ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

নুহাশ পল্লীর নাগরিক বৈশাখী মেলায় কিছুক্ষণ

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১১
নুহাশ পল্লীর নাগরিক বৈশাখী মেলায় কিছুক্ষণ

রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ষাট কিলোমিটার দূরে, ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ের হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সাত কিলোমিটার ভিতরে, গাজীপুর জেলার পিরুজালী গ্রামে হুমায়ূন আহমেদের গড়ে তোলা নন্দনকানন নুহাশ পল্লী। এবারের পহেলা বৈশাখে সেখানে আয়োজন করা হয় এক বৈশাখী মেলার।

শহর থেকে বহু দূরে হলেও নুহাশ পল্লীর বৈশাখী মেলা পরিণত হয়েছিল নাগরিক জনারণ্যে। মেলার দর্শনার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন ঢাকা থেকে আগত।

একটি বৈশাখী মেলায় যা যা থাকে, তার সবই ছিল নুহাশ পল্লীর বৈশাখী মেলায়। সবুজ ঘাসে মোড়া বিশাল মাঠের একেক কোনায় ছিল একেকরকম নজরকাড়া আয়োজন। কুটিরশিল্প ও চারুকারু পণ্যে স্টল ছিল ৬/৭ টি। মাটির পুতুল, বাঁশের বাঁশি, টিনের তলোয়ার, তালপাতার পাখা, মাটির বাসন-কোসন প্রভৃতির পাশাপাশি কাঁচের চুড়ি, কাঠের গয়না, ইমিটেশন আইটেম, শো পিস সবই ছিল এসব স্টলে।

লেখক মানুষ হুমায়ূন আহমেদ, তার গড়ে তোলা নুহাশ পল্লীতে মেলা হবে আর সেখানে বই পাওয়া যাবে না; তা তো হয় না। নুহাশ পল্লীর বৈশাখী মেলায় ছিল বেশ বড় একটা বুক স্টল। শুধু হুমায়ূন আহমেদের বই-ই নয়, বাংলা ভাষার বহু জনপ্রিয় লেখকের বই সেখানে বিক্রি হয়েছে।

নুহাশ পল্লীর বৈশাখী মেলায় ছিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী চরকা। একপাশে দিনভর চলেছে সাপের খেলা আর অন্যপাশে বাঁদরের নাচ। ছিল হাতি আর ঘোড়ায় চড়ে নুহাশ পল্লী চক্কর দেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা। এসব নিয়ে মেলায় আসা শিশু-কিশোরদের সময়টা কেটেছে দারুণ আনন্দে। নুহাশ পল্লীর ট্রি-হাউজ আর ডাইনোসারের মূর্তির প্রতিও ছিল ছোটদের বিশেষ আকর্ষণ।

বিশাল মাঠের ঠিক মাঝখানে ছিল গান-বাজনার প্যান্ডেল। নাহ, সেখানে ছিল না কোনো নামী-দামি শিল্পীর পরিবেশনা। লোকজ গানের পসরা নিয়েই সেখানে বসেছিল জমজমাট আসর।

বৈশাখী মেলায় খানাদানার আয়োজনে বাঙালিয়ানা থাকাটাই স্বাভাবিক। নাস্তা হিসেবে ছিল খই-মুড়ি-চিড়ার সঙ্গে নারকেলের নাড়–-বাতাসা-কদমা। দুপুরের খাবার হিসেবে পান্তা-ইলিশ তো ছিলই, আরো ছিল বারো রকম ভর্তা, সজনে ডাটার চচ্চড়ি, শুটকির তরকারি, গরুর মাংশের ভুনা, মুগডাল আর চিকন চালের সাদা ভাত। তবে পরিবেশনার ভঙ্গি ছিল অনেকটা রাজধানীর অভিজাত রেস্টুরেন্টের মতোই। বুফে লাঞ্চ, যার যেটুকু দরকার নিজেই নিয়ে নিন। মাটির সানকীতে উপাদেয় খাবার নিয়ে ভোজন রসিকরা এতোই মশগুল হয়ে পড়েছিলেন যে, শেষবেলায় খাবারে টান পড়ে যায়।

নুহাশ পল্লীর বৈশাখী মেলায় যোগ দেওয়া অতিথিদের মধ্যে সিংহভাগই ছিল ঢাকা থেকে আসা। নুহাশ পল্লীর গেইটের কাছে দিনভর শতাধিক গাড়ি পার্কিংয়ে থাকতে দেখা গেছে। শহর থেকে দূরে অভিজাত নাগরিকদের জন্য আয়োজিত এই বৈশাখী মেলার প্যাকেজ টিকিট ছিল এক হাজার টাকা। নুহাশ চলচ্চিত্রের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, প্রায় তিন হাজার টিকিট বিক্রি করা হয়েছে।

নুহাশ পল্লীতে কেনো বৈশাখী মেলা ?  এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে হুমায়ূন আহমেদ আঙুলে দেখিয়ে দিলেন স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে। বাংলানিউজকে হুমায়ূন আহমেদ বলেন, এতো মানুষ যে নুহাশ পল্লীর বৈশাখী মেলায় আসবেন তা ছিল আমার ধারণার বাইরে। এতো মানুষের ভিড়ে আমি খানিকটা অসুস্থ বোধ করছি। নুহাশ পল্লীতে কেনো বৈশাখী মেলার আয়োজন, এটা আমার চেয়ে শাওন ভালো বলতে পারবে।

নুহাশ পল্লীর বৈশাখী মেলা সম্পর্কে শাওন বললেন, গতবছর প্রথমবারের মতো নুহাশ পল্লীতে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। সেটা ছিল সীমিত আকারে। এবারের আয়োজনে আরেকটু ব্যাপকতা আনা হয়েছে। আগামীতে তা আরো বাড়বে। নুহাশ পল্লীতে নিয়মিত আমরা বৈশাখী মেলার আয়োজন করে যেতে চাই। এটা হুমায়ূন আহমেদ বা আমার, কারোই একার আয়োজন নয়। নুহাশ চলচ্চিত্র ও নুহাশ পল্লীর কর্মীদের সম্মিলিত উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই মেলা।

মেলায় টিকিটের মূল্য একহাজার টাকা কী অনেক বেশি হয়ে গেল না? উত্তরে শাওন বললেন, পুরো বৈশাখী মেলায় একটি চ্যারিটি প্রজেক্ট। মেলা থেকে আসা লভ্যাংশের পুরো টাকাই একটি স্কুলের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। হুমায়ূন আহমেদের পৈত্রিক বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের তহবিল গঠনে আমরা মেলা থেকে আসা লভ্যাংশের টাকা প্রদান করবো। তাছাড়া প্রবেশ টিকিটের মধ্যে খাওয়া-দাওয়া সহ সব বিনোদনের খরচ ধরা হয়েছে। তাই বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে অনেকের কাছে খটকা লাগতে পারে।   টিকিট বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেশিরভাগ টিকিট আসলে আমরা আমাদের চেনা-পরিচিত মানুষদের কাছে বিক্রি করেছি। যাকে বলে পুশ সেল। হয়তো আমাদের একজন বন্ধুর একটি প্রতিষ্ঠানে ১০ জন কর্মী আছে। আমরা তাকে গিয়ে ধরেছি, আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য একটি করে টিকিট কিনতে হবে। গতবার আমরা লাভে ছিলাম না, উল্টো লোকসান গুনতে হয়েছে পঞ্চাশ হাজার টাকা। এবার আশা করি, নুহাশ পল্লীর বৈশাখী মেলাকে একটা লাভজনক জায়গায় দাঁড় করাতে পারবো। এতে স্কুলটার খুব উপকার হবে।

নুহাশ পল্লীতে প্রতি বছরই এরকম বৈশাখী মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামীতে এই মেলায় যোগ হবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী সহ আরো রকমারি নানা আয়োজন।

বাংলাদেশ সময় ২০৪৫, এপ্রিল ১৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।