ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার অজিত রায়ের চিরবিদায়

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১১
সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার অজিত রায়ের চিরবিদায়

স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার অজিত রায় আর নেই। ০৪ সেপ্টেম্বর রোববার বেলা ১টা ১০মিনিটে তিনি রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

  তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৭৩ বছর।

শিল্পী  দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। এর আগে কলকাতায় তার ফুসফুসে দুবার অস্ত্রোপচার করা হয়। গত ২৬ আগস্ট তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার দেহে নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। এ অবস্থায় ৩০ আগস্ট থেকে তাকে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

অজিত রায়ের মেয়ে  শ্রেয়সী রায় বাংলানিউজকে জানান, ০৪ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে শিল্পীর অবস্থার আরো অবনতি হয়। তার ফুসফুস পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়; হৃদপিন্ডও ঠিকমতো কাজ করছিল না। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থাতে দুপুরে গুণী এই সঙ্গীতপ্রতিভার জীবনাবসান ঘটে।

শিল্পী অজিত রায়ের পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শিল্পীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে নিয়ে যাওয়া হবে।   শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে  তার মরদেহের শেষকৃত্য করা হবে বুড়িগঙ্গার পাড়ে পোস্তাগোলা শ্মশানে। বর্তমানে বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে তার মরদেহ রাখা হয়েছে।

 অজিত রায়ের জন্ম ১৯৩৮ সালে রংপুরে। গান শিখেছেন মা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কনিকা রায়ের কাছে। মাধ্যমিক পাশের পর ১৯৬৩ সাল থেকে তিনি নিয়মিত রেডিওতে গাইতে শুরু করেন। এ দেশে টেলিভিশন সম্প্রচার শুরুর প্রথম থেকেই গান গাইছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাশাপাশি আধুনিক ও লোকসঙ্গীত গাইতেন। অজিত রায় ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক।

চলচ্চিত্রের প্লে-ব্যাক গায়ক হিসেবেও অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্রে অজিত রায় গান গেয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে ‘রিপোর্টার‘, ‘জীবন থেকে নেওয়া’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘জন্মভূমি’, ‘কোথায় যেন দেখেছি’ এবং ‘কসাই’। এছাড়াও তিনি ‘সুরজ মিয়া’ নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন।

অজিত রায় ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী ও অন্যতম সংগঠক। ১৯৭১-এর জুনে তিনি কলকাতায় স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে যোগ দেন। এসময় তার সতীর্থ শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন আপেল মাহমুদ, আব্দুল জব্বার, সমর দাস, কাদেরী কিবরিয়াসহ আরো অনেকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় অজিত রায়-রচিত এবং সুরারোপিত অনেক গানই দেশবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল জোগায়। এসব গানের মধ্যে রয়েছে ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’, ‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব’, ‘আমি যুগে যুগে আসি’, ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে’ প্রভৃতি।

১৯৭২ সালে অজিত রায় বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৬ সাল চাকরি থেকে অবসর নেন। সঙ্গীত সাধনায় বিশেষ অবদানের জন্য অজিত রায় ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও জীবনের বিভিন্ন সময় তিনি বেগম রোকেয়া পদক, সিকোয়েন্স পদক, শব্দসৈনিক পদক, ঋষিজ পদক, রবিরশ্মি পদক সহ অসংখ্য পুরস্কার পান।

সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার অজিত রায়ের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে।

 

বাংলাদেশ সময় ১৫১০, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।