গ-পরাগায়িত সপুষ্পক উদ্ভিদ আছে, সেখানে মৌমাছি আছে। বাংলাদেশ ও প্রতিবেশি ভারতে বেশ কয়েক প্রজাতির মৌমাছি দেখা যায়।

বাংলাদেশ সময় : ২১০০ ঘন্টা, ১৬ এপ্রিল ২০১২

এআই
সম্পাদনা : আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।