ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিনোদন

বাচ্চুকে মনে পড়ে খুব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৯
বাচ্চুকে মনে পড়ে খুব শহীদ মাহমুদ জঙ্গী-আইয়ুব বাচ্চু

আইয়ুব বাচ্চুর দীর্ঘ সংগীত জীবনের সঙ্গী গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে তার লেখা বেশকিছু জনপ্রিয় গান পেয়েছেন শ্রোতারা। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) গিটার জাদুকরের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। বিশেষ এই দিনে আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করে বাংলানিউজ পাঠকদের জন্য একটি স্মৃতিচারণমূলক লেখা পাঠিয়েছেন জনপ্রিয় এই গীতিকবি। 

আইয়ুব বাচ্চুর ব্যান্ড সংগীতের শুরুটা হয়েছিল চট্টগ্রামের স্পাইডার নামক ব্যান্ডের মাধ্যমে। মাঝখানে ‘হৃদম ৭৭’ এবং পরে ফিলিংসে বাজাতো।

১৯৯৯ সালের দিকে সোলসের লিড গিটারিস্ট সাজেদুল আলম  বিদেশ চলে গেলে আইয়ুব বাচ্চু সোলসে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দেয়। সোলসের মূল সুরকার ও কম্পোজার তখন নকীব খান।

নকীব খান একসময় ঢাকা চলে গেলে বাচ্চুর উপর সুর এবং কম্পোজিশনের দায়িত্ব পড়ে। বাচ্চু আপাদমস্তক মিউজিশিয়ান। কোনো আড্ডা, আলোচনা যা কিছুই হোক না কেনো বাচ্চু থাকলে শেষ পর্যন্ত তা মিউজিকেই গড়াতো। আরও কত স্মৃতি। বাচ্চুকে মনে পড়ে খুব।

আইয়ুব বাচ্চুমনে পড়ছে সোলসের সবার সঙ্গে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম ফরেস্ট হিলে, ছোট-খাটো পিকনিক করতে।
সবাই বিভিন্ন ধরনের আনন্দে মেতে উঠেছি। একসময় দেখি বাচ্চু আমাকে বারবার পাহাড়ের নিরিবিলি প্রান্তে যেতে বলছে, নিতান্ত অনিচ্ছায় তার সঙ্গে গেলাম। বাচ্চুর সঙ্গে সবসময় গিটার থাকতো। বাচ্চু বললো, ভাই সুর করতে ইচ্ছা করছে- লিরিক দরকার।  

আমি বললাম, বাচ্চু এখানে পিকনিকে এসেছি, অন্যদিন করি। কিন্তু বাচ্চু নাছোরবান্দা, তার জোরাজুরিতে লিখতে বসলাম। লিখলাম ‘একদিন ঘুম ভাঙ্গা শহরে/মায়াবী সন্ধায়/চাঁদ জাগা একরাতে’- এতটুকু লেখার পর একটু দূরে ঘাসের উপর চোখ পড়লো। দেখি ঘাসের উপর কিছু ফুল পড়ে আছে। বাচ্চুকে বললাম, বাচ্চু ঘুমভাঙ্গা শহরে পড়ে লিখবো, ওই যে ঘাসের উপর ফুল দেখছো তা নিয়ে একটা গান লিখি কেমন?  বলেই লিখলাম ‘কি জানি কি এক দিন ছিলো/ ঘাসের দোলায় ফুল ছিল/এলিয়ে চুল তুমি ছিলে/কি জানি কি এক দিন ছিল’- এই গানটি এক বসাতেই লেখা শেষ করলাম এবং অল্প সময়ে বাচ্চু খুব চমৎকার সুর করলো।

আইয়ুব বাচ্চুবাচ্চুর সঙ্গে প্রচুর কাজ করেছি। মনে পড়ে, সরকারের অনুরোধের কাজও এর মধ্যে পরে। একবার পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে গান করার অনুরোধ আসে। লিখেছিলাম, ‘বাড়ছে মানুষ, বাড়েনি ভূমি’- এইসব গান বিটিভিতে সমাজ সচেতনমূলক গান হিসেবে প্রচার হতো।

বাচ্চুর জন্য প্রথম গান লিখি সত্তুর দশকের শেষের দিকে। বাচ্চু তখন স্কুলের ছাত্র। কখনো কখনো আমরা বন্ধুরা চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মাঠে আড্ডা দিতাম। সেখানে একদিন বাচ্চু এসে বিভিন্ন কথার পর গান চাইলে, স্কুলে পড়ে বিধায় কিছুটা কৌতুহল নিয়েই তাকে গান দিই। গানের শিরোনাম ছিল ‘হারানো বিকেলের গল্প বলি’। বাচ্চু এই গানটির সুর করে এবং পরে এই গান বাচ্চু সোলসের অ্যালবামে অন্তর্ভুক্ত করে। সোলসের দ্বিতীয় অ্যালবাম থেকে আমরা বক্তব্য প্রধান গান শুরু করি, ৮০ দশকের শুরু থেকে এইসব গানেও বাচ্চুর আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।  
১৯৯০ সালের শেষ দিকের কথা। ব্লু নাইল হোটেলে সোলসের মিটিং শেষে বাচ্চু সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছিল। আমি উঠছিলাম। কিছুটা বিষন্ন বাচ্চু আমাকে বললো, জঙ্গী ভাই সোলস ছেড়ে দিলাম। ‘একদিন ঘুম ভাঙা শহরে’ চেয়ে নিলাম। দোয়া করবেন। আমি বাচ্চুকে জড়িয়ে ধরে হোটেলের রেস্টুরেন্টে বসালাম। বললাম, তুমি জেনুইন মিউজিসিয়ান- তোমার চিন্তা কী?  নতুন ব্যান্ড করবে, তোমার অসুবিধা হবে না। এর কয়েক মাসের মধ্যে বাচ্চু এলআরবি গঠন করলো। বাকিটা ইতিহাস।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৯
ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।