ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

বিনোদন

নায়করাজের চলে যাওয়ার দুই বছর

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৯
নায়করাজের চলে যাওয়ার দুই বছর নায়করাজ রাজ্জাক। ফাইল ছবি

‘নীল আকাশের নিচে আমি রাস্তা চলেছি একা / এই সবুজের শ্যামল মায়ায় দৃষ্টি পড়েছে ঢাকা।…’ এভাবেই কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে মায়ার জাল বিছিয়ে, দৃষ্টিকে অশ্রুসিক্ত করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক দু’বছর আগে এদিনেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন একা অচেনা অনন্তে। 

বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালী যুগের কিংবদন্তি অভিনেতা তিনি। দর্শকপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে গিয়েছিলেন বলে তাকে ডাকা হয় ‘নায়করাজ’।

পুরো নাম আব্দুর রাজ্জাক। আজ থেকে দুই বছর আগে (২১ আগস্ট ২০১৭) পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অনন্তের পথে পাড়ি জমান ‘অনন্ত প্রেম’র নায়ক রাজ্জাক।

জনপ্রিয় জুটি রাজ্জাক ও শাবানা

১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন রাজ্জাক। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে পড়েছেন তিনি। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় সরস্বতীপূজা চলাকালীন মঞ্চনাটকে অভিনয়ের জন্য তার ক্রীড়া শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে বেছে নেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। নাটক ‘বিদ্রোহী’তে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নায়করাজের অভিনয় শুরু।  কলেজ জীবনে ‘রতনলাল বাঙালি’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে অভিষেক ঘটে বড় পর্দায়।

‘রংবাজ’ সিনেমার দৃশ্যে রাজ্জাক ও কবরী

রাজ্জাক ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাগড় লেন’ চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। নায়ক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ হয় জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে সুচন্দার বিপরীতে। তারপর থেকে একাধারে অভিনয়, প্রযোজনা ও পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গন দাপিয়ে বেড়ান রাজ্জাক।

‘জীবন থেকে নেওয়া’ সিনেমায় রাজ্জাক ও সুচন্দা

স্বাধীনতার আগে ও পরে ঢাকা চলচ্চিত্রের প্রথম মেগাস্টার রাজ্জাক। জুটি গড়ার দক্ষতায় তিনি অনেক নায়িকার সঙ্গে উপহার দিয়েছেন স্মরণীয় অনেক চলচ্চিত্র। কবরীর সঙ্গে ‘রংবাজ’, শাবানার সঙ্গে ‘অতিথি’, ববিতার সঙ্গে ‘অনন্ত প্রেম’- এমন বহু আলোচিত ছবির নায়ক তিনি। সুজাতা, সুচন্দাসহ অনেকের সাথে তিনি অভিনয় করছেন চমৎকারভাবে। বিচিত্র, বিভিন্ন প্রেক্ষাপট, চরিত্র ও কাহিনীতে মানানসইভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন তিনি। অসংখ্য চলচ্চিত্রে কাজ করলেও রাজ্জাকের ফ্লপ ছবি নেই বললেই চলে। বক্স অফিসে হিট নায়কদের শীর্ষ স্থানে তার অবস্থান।

অভিনয় করেন ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘আলোর মিছিল’, ‘ছুটির ঘণ্টা’সহ মোট ৩০০টির বেশি বাংলা ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্রে। পরিচালনা করেন ১৬টি চলচ্চিত্র। গড়ে তোলেন রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন।

‘অনন্ত প্রেম’ সিনেমায় রাজ্জাক ও ববিতা

রাজ্জাক ১৯৬২ সালে খায়রুন নেসার (লক্ষ্মী) সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই দম্পতির ঘরে জন্ম নেন রেজাউল করিম (বাপ্পারাজ), খালিদ হোসেইন (সম্রাট), নাসরিন পাশা শম্পা, রওশন হোসেন বাপ্পি, আফরিন আলম ময়না।

শিল্প-সংস্কৃতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে নায়করাজ ২০১৫ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ পুরস্কারে ভূষিত হন। শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন মোট পাঁচবার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পান ২০১৩ সালে। ভূষিত হন বাচসাস পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননায়।  

২০১৭ সালের ২১ আগস্ট সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ৭৫ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যান ঢাকাই চলচ্চিত্রের অমর ‘নায়করাজ’।

বাংলাদেশ সময়: ১২০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৯
এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।