ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বিনোদন

মৃত্যুর পর আমার সব সৃষ্টিকর্ম যেন ধ্বংস করা হয়: কবীর সুমন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২০
মৃত্যুর পর আমার সব সৃষ্টিকর্ম যেন ধ্বংস করা হয়: কবীর সুমন

ঢাকা: মৃত্যুর পর নিজের সব সৃষ্টিকর্মকে ধ্বংস করতে বলেছেন বাংলা গানের জীবনমুখী ঘরানার কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী কবীর সুমন।

শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) নিজের ফেসবুকে স্বহস্তে লেখা ইচ্ছাপত্রে তিনি পাণ্ডুলিপি, গান, রচনা, স্বরলিপি, রের্কডিং, হার্ডডিস্ক, পেনড্রাইভ ও প্রিন্টআউটসহ সব সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে বলেছেন।

স্বহস্তে লেখা ইচ্ছাপত্রে সুমন লিখেছেন, ‘সকলের অবগতির জন্য সজ্ঞানে- সচেতন অবস্থায়, স্বাধীন ভাবনাচিন্তায় ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমি জানাচ্ছি, আমার কোনো অসুখ করলে, আমায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে অথবা আমি মারা গেলে আমার সম্পর্কিত সবকিছুর, প্রতিটি বিষয় ও ক্ষেত্রে দায়িত্বগ্রহণ ও সিদ্ধান্তগ্রহণের অধিকার থাকবে একমাত্র মৃন্ময়ী তোকদারের (মায়ের নাম প্রয়াত প্রতিমা তোকদার, বাবার নাম দেবব্রত তোকদার)। অন্য কারোর কোনো অধিকার থাকবে না এইসব বিষয় ও ক্ষেত্রে। ’

‘আমার মৃতদেহ যেন দান করা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে। কোনো স্মরণসভা, শোকসভা, প্রার্থনাসভা যেন না হয়। আমার সমস্ত পাণ্ডুলিপি, গান, রচনা, স্মরলিপি, রেকর্ডিং, হার্ডডিস্ক, পেনড্রাইভ, লেখার খাতা, প্রিন্ট আউট যেন কলকাতা পুরসভার গাড়ি ডেকে তাঁদের হাতে তুলে দেয়া হয় সেগুলি ধ্বংস করার জন্য- হাতে লেখা সবকিছু, অডিও এবং ভিডিও ফাইল- আমার কোনোকিছু যেন আমার মৃত্যুর পর পড়ে না থাকে।

আমার ব্যবহার করা সব যন্ত্র, বাজনা, সরঞ্জাম যেন ধ্বংস করা হয়৷ এর অন্যথা হবে আমার অপমান। ’


বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য সংগীতশিল্পী কবীর সুমনের স্বহস্তে লেখা ইচ্ছাপত্রের ছবিটি তুলে ধরা হলো।

ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে ক্যাপশনে কবীর সুমন লিখেন, ‘খুব জরুরি বিষয়। আবেগহীনভাবে সকলকে জানিয়ে রাখছি, কারণ হঠাৎ কিছু ঘটে গেলে কঠিন সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় অনুরূপ একটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল ২০১২ সালে আমি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবার পর। খোলাখুলি সকলকে জানিয়ে রাখছি।  অনুগ্রহ করে মতামত দেবেন না। ভাল মন্দ কিছু লিখবেন না। এটা এক প্রবীন মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি। অনেক অভিজ্ঞতার পর, অনেক ভেবেচিন্তে লিখছি।  ফেসবুকে, যাতে অনেকেই এটা জেনে যান। অনুগ্রহ করে আবেগের বশবর্তী হবেন না, উপদেশ পরামর্শ দেবেন না। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, যাবো। আমার জীবনে কোনও হতাশা, দু:খ, ব্যর্থতাবোধ, অবসাদ নেই। আমি সানন্দে বেঁচে আছি, আমার কাজ করে যাচ্ছি। আমার জীবনে ভালবাসা কামনা কাম লালসা আনন্দ স্ফুর্তি মজা রঙ্গরগড় হাসাহাসি নিভৃত কান্না কাজ অধ্যবসায় নিয়মিত রেয়াজ পরিশ্রম সৃজনশীলতা সবই আছে। প্রয়াত খুশওয়ান্ত সিং তাঁর ' দি এণ্ড অফ ইণ্ডিয়া' গ্রন্থে লিখেছিলেন - "কাজই ধর্ম"। আমি তাইই মনে করি। আমার ধর্ম কাজ। প্রতিনিয়ত আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি, অর্থাৎ স্বধর্ম পালন করছি। আমি জানি আমি সানন্দে,খুশি মনে মারা যাবো।

আমি বেঁচে আছি বাংলা খেয়াল বাংলা গান সুরতালছন্দলয়, আমার স্বভাবসিদ্ধ ভালবাসা কাম কামনা খামখেয়ালিপনা inconsistency এক ধরণের ক্ষ্যাপামি আর সুরতাললয়ে থেকে মৃত্যুর অপেক্ষায়। অন্য কোনও বিষয়ে আমি নেই।  
জন্মস্বাধীন
স্বপরিশ্রমে ও স্বখরচায় স্বেচ্ছাচারী,
কবীর সুমন
২৩,১০, ২০
কলকাতা
আমার স্বহস্তে লেখা ইচ্ছাপত্রর ছবি তুলে ছাপিয়ে দিলাম’

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২০
ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।