ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

বহুরূপী সুমাইয়া শিমু

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১১
বহুরূপী সুমাইয়া শিমু

‘যিনি রাঁধতে জানেন, তিনি চুলও বাঁধতে পারেন’- এ কথা কী সবার জন্য! সবাই তো আর সবদিক ঠিক রেখে এগিয়ে যেতে পারেন না। কেউ কেউ পারেন।

এমনই একজন সুমাইয়া শিমু। ছোটপর্দার অভিনেত্রী হিসেবে যেমন ঝলমলে হয়ে উঠেছেন, তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাতেও রেখেছেন মেধার স্বাক্ষর।

কত বছর হলো অভিনয়ে? এক যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, জানালেন সুমাইয়া শিমু। শুরুতে ছোট ছোট চরিত্র। অভিনয়টা ছিল শুধুই শখ। এরপর ধীরে ধীরে অভিনয়ের প্রতি অনুরাগ তৈরি। একটু একটু করে নির্মাতাদের আস্থা অর্জন। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ। শখ থেকে নেশা, তারপর পেশা হিসেবে অভিনয়টা গ্রহণ। এখন তো সুমাইয়া শিমু অভিনয় করছেন প্রায় নাটকের প্রধান চরিত্রে।

সুমাইয়া শিমুর অভিনয় জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ধারাবাহিক নাটক ‘স্বপ্নচূড়া’। এ নাটকে অনবদ্য অভিনয় তাকে নিয়ে যায় আলাদা উচ্চতায়। একুশে টিভির ‘ললিতা’ নাটকের নাম ভূমিকায় অভিনয় করে সুমাইয়া আরেকবার প্রমাণ করেছেন তার অভিনয় ক্ষমতা। । এ নাটকেও তিনি নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন। একটি মেয়ের আকাশছোঁয়া স্বপ্ন এতে তুলে ধরা হয়েছে। ললিতা নামের এই মেয়েটির স্বপ্ন সে একদিন সিনেমার নায়িকা হবে। বস্তি থেকে উঠে আসা মেয়েটি নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে শেষপর্যন্ত নিজেকে চলচ্চিত্রের নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই অবস্থানে আসার ক্ষেত্রে পতিতাপল্লীতে বিক্রি হয়ে অবর্ণনীয় কষ্টেরও শিকার হয়েছে ললিতা। বারে বারে হয়েছে অসম্মান আর অপমানের মুখোমুখি। কিন্তু ইচ্ছেশক্তি শেষপর্যন্ত তাকে পৌঁছে দেয় কাঙ্খিত গন্তব্যে। ‘ললিতা’ ধারাবাহিকটি এরই মধ্যে পেয়েছে দারুণ দর্শকপ্রিয়তা। এতে সুমাইয়া শিমু শুধু নাম ভূমিকায় অভিনয় করে নাটকটির শোভা বাড়াননি, নাটকটিকে একাই এ পর্যন্ত টেনে এনেছেন। এটা মোটেও সহজ কথা নয়।

শুরুর দিকের কিছু কাজ ছাড়া অভিনয়ে শিমু বরাবরই চুজি। দেখে-শুনে-বুঝে তবেই কাজ করেন। সব অভিনয়শিল্পীর মতোই মনের মধ্যে লালন করেন ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১২ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সম্প্রতি এনটিভিতে প্রচার হয়েছে ফেরদৌস হাসান রানার পরিচালনায় বিশেষ নাটক ‘কাজরী’। এ নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শিমু। এখানে তাকে একজন কালো মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা গেছে। কাজরী চরিত্রে শিমু আরেকবার নিজের অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করেছেন।

shimuনিজের অভিনয় সম্পর্কে শিমুর মূল্যায়ন, অভিনয় আসলে চর্চার বিষয়। আমি এখনো চর্চার মধ্যেই আছি। নিজের অভিনয় নিয়ে আমি পুরোপুরি তৃপ্ত হতে পারিনি কখনো। মনে হয়েছে, আরো ভালো করা যেতো বা আরো ভালো করা উচিত ছিল। ইদানিং আমি ভিন্ন ধারায় কাজকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। কারণ আমার মনে হয়, এখন আমার স্ক্রিনে গতানুগতিক কাজ নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হওয়ার কিছু নেই। এ কথা সত্যি যে, নিয়মিত ভিন্নধর্মী কাজ করা কঠিন। তারপরও আমার চেষ্টা থাকে নতুন নতুন চরিত্রে বহুরূপী হয়ে উঠতে ।

ঈদের নাটক নিয়ে এরই মধ্যে মিডিয়া শুরু হয়ে গেছে ধুম প্রস্ততি। স্বাভাবিকভাবেই সুমাইয়া শিমুর কাছেও আসছে বহু প্রস্তাব। শুরুতে কাউকেই তিনি হ্যাঁ বা না বলছেন না। আগে দেখতে চাচ্ছেন নাটকের স্ক্রিপ্ট। যদি নাটকের গল্পটা সুন্দর হয় আর চরিত্রটি মনে দাগ কাটে, তবেই সম্মতি জানাচ্ছেন। তাই এবারের ঈদেও খুব বেশি নাটকে তাকে অভিনয় করতে দেখার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানালেন শিমু।

একাডেমিক পড়াশোনাতেও সুমাইয়া শিমু স্পর্শ করতে চলেছেন উচ্চতর প্লাটফর্ম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকার ও রাজনীতি বিষয়ে এমএসএস করার পর নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে এমফিল করে। শুধু তাই নয়, এমফিল ফার্স্ট পার্টে  প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এ কারণে সেকেন্ড পার্ট না করেই তিনি পিএইচডি শুরু করেছেন। এ প্রসঙ্গে শিমু বলেন, আমি পিএইচডি করি এটা আমার যেমন স্বপ্ন, তার চেয়ে বেশি স্বপ্ন দেখেন আমার বাবা-মা। তাদের স্বপ্নকে সত্যি করতেই কাজ নিয়ে অনেক থাকা ব্যস্ততার মধ্যেই পিএইচডি করছি। সুমাইয় শিমু বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন মিডিয়াকেই। তার পিএইচডির বিষয় ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে নারীর অভিনয় : শৈল্পিক ও আর্থ-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত’।

ধাপের পর ধাপ ডিঙিয়ে অভিনয়ে কাক্সিক্ষত অবস্থানে পৌঁছে যাওয়া, উচ্চশিক্ষার একদম শেষ স্তরে পা রাখা; এতকিছুর পর কিছু যেন বাকি রয়ে যায়। হ্যাঁ, তার সমসাময়িক সব অভিনেত্রীই বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়েছেন। জুনিয়রদের অনেকেই সংসার সাজিয়েছেন। গত ছয় মাসে তো একডজনের বেশি অভিনেত্রী পটাপট বিয়ে করে ফেললেন। এ অবস্থায় কতদিন আর একা একা থাকবেন সুমাইয়া শিমু?

সুমাইয় শিমু তার বিখ্যাত মিস্টি হাসিটি হেসে বললেন, বিয়ে তো করতেই হবে। একজীবন তো আর একা একা কাটিয়ে দেয়া যায় না। তবে পিএইচডি শেষ না হলে আমি এ নিয়ে ভাবতে চাই না। বাবা-মা ভাবছেন অনেকদিন ধরে। তাদের ভাবনাকে সম্মান করতে চাই। সবদিক ভেবেই তারা এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন। আমি আপাতত আছি ক্যারিয়ার আর পড়ালেখা নিয়েই।

বাংলাদেশ সময় ১৯১৫, জুন ১৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।