ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

টেবিল বাজিয়েই গান গেয়ে দর্শক মাতাচ্ছে সুমন

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২২
টেবিল বাজিয়েই গান গেয়ে দর্শক মাতাচ্ছে সুমন সুমন শেখ

সিরাজগঞ্জ: ঢোল বা তবলা নয়, হাতে কয়েন নিয়ে টেবিল বাজিয়েই গানের তাল তোলে কিশোর শিল্পী সুমন শেখ। পল্লী বাঙলার জনপ্রিয় জারি, সারি, মুর্শিদী আর বাউল গান গেয়ে শত শত দর্শক-শ্রোতাকে মাতিয়ে রাখে ১৫ বছর বয়সী সুমন।

সম্প্রতি সুমনের  কণ্ঠে ‘তোরা বাতাস কর বাতাস কর বাতাস কর সখি’ গানটি সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর থেকেই অনেকই তার গায়কীর প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি সুমনের সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন অনেকেই।

‘তোরা বাতাস কর বাতাস কর বাতাস কর সখি’ গানের পরেই খোঁজ করা সুমনের। জানা যায়, উত্তরবঙ্গের জেলা সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের সালুয়াভিটা গ্রামে বাড়ি সুমনের।  

এ বিষয়ে আরো জানা যায়, দরিদ্র দিনমজুর পরিবারের সন্তান সুমনের বয়স বাড়লে শারিরিক বৃদ্ধি তার হয়নি। পথে-প্রান্তরে বা হাট-বাজারে গান গেয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে আসছে কিশোর এ শিল্পী। তার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই টাকা দেন। আর সংসার চালানোর জন্য এ টাকাই বাবা-মার হাতে তুলে দেয় সুমন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের শালুয়াভিটা গ্রামের দিনমজুর আল-আমিন শেখের ছেলে সুমন শেখ। মা সুমি বেগম ছাড়াও আরফিন (৬) নামে এক ছোট বোনও রয়েছে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলেও বাবা-মা তাকে লেখাপড়া করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর সে আর স্কুলে যায়নি।  

শিশুকাল থেকেই গানের প্রতি ঝোঁকটা ছিল সুমনের। গেল ৫ বছর ধরেই সে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড ও গ্রামগঞ্জে গান গেয়ে বেড়ায়। সঙ্গীতের ওপর কোন শিক্ষা না থাকলেও বিভিন্ন মাধ্যমে শুনে শুনে প্রায় ৪২টি বাউল, জারি-সারি ও মুর্শিদীগান মুখস্ত করেছে সে। কোন প্রকার বাদ্যযন্ত্র বাজাতে না জানলেও হাতে কয়েন নিয়ে টেবিল চাপড়িয়ে তোলে তবলার মতো তাল।  

সুমনের মা সুমি বেগম বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম ছেলে হওয়ায় লেখাপড়া করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শিশুকাল থেকেই ওর গানের প্রতি ঝোঁক ছিল। পরিবারের কারও কথা না শুনে ইচ্ছেমতো গান করছে সে। গান গেয়েই টাকা রোজগার করে। স্বামীর আয়ের পাশাপাশি সুমনের আয়েও আমাদের সংসার চলে।  

এদিকে সুমনের চাচা সেলিম শেখ বলেন, সুমনের বয়স বাড়লেও শারিরীক গঠন বাড়েনি। এখনও ও শিশুর মতোই রয়েছে। মানসিকভাবেও ওর সমস্যা রয়েছে। সুন্দর গান গাইতে পারলেও কারও সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলে না, কাউকে ভয়ও করে না। ওর ইচ্ছেমতোই যেখানে খুশি সেখানে যায়।  

তিনি আরো বলেন, সুমনের গান অনেকেই ভিডিও করে ইউটিউব ও ফেসবুকে ছেড়ে দিছে। যা এখন ভাইরাল হয়ে গেছে।  

সুমনের বাবা আল-আমিন শেখ বলেন, আমি ছেলেটাকে লেখাপড়া করতে পারি নাই। চেয়েছিলাম ও লেখাপড়া করুক। কিন্তু সেটা ওর ভালো লাগলো না। ওর গান ভালো লাগে। দুর-দুরান্তে যেয়ে গান করছে। আমরা আর বাঁধা দেই না। লোকজন সুমনের গানকে ভালো বলে, এতেই আমি খুশি।  

স্থানীয় ইউপি সদস্য সেরাজুল ইসলাম বলেন, সুমন শুনে শুনে গান মুখস্ত করেছে। তার কন্ঠে বাউল, জারি-সারি ও মুর্শিদীগান স্রোতাদের আনন্দ দেয়।  

খোকশাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশিদুল হক মোল্লা জানান, সুমন নামের ছেলেটি বিভিন্ন এলাকায় গান-বাজনা করছে। আমিও তার গান শুনেছি। ও গান বেশ ভালোই গায়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০২২
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।