ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

ফরীদির জন্য ভালোবাসা

বিনোদন প্রতিবেদক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১২
ফরীদির জন্য ভালোবাসা

ক্ষণজন্মা অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। যুগে যুগে এমন অসাধারণ ক্ষমতাবান অভিনেতা খুব বেশি আসে না।

হুমায়ুন ফরীদির মৃত্যুতে তাই শোকাহত সতীর্থ-শুভাকাঙ্খীরা । আমাদের শোবিজের কৃতি ব্যক্তিত্বদের কাছে বাংলানিউজ জানতে চেয়েছিল হুমায়ুন ফরীদির সম্পর্কে। দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে তারা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করেছেন হুমায়ুন ফরীদির প্রতি।

অসময়ে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছি না : ড. ইনামূল হক
ফরীদি শুধু আমার প্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে একজনই নয়, ব্যক্তিগতভাবে আমি তাকে খুব পছন্দ করতাম। আমার পরিবারের সবাই তাকে পছন্দ করতো। তার এই অসময়ে চলে যাওয়াটা আমি মেনে নিতে পারছি না। অসুস্থ শরীরেও তাই তাকে একনজর দেখার জন্য ছুটে এসেছি। অনেক নাটকেই ফরীদির সঙ্গে আমি অভিনয় করেছি। প্রথম আমরা একসঙ্গে অভিনয় করি ‘সংশপ্তক’ নাটকে। এতে ‘কানকাটা রমজান’ চরিত্রে অভিনয় করেছিল ফরীদি। সে সময়ে তার অভিনয় খুব প্রশংসিত হয়েছিল। সে যেই চরিত্রে অভিনয় করতো তাই অদ্ভুতভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতো।

আমারই তো আগে চলে যাওয়ার কথা : এটিএম শামসুজ্জামান
হুমায়ুন ফরীদি আর আমি দুজনই চলচ্চিত্রের মন্দ মানুষ চরিত্রে অভিনয় করেছি। চলচ্চিত্রের বাইরেও তার সঙ্গে ছিল আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আমরা একসঙ্গে অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি। এ মুহূর্তে মনে পড়ছে শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘ভন্ড’ ছবির স্মৃতি। এই ছবিতে আমরা বোকাসোকা দুই ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। ছবিটির শুটিংয়ের সময় আমরা ভীষন আনন্দ করেছিলাম। ফরীদির সঙ্গে সর্বশেষ ‘চেহারা’ ছবিতে অভিনয় করেছি। ফরীদির সঙ্গ আমি খুব উপভোগ করতাম। বয়সে ফরীদি আমার অনেক ছোট। আমারই তো আগে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমি রয়ে গেলাম আর ফরীদি চলে গেল।

ফরীদির তুলনা কেবল ফরীদিই : রামেন্দু মজুমদার।
মঞ্চে-টিভি আর চলচ্চিত্র সব মাধ্যমেই অসম্ভব দক্ষ ও প্রতিভাবান এক অভিনেতা ছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। তার কোনো দুটো অভিনয় এক রকম ছিল না। ফরীদির তুলনা কেবল ফরীদিই। বিভিন্ন চরিত্র ফুটিয়ে তোলার ব্যাপারে তার প্রবল আগ্রহ ছিল। চলচ্চিত্রকে তিনি এক সময় পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সেখানে এমন কিছু চরিত্র তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন, যেখানে তার আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এদেশের মানুষ ফরীদিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মনে রাখবে।

আরো অনেক কিছু দেওয়ার ক্ষমতা ছিল : নাসিরউদ্দিন ইউসুফ
হুমায়ুন ফরীদির মতো ক্ষমতাবান অভিনেতা আমাদের দেশে খুব জন্ম নেয় নি। মঞ্চ কিংবা টেলিভিশন নাটকের মতো বাংলা চলচ্চিত্রকেও এক অনন্য উচ্চতায় তুলে নেওয়ার ক্ষমতা ফরীদি দেখিয়েছেন। কিন্তু বড় দুঃখ, আমাদের নির্মাতারা ফরীদির মতো অসামান্য প্রতিভাধর মানুষটিকে ব্যবহার করতে পারেননি। তার আরো অনেক কিছু দেওয়ার ক্ষমতা ছিল। ফরীদির সঙ্গে কাটানো সময়গুলো আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সংশপ্তক নাটকে একসঙ্গে কাজে স্মৃতি মনে পড়ছে : খলিল
বিটিভির তুমুল জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’-এ আমরা একসঙ্গে অভিনয় করেছি। আমি ছিলাম মিয়ার বেটা আর ফরীদি ছিল কান কাটা রমজান। এই দুই চরিত্রই দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়তা পায়। খুব মনে পড়ছে ওই নাটকে একসঙ্গে অভিনয় করার স্মৃতি। খুব ভাল মনের একজন মানুষ ছিল ফরীদি। শিশুদের মতো কোমল হৃদয় ছিল তার। তার এই হঠাৎ চলে যাওয়াটা মেনে নেয়ার মতো নয়। খুব খারাপ লাগছে।

ফরীদির অভাব পূরণ হবে না : পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়
ফরীদির মতো একজন অভিনেতা আমরা হয়তো অনেকদিন পাবো না। বিশেষ করে টেলিভিশন আর চলচ্চিত্রে তার মতো একজন শিল্পীর অভাব পূরণ হওয়ার নয়। ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে যখন হুমায়ুন ফরীদি যুক্ত হন তখন থেকেই তার পাগলামী দেখেছি। মঞ্চে দাঁড়ালেই ফরীদি যেন আর ফরীদি থাকতো না। চরিত্রের সঙ্গে একাকার হয়ে মিশে যেত। রাত দুপুরে ওর বাসায় অনেক সময় কাটিয়েছি। আসলে ফরীদির সঙ্গে আমার এতো এতো স্মৃতি রয়েছে, যা বলে শেষ করা যাবে না।

খুব উঁচু মাপের অভিনেতা ছিলেন : শিমূল ইউসুফ
আমার খুব কাছের একজন বন্ধু ছিলেন ফরীদি। তার পাগলামী সবসময়ই আমি উপভোগ করতাম। তার ছেলেমানুষী খুব ভালো লাগতো আমার। খুব উঁচু মাপের অভিনেতা ছিলেন হুমায়ূন ফরীদি। যখন যে চরিত্রটি তিনি করেছেন, তাতে যোগ করেছেন নতুন বৈশিষ্ট্য। তার স্মৃতি আজ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ফরীদি নেই এটি ভাবতেও আমার বেশ কষ্ট হচ্ছে।

হুমায়ুন ফরীদির অভিনয় পুরোপুরোই ন্যাচারেল : শাকিব খান
আমার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে অনেক অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি। সর্বশেষ এ কৃতি অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করেছি ‘চেহারা’ ছবিতে। তিনি যে একজন সাংঘাতিক অভিনেতা তা তার সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে আমরা টের পেয়েছি। তার অভিনয় ছিল পুরোপুরোই ন্যাচারেল ছিল। ছোটপর্দার অভিনেতারা বড়পর্দায় সুবিধা করতে পারেন না, সেটি ভুল বলে প্রমাণ করেছেন হুমায়ূন ফরীদি। টিভিমিডিয়ার কোন অভিনেতা নিজেকে বড় পর্দায় প্রমাণ করার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফরীদি ভাই। আমি এই মহান অভিনেতার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

খুব ভাল একজন বন্ধু হারালাম : শম্পা রেজা
হুমায়ুন ফরীদি আমার প্রিয় বন্ধুদের একজন। আমি খুব ভাল একজন বন্ধু হারালাম। এমন একজন বন্ধু এই জীবনে আর কখনও ফিরে পাবো না। খবরটা শোনার পর থেকেই কোন কাজে আর মন বসাতে পারছি না। খুব মনে পড়ছে ফরীদির সঙ্গে ‘শীতের পাখি’ আর ‘অধরা’ নাটকের কথা। এই দু’টি নাটকের সময়কার কথা বিশেষভাবে মনে পড়ছে। বয়সে তিনি আমার বেশ কয়েক বছরের বড় হলেও আমাদের মাঝে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। দেখা-সাক্ষাৎ খুব কম হলেও ফোনে তার সঙ্গে আমার খুব যোগাযোগ ছিল। আমি আমার এই বন্ধুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।  

নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি : শহীদুজ্জামান সেলিম
হুমায়ুন ফরীদিকে খুব কাছ থেকে দেখেছি বলে নিজেকে আমি সৌভাগ্যবান মনে করি। তার মতো প্রাণবন্ত মানুষ আমি কমই দেখেছি।   সর্বশেষ আমাদের দেখা হয়েছিল হাসপাতালে যখন তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। তখনও খুব সাবলীল ছিলেন । তিনি বলেন, কিছুই হয়নি রে আমার; তোরা এতো ভাবিস না। দুঃখজনক হলেও সত্যি আজ তিনি নেই। ভাল থাকেন ফরীদি ভাই। আপনার স্মৃতি থাকবে আজীবন আমাদের মাঝে।

বাংলাদেশ সময় ১৮২৫, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।