ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বিনোদন

বাউল গান আর কাওয়ালিতে লোকজ মুগ্ধতা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
বাউল গান আর কাওয়ালিতে লোকজ মুগ্ধতা

ঢাকা (আর্মি স্টেডিয়াম থেকে): বাউল গানের এক জাদুকরী ভাষা আছে। শুরু হতে না হতেই তা যেন ছুঁয়ে যায় সমস্ত হৃদয়, মন, প্রাণ। অস্তিত্বের সঙ্গে স্পন্দন আর শিহরণ ওঠে শরীরেও। তা আবারও প্রমাণ করে গেল বাউল গানের জাদুকর ফকির শাহাবুদ্দিন।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোকফেস্টের মঞ্চে উঠেই সে দর্শক-শ্রোতাদের সেই স্পন্দনে জাগালেন তিনি। গাইলেন বাউল সম্রাট লালন সাঁইয়ের গান 'আল্লাহ বল মন রে পাখি'।

এ গানের মধ্য দিয়ে শিল্পী শুরু করেন তার পরিবেশনা।  

এরপর একে একে গাইতে থাকেন 'একদিন মাটির ভেতরে হবে ঘর', 'পাল তুলে দে মাঝি হেলা করিস না, ছেড়ে নৌকা আমি যাবো মদিনা', 'আমারে আসিবার কথা কইয়া মান করে লয় রইয়াছো ঘুমাইয়া', 'সোনার ময়না পাখি' গানগুলো। আধ্যাতিকতার স্বাদে এ সময় ডুবে থাকেন স্টেডিয়ামের হাজারও শ্রোতারা।

একে একে তুলে আনেন সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষার গানগুলোও। সেসব পরিবেশনায় আর্মি স্টেডিয়ামের দর্শকরা হারিয়ে যান অচেনা কোনো স্বপ্নলোকে। লোকজ বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রণে সুন্দর এক পরিবেশনায় মুগ্ধ হন সবাই।

এরপর মঞ্চে আসেন দ্বিতীয়দিনের প্রতিক্ষিত গায়িকা পাকিস্তানের হিনা নাসরুল্লাহ। যার গান শুনতে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষমাণ দর্শক প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে নতুন উদ্যমে। মঞ্চে উঠেই হিনা নাসরুল্লাহ সবাইকে জানান ‌'আসসলামু আলাইকুম'। তার সঙ্গে যোগ দেন আনসার নাসরুল্লাহ। এরপরই শুরু করেন রাগ ভৈরবীতে 'সুবহান আল্লাহ ইসক দা জালওয়া'। তাতে যেন ঘোর লাগে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকদের। নিশ্চুপ মুখরতার সুরে বুদ হন সকলেই।

ভৈরবী ঠাঁটে এ হামদের পর তারা গেয়ে শোনান 'ইয়া রাসূল ইয়া রাসূল'। তাতে দর্শকদের মুগ্ধতা বাড়িয়ে তৃতীয় পরিবেশনায় আনেন জনপ্রিয় কাওয়ালি 'সাসো কি মালা পে', সুফি কালাম 'মে নারায়ে মাস্তানা'! তাদের প্রতিটি গানেই যেন প্রাণ খুঁজে পায় প্রতিটি দর্শক-শ্রোতা। তার গানের মধ্য দিয়েই পর্দা নামবে লোক গানের এ দ্বিতীয় দিনের আসরের।

আয়োজকরা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এ অনুষ্ঠান চলবে। অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের জন্য দর্শকদের প্রতিদিন এন্ট্রি পাস দেখাতে হবে। হেডফোন, চার্জার বা পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে আর্মি প্রবেশ করা যাবে না। এছাড়া রাত ১০টার পর অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে যাবে।
হিনা নাসরুল্লাহ, ছবি: রাজীন চৌধুরী আয়োজকরা আরও জানান, উৎসব প্রাঙ্গণে গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা থাকছে না। তবে অনুষ্ঠান শেষে আর্মি স্টেডিয়াম থেকে দর্শকদের জন্য পাঁচটি ভিন্ন রুটে বাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সঙ্গীত পরিবেশন করছেন- বাংলাদেশের মালেক কাওয়াল, ফকির শাহাবুদ্দিন, ম্যাজিক বাউলিয়ানা’র কামরুজ্জামান রাব্বি ও শফিকুল ইসলাম, পাকিস্তানের হিনা নাসরুল্লাহ ও মালির হাবিব কইটে অ্যান্ড বামাদা।

দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ভিন্নধর্মী গিটারবাদন এবং গায়কি দিয়ে শ্রোতাদের প্রত্যাশা পূরণ করে চলেছেন শিল্পী বামদা। একই সঙ্গে তিনি ব্যান্ড বামাদাকে নিয়ে প্রায় ১৭শ' কনসার্টে গান করেছেন; পারফর্ম করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় মঞ্চে। একইসাথে শুক্রবার  রাতে বাংলাদেশের দর্শকরাও দেখতে পেলো হাবিব কইটেরেক সুরর দম। আফ্রিকান লোকধারার গান নিয়ে টানা ১ ঘন্টা মঞ্চে থাকেন তিনি। গান তাদের জনপ্রিয় সব গান।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) সমাপনী দিনে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন- বাংলাদেশের কাজল দেওয়ান ও চন্দনা মজুমদার এবং পাকিস্তানের ব্যান্ডদল ‘জুনুন’ ও রাশিয়ার ‘সাত্তুমা’।

বাংলাদেশ সময়: ০০২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
এইচএমএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।