ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

কালজয়ী গানের সুরকার আলম খান মারা গেছেন

বিনোদন ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২২
কালজয়ী গানের সুরকার আলম খান মারা গেছেন

‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ওরে নীল দরিয়া’ ও ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলাতে চাই’ এমন অনেক কালজয়ী গানের সুরকার আলম খান মারা গেছেন।  

শুক্রবার সকাল ১১ টা ৩২ মিনিটে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

 

বিষয়টি জানিয়ে তার ছেলে আরমান খান বলেন, ‘বার্ধক্যজনিত কারণেই বাবা মারা গেছেন। এক-দেড় মাস থেকেই তার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। গতকাল তাকে লাইফ সাপোর্টেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। ’

১৯৪৪ সালের ২২ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে আলম খান জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম খুরশিদ আলম খান। বাবা আফতাব উদ্দিন খান ছিলেন সেক্রেটারিয়েট হোম ডিপার্টমেন্ট-এর এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার ও মা জোবেদা খানম ছিলেন গৃহিণী। আলম খানের মা জোবেদা খানম ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার দরবারের এক শিল্পীর বংশধর। সিরাজগঞ্জে কয়েক বছর থাকার পর বাবার চাকরি সুবাদে তিনি কলকাতায় চলে যান। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বাবার সঙ্গে ঢাকায় ফিরে আসেন।

তারপর ঢাকাতেই স্থায়ী হন এবং সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই মেট্রিক পাস করেন। স্কুলে থাকাকালীন তার গানের প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি হয়। বাবা আফতাব উদ্দিন প্রথমে অনাগ্রহ দেখালেও মায়ের উৎসাহে গানের চর্চা চালিয়ে যান। পরবর্তীতে তার বাবাই তাকে ওস্তাদ ননী চ্যাটার্জীর কাছে গানের তালিমের জন্য নিয়ে যান। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে আলম খান মেজো। বাংলাদেশের প্রখ্যাত পপ সঙ্গীত শিল্পী আজম খান ছিলেন তার ছোট ভাই।

আলম খান ১৯৬৩ সালে রবিন ঘোষের সহকারী হিসেবে তালাশ চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এরপর ১৯৭০ সালে আবদুল জব্বার খানের ‘কাঁচ কাটা হীরে’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।  

বিগত কয়েক দশক ধরে অসংখ্য সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সঙ্গীতের কিংবদন্তি। ধারাবাহিক সাফল্যের মধ্য দিয়ে তিনি সৃষ্টি করেন একের পর এক জনপ্রিয় গান।  

আলম খানের সুরকৃত প্রথম জনপ্রিয় গান ছিল স্লোগান ছায়াছবির ‘তবলার তেড়ে কেটে তাক’। এরপর ১৯৭৭ সালে আবদুল্লাহ আল মামুন তার পরিচালিত ‘সারেং বৌ’ চলচ্চিত্রের গান নিয়ে কথা বলার সময় তার ১৯৬৯ সালের সুর করা একটি মুখরা শুনালে সিনেমার পরিচালক তা নিতে আগ্রহী হন।

১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সেই সিনেমার আবদুল জব্বারের কণ্ঠে ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটি তার এক অনন্য সৃষ্টি। ১৯৮২ সালে রজনীগন্ধা চলচ্চিত্রে তার সুরারোপিত সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মত’ এবং সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ও এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুশ’ দর্শকদের মন কাড়ে। এমনি অসংখ্য কালজয়ী গানের এই সুরকার এ পর্যন্ত তিন শতাধিক সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। তার সুর করা গানের সংখ্যা দুই হাজারের ওপরে।

আলম খান ১৯৭৬ সালে হাবিবুননেসা গুলবানুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। গুলবানু একজন গীতিকার। আলম খানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে গাওয়া ‘তুমি তো এখন আমারই কথা ভাবছো’ গানটির গীতিকার গুলবানু। তাদের দুই ছেলে আরমান খান ও আদনান খান দুজনেই সঙ্গীত পরিচালক এবং একমাত্র মেয়ে আনিকা খান।

আলম খানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় হওয়া অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘কি জাদু করিলা’, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘সাথীরে যেও না কখনো দূরে’, ‘কাল তো ছিলাম ভালো’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’, ‘তেল গেলে ফুরাইয়া’ ইত্যাদি।

আলম খান শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতপরিচালক হিসেবে ১৯৮২ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সিনেমার মাধ্যমে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এরপর তিনি ‘তিন কন্যা’ (১৯৮৫), ‘সারেন্ডার’ (১৯৮৭), ‘দিনকাল (১৯৯২) এবং ‘বাঘের থাবা’ (১৯৯৯), ‘এবাদত’ (২০০৯) সিনেমাগুলোতে একই পুরস্কারে ভূষিত হন। শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে ২০০৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ‘কি জাদু করিলা’ সিনেমা জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২২
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।