ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

মঞ্চেই আমি মরতে চাই: আবুল হায়াত

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯
মঞ্চেই আমি মরতে চাই: আবুল হায়াত ‘পঞ্চসপ্ততি’ অনুষ্ঠানে আবুল হায়াতসহ অতিথিরা

ঢাকা: স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে গ্রুপ থিয়েটার চর্চা ও তার আরও অনেক পরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটক ও বড় পর্দায় দাপিয়ে বেড়ানো অভিনেতা আবুল হায়াত। তিনি পদার্পণ করলেন ৭৬ বছরে। আর সেই উদযাপনেই নিজের শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত মঞ্চে থাকতে চান বলে জানালেন গুণী এই অভিনেতা।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত, নৃত্যকলা ও আবৃত্তি ভবন মিলনায়তনে আবুল হায়াতের ‘পঞ্চসপ্ততি’র  আয়োজন করে তার অনুজ অভিনেতারা।

‘সার্থক জনম তোমার হে শিল্পী সুনিপুণ’ শিরোনামের এ উদযাপনে শিল্পীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন নাট্যকার আতাউর রহমান, মামুনুর রশীদ, দিলারা জামান, ডলি জহুর, জাহিদ হাসান, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, খায়রুল আলম সবুজ, নওয়াজিশ আলী খান, অধ্যাপক আবদুস সেলিম, ইনামুল হক, মুনিরা ইউসুফ মেমী প্রমুখ।

তবে সকলের ভিড়ে শিল্পীর নিজের কথাতে টেনেছেন সকলকে।

জন্মদিনের আয়োজনে এসে আবুল হায়াত বলেন, ‘মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মায়ের হাত ধরে অমলেন্দু বিশ্বাসের নাটক দেখতে গিয়েছিলাম। কী দাপিয়ে বেড়াতেন মঞ্চে! সেই পোকা মাথায় ঢুকে গেল, আমি তো অভিনয় করবো। সে পোকা মাথায় আছে আজ অবধি। আজও রাক্ষসের মতো বংশবৃদ্ধি করে চলেছে। ’

আবুল হায়াতবৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় শিল্পকলার মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রবীণ এ অভিনেতা সাবলীল কণ্ঠে বলেন, ‘আই ওয়ান্ট টু ডাই অন স্টেজ। এখান থেকে সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ আমাকে সরাতে পারবেন না। আমি অভিনয়কে কখনো ভুলতে পারবো না। অভিনয় জীবনে কারও প্রতি কোনো অভিযোগও নেই আমার। আর অভিনেতা আবুল হায়াতের সবচেয়ে বড় ঋণ তার বাবা খন্দকার আব্দুস সালামের কাছে। ’

১৯৪৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্ম নেওয়া আবুল হায়াত বাবার চাকরির সুবাদে চলে আসেন চট্টগ্রামে। রেলওয়ে কর্মকর্তা বাবার অনুপ্রেরণাতে তার নাটকের চর্চা এগিয়ে চলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাবা ছিলেন সংস্কৃতিমনা, তিনি ভালো ছবি আঁকতে পারতেন। কাগজ থেকে ছবি বানাতে পারতেন। এই মানুষটি ছিলেন সব্যসাচী। আমার প্রথম নাটক দেখে বাবা বলেছিলেন, তার নাকি মনে হয়নি আমি অভিনয় করেছি। আমি ভাবতে শুরু করলাম আমি কি তবে কিছুই পারি না। সেই থেকে শুরু। ’

আর এখন এই মানুষটিই ব্যক্তি পরিচয় ছাপিয়ে হয়ে উঠছেন বাংলার নাট্যমঞ্চের এক কিংবদন্তি অভিনেতা। যিনি বুয়েটে পুরকৌশলে পড়াশোনা সম্পন্ন করে প্রথমে ওয়াসা, পরে আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শক হিসেবে তিনি লিবিয়া ও লাউসেও দীর্ঘদিন কাজ করে এলেও বিদেশের উচ্চাভিলাষী জীবন তাকে টানেনি। অর্থকড়ির মোহ ভুলে তিনি নাটকের টানে আবারও চলে আসেন বাংলাদেশে।

এ নিয়ে বলতে গিয়ে আবুল হায়াত বলেন, ‘‘লিবিয়ার ডলার আমাকে ধরে রাখতে পারেনি। ওয়াসায় থাকলে চেয়ারম্যান বা সচিবও হয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু ওসব তো আমার ধাতে নাই। আমাকে প্রশ্ন করেন অনেকে, ‘আপনি তো ইঞ্জিনিয়ার, অভিনেতা হলেন কেমন করে। ’ আমি তো অভিনেতা। ওদের কেউ তো প্রশ্ন করল না, আপনি তো অভিনেতা,  ইঞ্জিনিয়ার হলেন কেমন করে? দশ বছর থেকে যে অভিনয় করে, অভিনয় তো তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে। ’’

‘তাইতো তিনি পরিবারকেও নিতে পারেন অভিনয়ের জগতে। বলতে পারেন, আমি আমার অভিনয় আমার মেয়েদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার ছোট মেয়ে নাতাশা খুব ভালো অভিনেত্রী। কিন্তু সে তার অস্থিরতা ও নিজস্ব ধ্যান-ধারণার কারণে অভিনয় করলো না। নাতি নাতনীরা এখন এ পথে আসবে কী না, জানি না। ’

অভিনয়ের জন্য আবুল হায়াত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ২০১৭ সালে। টিভি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি করেছেন নাটক পরিচালনা ও প্রযোজনার কাজ। আর নাগরিকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি বেশকটি নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি দিয়েছেন নির্দেশনাও।

জন্মদিনের আয়োজনে অন্যান্য বক্তারা তাকে টিভি নাটকের পর আবারও মঞ্চে ফিরে আসতে অনুরোধ করেন আর জন্মদিন উপলক্ষে পঞ্চসপ্ততিতে আবুল হায়াত উদযাপন পর্ষদ ‘সার্থক জনম তোমার হে শিল্পী সুনিপুণ’ শিরোনামে একটি স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করে। এই স্মারকগ্রন্থে বাবাকে নিয়ে লেখা নিজের কবিতা পাঠ করেন বিপাশা হায়াত।

নিমা রহমান ও আহসান হাবিব নাসিমের সঞ্চালনায় অনু্ষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ফারহিন খান জয়িতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
এইচএমএস/ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।