ঢালিউডে অনেক সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন নায়িকা কেয়া। মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘কঠিন বাস্তব’ ছবিতে আমিন খানের সঙ্গে প্রথম যখন অভিনয় করেন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪।
বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবে ঢালিউডের নায়িকাদের মধ্যে ছিলেন সবচেয়ে সফল। ব্যাংককের পাতয়া ও ফুকেট সমুদ্র সৈকতে চিত্রায়িত জেসমিন বিউটি সোপের বিজ্ঞাপনচিত্রে প্রথম মডেল হয়ে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সুন্দরী এই নায়িকা ‘তিব্বত স্নো’ বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হয়ে তৈরি করেন ক্রেজ। তারপর একে এক তিব্বত লিপজেল, সাগুপতা, জিএমজি এয়ারালাইন্স, বসুধা হাউজিং প্রভৃতি বিজ্ঞাপনে দারুণভাবে নিজেকে মেলে ধরেন। চলচ্চিত্রে কেয়া প্রয়াত নায়ক মান্না, রুবেল, আমিন খান, রিয়াজ, ফেরদৌস আর শাকিব খানের মতো হিরোদের বিপরীতে একসময় অভিনয় করেছেন। ২০০১ সালে চলচ্চিত্রে অভিষেক হওয়ার পর বছর চারেক শীর্ষ নায়কদের বিপরীতে অভিনয় করে যখন তার ক্যারিয়ারে আলোর দ্যুতির ছোঁয়া লাগে, তখনই তিনি জড়িয়ে যান ব্যক্তিগত জীবনের ঝুটঝামেলায়।
কেয়া একমাত্র নায়িকা, যিনি বিজ্ঞাপ মধ্যে সম্ভাবনাময়ী নায়িকা কেয়া দারুণ আলোচিত হয়েছিলেন বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবে। অনেক বছর আগে আহমেদ ইউসুফ সাবেরের নির্দেশনায় কাজ করে প্রথম আলোচনায় আসেন তিনি বিজ্ঞাপনগুলো মডেল হিসেবে কেয়ার সামনে সুন্দর পথ খুলে দেয়। তারপর চলচ্চিত্রের । তারপর একে একে `তিব্বত লিপজেল, সাগুপতা, জিএমজি এয়ারলাইন্সসহ বিভিন্ন বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবে নিজেকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করেন সে সূত্রে বিজ্ঞাপন শিল্পে নিজেকে অপরিহার্য করে তোলেন। মাঝখানে কিছুদিন বিরতি। ব্যক্তিগত কিছু ঝুটঝামেলা।
চলচ্চিত্রে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকার পরও নিজের খামখেয়ালিপনায় হারিয়ে যাওয়া নায়িকাদের মধ্যে যে কজন উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্যে সেরা আসনটি অল্প সময়েই দখল করে নেন কেয়া। মালদার একাধিক প্রযোজকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন রোমান্সে। তাদের মধ্য থেকে জুবায়ের নামের এক ধনকুবেরের হাত ধরে পাড়ি দেন আমেরিকা। কিন্তু দুবছর ঘুরবার আগেই সেই সম্পর্কের ইতি টেনে দেশে ফিরেন। জুবায়ের নামের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী এখন ঢালিউডের আরেক নায়িকা জনার স্বামী।
আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে আসার পর কেয়া মিডিয়ায় নিয়মিত কাজ করবেন বলে ঘোষণা দেন। বেশক’টি ছবিতেও তিনি কাজ করেন এবং চুক্তিবদ্ধ হন। এরপরই কেয়ার আচরণ রহস্যজনক হয়ে পড়ে। সবার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ঢাকার কাকরাইলের বাবুল নামের এক গাড়ি ব্যবসায়ী আবার বিয়ে করে চলে যান স্বেচ্ছা নির্বাসনে। বাদ পড়েন শাহ আলম কিরন, মোহাম্মদ হোসেন, শোয়েব চৌধুরী আর সোহেল আরমানের ছবি থেকে। দ্বিতীয় বিয়েও টিকে নি। শোবিজ থেকেও প্রায় হারিয়ে যান কেয়া।
বেশ কিছুদিন বিরতির পর আবারও নতুন করে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করতে যাচ্ছেন চিত্রনায়িকা কেয়া। এবার পুরনো কোন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর সঙ্গে নয়। একেবারে নতুন মুখ আবিরের সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ শুরু করছেন তিনি। সম্প্রতি ঢাকার একটি স্টুডিওতে মহরতের মাধ্যমে নতুন এ ছবির ঘোষণা দেয়া হয়। আবুল খায়ের বুলবুলের পরিচালনায় ছবিটির নাম ‘ফিরিয়ে দাও আমার প্রেম’। সম্পূর্ণ রোমান্টিক এ ছবিটিতে আরও দুটি প্যারালাল চরিত্রে অভিনয় করছেন আলেচিত তরুণ নায়ক আরজু খান ও চাঁদনী।
‘ফিরিয়ে দাও আমার প্রেম’ ছবির গল্প গড়ে উঠেছে ধনী গরীবের প্রেম এবং বিভিন্নরকম পারিবারিক টানাপোড়েন নিয়ে। আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে এফডিসিতে ছবিটির শুটিং শুরু হবে বলে পরিচালক সূত্রে জানা যায়। ছবিটি প্রযোজনা করছেন রফিক ভুঁইয়া। এ ছবির মাধ্যমে অভিনয়ে ফেরা প্রসঙ্গে কেয়া বলেন, দীর্ঘদিন পর আবারও নতুন করে শুরু করলাম। এ ছবিতে দর্শক আমাকে সম্পূর্ণ নতুনরূপে দেখতে পাবেন। আশা করি এখন থেকে আমাকে নিয়মিত চলচ্চিত্রে দেখা যাবে।
ক্যারিয়ারের প্রতি যতœবান না হওয়া প্রসঙ্গে কেয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বললেন, আসলে খুব কম বয়সে আমি চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করি। সঠিক গাইড পাই নি। বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলাম। অনেক সময় তাই নিজের ক্যারিয়ারের ভালোমন্দ বাদ-বিচার করা সম্ভব হয়ে উঠে নি। তাছাড়া শারীরিক কিছু সমস্যার কারণে মাঝখানে আমাকে অস্ত্রোপচার করাতে হয়। এজন্য লম্বা সময় বিশ্রামে থাকতে হয়েছে। তাই বেশ কিছু চুক্তি থাকলেও আমি কাজ করতে পারি নি। এখন শুধু কাজ আর কাজ। এর বাইরে আর কিছুই ভাবছি না। আমি আর বিশ্রাম বা অবসরও চাই না। শুধুই কাজ করতে চাই। চলচ্চিত্র আর মডেলিং নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাই।
ঢালিউডের গ্লামারাস এ নায়িকা আগেও একাধিকবার নতুন করে ফিরে আসার ঘোষণা দিয়ে কিছুদিন পরেই ডুব দিয়েছেন। অবশ্য এবারের ফিরে আসা বিগত দিনের ফিরে আসার মতো নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। বেছে বেছে নিজেকে চুক্তিবদ্ধ করছেন নতুন ছবিতে। নিয়মিত যোগাযোগ করছেন নির্মাতাদের সঙ্গে। নিজেকে পুনরায় চলচ্চিত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে কেয়া বললেন, অতীতের ভুল থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি। এবার আমি খুব সতর্ক। অন্ধকার এড়িয়ে খোলা আকাশের ঝলমলে রোদে পিঠটান করে দাঁড়ানোর মতো প্রত্যয় আমার আছে।
‘ফিরিয়ে দাও আমার প্রেম’ ছবিটি ছাড়াও কেয়ার হাতে এ মুহূর্তে রয়েছে আরো কয়েকটি ছবি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রকিবুল আলম রাকিবের ‘জান তুমি প্রাণ তুমি`, বাবুল রেজার ‘কাঁটাদাগ’, রাজু আকবরের ‘রক্তে ভেজা মাটি’, কমল সরকার ‘এক টাকার ছেলে কোটি টাকার মেয়ে’, বাবুল রেজার পরিচালনায় ‘কাটা দাগ’ প্রভৃতি।
নায়িকা সঙ্কটের এ মুহূর্তে কেয়া সত্যিই যদি কমিটমেন্ট বজায় রেখে কাজ করতে পারেন তাহলে হয়তো কেয়া আবার ফুল হয়ে উঠতে পারেন ঢালিউডের। তার মধ্যে এখনো রয়েছে স্নীগ্ধ লাবণ্যের ছোঁয়া। অনেক নির্মাতাই এখন আবার কেয়াকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।
বাংলাদেশ সময় ০০৪৫, ডিসেম্বর ০৫, ২০১১