ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

বিদায় প্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১২
বিদায় প্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি

ভালোবাসা দিবসে প্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদিকে ভালোবাসা জানাতে মানুষের ঢল নেমেছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সদ্যপ্রয়াত হুমায়ুন ফরীদিকে এভাবে ভালোবাসা জানাতে হবে, সেজন্য প্রস্তুত ছিলেন না তার বন্ধু, সহকর্মী আর ভক্তদের কেউই।

অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষবার তাকে একনজর দেখার আকুতি ছিল সবার মাঝেই। শিল্প-সংস্কৃতি জগতের কর্মী আর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নের্তৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষ হুমায়ুন ফরীদির কফিনে ফুল দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করেন।

হুমায়ুন ফরীদির মরদেহ ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বারডেম হাসপাতালের হিমাগার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। জনারণ্যে পরিণত হওয়া শহীদ মিনারে প্রথমেই রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে গার্ড অব অনার প্রদানের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর বেদনাবিধূর পরিবেশে হুমায়ুন ফরীদির কফিনে সারিবদ্ধভাবে ফুলেল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানান হাজার হাজার মানুষ।

এ সময় শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতোই। অসাধারণ গুণী এই অভিনেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে এসেছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, শিমুল ইউসুফ, মামুনুর রশীদ, আতাউর রহমান, রামেন্দু মজুমদার, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, মাসুদ আলী খান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, জাহিদ হাসান, তৌকীর আহমেদ, বিপাশা হায়াত, ফকির আলমগীর, ঝুনা চৌধুরী, ফজলুর রহমান বাবু, ত্রপা মজুমদার, শমী কায়সার, আজাদ আবুল কালাম, আনিসুর রহমান মিলন, সুমাইয়া শিমু, ফারুক আহমেদসহ আরো অনেকে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর পর হুমায়ুন ফরীদির মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেতার শেষ নামাজে জানাজা। হাজার হাজার মানুষ এতে অংশ নেন। জানাজা শেষে দাফনের জন্য হুমায়ূন ফরীদির মরদেহ মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নেওয়া হয়।
সেখানেও জমেছিল জনতার ঢল। কৃতি এই অভিনেতাকে সমাহিত করা হয় মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে।

ফাল্গুনের প্রথম দিন যখন সবাই বসন্তকে স্বাগত জানাতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই অভিনয় দিয়ে দীর্ঘদিন মানুষের মনরাঙানো প্রিয় অভিনেতা ফরীদি সবাইকে ছেড়ে চলে যান। ১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ধানমন্ডির নিজের বাসায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। বেশ কিছুদিন ধরে হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন অসুস্থ। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়াসহ ফুসফুসের জটিলতায় তিনি ভুগছিলেন। রাজধানীর মর্ডান হাসাপাতালে প্রায় সপ্তাহখানেক চিকিৎসাধীন থাকার পর মাত্র একদিন আগে তিনি বাসায় ফিরেন। সোমবার  সকালে বাথরুমে পড়ে গিয়ে তিনি মাথায় আঘাত পান এবং অচেতন হয়ে পড়েন। চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এইদিন হুমায়ূন ফরীদির প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় তার বাসার সামনে। দুপুরে বিটিভি ও এফডিসিতে অনুষ্ঠিত হয় তার আরো দুটি নামজে জানাজা। জানাজা শেষে তার মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়।

হুমায়ূন ফরীদি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ঢাকার নারিন্দায় ১৯৫২ সালের ২৯ মে। তার বাবার নাম এটিএম নূরুল ইসলাম ও মা বেগম ফরিদা ইসলাম। চার ভাই-বোনের মধ্যে তার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। ইউনাইটেড ইসলামিয়া গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। চাঁদপুর সরকারী কলেজ থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন । সেখানে পড়াশোনাকালীন সময়েই নাট্যব্যক্তিত্ব সেলিম আল দীনের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নাট্য উৎসব আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ফরীদি ব্যাপক পরিচিতি পান। নাট্যশিক্ষক সেলিম আল দীনের হাত ধরেই তিনি ঢাকা থিয়েটারে যোগ দেন। ঢাকা থিয়েটারের হয়ে বহুনাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। তার নির্দেশনায় ঢাকা থিয়েটারের প্রযোজনা মঞ্চে আসে ‘ভূত’ নামের একটি নাটক। টিভিনাটকে হুমায়ূন ফরীদি অভিনয় শুরু করেন ১৯৮০ সাল থেকে। টিভিনাটকে সুবর্ণা মোস্তাফার সঙ্গে গড়ে ওঠে তার জুটি। পরবর্তীতে সুবর্ণাকেই বিয়ে করেন ফরীদি। তবে প্রায় তিনবছর আগে সেই সংসার ভেঙে যায়। মুলধারার অসংখ্য বানিজ্যিক ছবিতে একসময় অভিনয় করেছেন তিনি, অভিনয় করেছেন জীবনঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্রে। ফরীদি তার কয়েক দশকের কর্মময় জীবনে অসংখ্য বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যখন যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যোগ করেছেন নতুনমাত্রা, করে তুলেছেন জীবন্ত। বিটিভিতে প্রচারিত ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’-এ ফরীদি অভিনীত ‘কান কাটা রমজান’ এবং ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’-তে করা ‘সেরাজ তালুকদার’ অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা লাভ করে।

বাংলাদেশ সময় ১৫৪০, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।