ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

গানের রয়্যালিটি না পেয়ে রফিকুজ্জামানের ক্ষোভ

বিনোদন ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২২
গানের রয়্যালিটি না পেয়ে রফিকুজ্জামানের ক্ষোভ মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান

গানের রয়্যালটি না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন দেশের কিংবদন্তি গীতিকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে তার অ্যাকাউন্ড থেকে বাংলাদেশ বেতারের গীতিকার রয়্যালটি প্রসঙ্গে তথ্য মন্ত্রণালয় বরাবর একটি আবেদন জানান তিনি।

যেখানে উদাহরণ হিসেবে নিজের প্রয়াত বড় ভাই গীতিকবি ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও তার পরিবারের করুণ পরিণতির কথা উল্লেখ করেন তিনি।

২০০০ গানের এই গীতিকার ও শতাধিক সিনেমার কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচরিতা ওই আবেদনে লেখেন, আমার অগ্রজ, প্রয়াত কবি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ বেতারের একজন বিশিষ্ট গীতিকার ছিলেন। এখনও তার রচিত অনেক গানই বেতার ও টেলিভিশন থেকে প্রচার হয়। তার মৃত্যুর পর গানের রয়্যালটি স্ত্রী রাশিদা জামান প্রাপ্য হবে বলে তিনি তার রয়্যালটি ফরমেই উল্লেখ করে যান।  

ক্ষোভ প্রকাশ করে এই গীতিকার লেখেন, বেতারে আমার দীর্ঘ ২৫ বছরের চাকরি জীবনে দেখে এসেছি, প্রতি তিন মাস অন্তর রয়্যালটি চেক প্রাপকের ঠিকানায় ডাকযোগে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু এখন প্রাপককেই তার প্রাপ্য রয়্যালটির জন্যে বেতারে গিয়ে ধরনা দিতে হয়। এটি খুবই দুঃখজনক।

বড় ভাই গীতিকার ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের স্ত্রী রাশিদা জামানের বিষয়ে রফিকউজ্জামান আরও লেখেন, তার (রাশিদা জামান) বর্তমান বয়স ৮৪ বছর। বছরের পর বছর তিনি কোনও রয়্যালটি চেক পান না। এই বয়সে, তার পক্ষে বেতার ভবনে গিয়ে ধরনা দেওয়া সম্ভব নয়। তাহলে কি তিনি তার স্বামীর রচিত গানের রয়্যালটি থেকে বঞ্চিতই রয়ে যাবেন? এমন অবস্থা শুধু তাঁর নয়, অসংখ্য উত্তরাধিকারীর। এমন কি অনেক বয়ষ্ক জীবিত গীতিকারেরও। যেমন আমি।  

নিজের রয়্যালটি প্রাপ্তির বিষয়ে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান লেখেন, আমার বর্তমান বয়স ৭৮ বছর। ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত আমি বাংলাদেশ বেতারে চাকরিরত ছিলাম। ১৯৯৩ সালে বেতারের অনেক তোষণমূলক প্রচারণার সঙ্গে একমত হতে না পারায় চাকরি থেকে স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণে বাধ্য হই। এরপর বেতারের বিভিন্ন বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য পাণ্ডুলিপিসহ গান রচনা করে এসেছি। অন্যান্য বহু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও পরিচালনা করে এসেছি। করোনার প্রাদুর্ভাবের পর আমার আর বেতার ভবনে যাওয়া সম্ভব হয়নি। আমার প্রচুর সংখ্যক গান বেতারে প্রচারিত হলেও একমাত্র বাণিজ্যিক কার্যক্রম ছাড়া বাংলাদেশ বেতার ঢাকার আর কোনও রয়্যালটি চেক আমি পাইনি।

নন্দিত এই গীতিকার জানান, এমনিতেই বেতারের রয়্যালটির হার খুবই লজ্জাজনক। তার ওপরে যদি তা নিয়মিত না পাওয়া যায়, তা হলে ক্রমান্বয়ে বেতারের জন্য উন্নত মানের গানের রচয়িতার সংকট দেখা দেবেই। বর্তমানেই অনেক তরুণ গীতিকবি, তাদের রচিত গান নিয়ে নিজস্ব অ্যালবাম তৈরি করছেন, কিন্তু বেতারের জন্যে গান রচনা করছেন না।

সবশেষ তথ্য মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন জানিয়ে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান লেখেন, এসব বিষয়ে সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে আপনি সানুগ্রহভাবে এমন আদেশ প্রদান করুন, যাতে বাংলাদেশ বেতার রয়্যালটি প্রদানের দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্পন্ন করার বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান ১৯৬৫ সাল থেকে বাংলাদেশে বেতারে নিয়মিত গীতিকার হিসেবে যুক্ত হন। এরপর থেকে সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গেই রয়েছেন গুণী এই মানুষটি। ১৯৮৪ ও ১৯৮৬ সালে শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে এবং ২০০৮ সালে শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের লেখা জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘সেই রেললাইনের ধারে মেঠোপথটার পারে দাঁড়িয়ে’, ‘ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়’, ‘দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক’, ‘কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল’, ‘যদি মরনের পরে কেউ প্রশ্ন করে’, ‘আমার মন পাখিটা যা রে উড়ে যায়’, ‘আমার বাউল মনের একতারাটা’, ‘চির অক্ষয় তুমি বাংলাদেশ’, ‘পদ্ম পাতার পানি নয়, দিন যাপনের গ্লানি নয়’, ‘মাঠের সবুজ থেকে সূর্যের লাল’, ‘যেখানে বৃষ্টি কথা বলে’, ‘আমি নদীর মতন বয়ে বয়ে’, ‘শুক পাখিরে, পিঞ্জিরা তোর খুলে দিলাম আজ’, ‘আকাশের সব তারা ঝরে যাবে’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম’।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২২
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।