তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাকি নেই বুঝি! যুক্তরাষ্ট্রকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে ফেলেছে উত্তর কোরিয়া। কারণ হলিউডের চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সনি এন্টারটেইনমেন্টের ওয়েবসাইট হ্যাক হওয়ার জন্য উত্তর কোরিয়াকে দায়ী করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
উত্তর কোরিয়া বিষয়টিকে সহজভাবে দেখবে না তা-ই স্বাভাবিক। দেশটি দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্থিতিতে পৌঁছেছে। আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোর অবরোধেও টলেনি। বরং সংগ্রামী মনোভাবকে জনতার মধ্যে বিস্তৃত করেছে এবং ফলাফল এমনই যে, মহাশূন্যে উপগ্রহ পাঠাতে পারছে। এটা পশ্চিমাদের দীর্ঘদিন ধরেই বিরক্ত ও বিব্রত করছে। এক কথায় বলা যায়, তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে। উনের দাদা কিম ইল সুং কোরিয়ার সংগ্রামের দরজা উন্মুক্ত করেছেন। উন সংগ্রামী চেতনাকে ভিত্তি দিচ্ছেন। আর পশ্চিমারা উনকে প্রদর্শন করছে খলনায়ক হিসেবে।

ছবিটি মুক্তি দেওয়ার অল্পকাল আগে সনির নিজস্ব ওয়েবসাইট হ্যাক হয়। এর মধ্যে ছবিটির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ফুটেজ ছিল। হ্যাক হওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি উত্তর কোরিয়ার দিকে আঙুল তোলে। কোরিয়াও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। তারা যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণের হুমকি দিয়েছে।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে ২০০ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে তুমুল আলোচিত ছবি ‘দ্য ইন্টারভিউ’। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষে এটি মুক্তি দিলো সনি এন্টারটেইনমেন্ট। ১১ ডিসেম্বর এটি মুক্তি দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি সাইবার হ্যাকে পড়ায় তা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্টরা।
‘দ্য ইন্টারভিউ’র ঘটনাপ্রবাহ
২২ নভেম্বর : সনির কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক হয়। হ্যাকাররা ই-মেইল ও তারকাদের ব্যক্তিগত নথি চুরি করে ফেলে।
৭ ডিসেম্বর : এই সাইবার আক্রমণের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে উত্তর কোরিয়া। তবে এই কার্যকলাপকে সমর্থন জানায় দেশটি।
১৬ ডিসেম্বর : গার্ডিয়ান্স অব পিস নামের একটি হ্যাকার দল হুমকি দেয়, ‘দ্য ইন্টারভিউ’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিলে ৯/১১ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে। এ কারণে নিউইয়র্কে আয়োজিত ছবিটির প্রিমিয়ার বাতিল করা হয়।
১৭ ডিসেম্বর : যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় পরিবেশকরা ছবিটি প্রদর্শনে অস্বীকৃতি জানায়। এ কারণে বড়দিনে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করে সনি।
১৯ ডিসেম্বর : প্রেসিডেন্ট ওবামা মন্তব্য করেন, মুক্তির পরিকল্পনা বাতিল করা সনির ভুল সিদ্ধান্ত।
২০ ডিসেম্বর : আমেরিকার সঙ্গে যৌথভাবে এই হ্যাকের ঘটনা অনুসন্ধানে কাজ করার প্রস্তাব রাখে উত্তর কোরিয়া। কিন্তু মার্কিন সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
২২ ডিসেম্বর : উত্তর কোরিয়ায় গুরুতর ইন্টারনেট বিভ্রাট দেখা দেয়। এ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায় আমেরিকা।
২৩ ডিসেম্বর : সনির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মত পাল্টে পরিকল্পনা করেন, বড়দিনেই সীমিত সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হবে ‘দ্য ইন্টারভিউ’।
২৫ ডিসেম্বর : আমেরিকার ২০০ প্রেক্ষাগৃহে ও অনলাইনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে ‘দ্য ইন্টারভিউ’।
দ্য ইন্টারভিউ
দৈর্ঘ্য : ১১২ মিনিট
ধরণ : অ্যাকশন-কমেডি
পরিচালক : ইভান গোল্ডবার্গ এবং সেথ রোজেন
আইএমডিবি রেটিং : ৯.৯/১০

ছবিটির পরিচালক ইভান গোল্ডবার্গ এবং সেথ রোজেন দু’জনেরই জš§ ১৯৮২ সালে। তারা ভ্যানকুভারে একই স্কুলে পড়তেন। ১৩ বছর বয়স থেকে চিত্রনাট্য লেখার কাজে যোগ দিয়েছেন। গোল্ডবার্গ দুটি ছবির পরিচালক (দিস ইজ দ্য এন্ড-২০১৩ এবং পাইনঅ্যাপেল এক্সপ্রেস-২০০৮), প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন এক ডজন ছবিতে আর লিখেছেন ১৩টি ছবির গল্প। আর রোজেন বেশি পরিচিত অভিনেতা হিসেবে। তিনি একই সঙ্গে লেখক, পরিচালক ও প্রযোজক। তাদের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আছে। গোল্ডবার্গ বলেন, ‘আমরা (তিনি ও রোজেন) আক্রমণ কৌশল হিসেবে সাইডকিক পছন্দ করি। আর মনে হয় তা বেশি কার্যকর। ’
ছবিতে উন চরিত্রটি করেছেন র্যান্ডেল পার্ক। তিনি একজন কোরীয় বংশোদ্ভুত আমেরিকান। তিনি অডিশন দেওয়ার পর গোল্ডবার্গ ও রোজেন একযোগে বলে উঠেছিলেন, ‘আর সবাইকে বিদায় করো। ’
ইন্টারভিউয়ের গল্পটি এমন- টেলিভিশনের জন্য ‘স্কাইলার্ক টুনাইট’ নামের একটি সেলিব্রেটি শো নির্মাণ ও উপস্থাপনা করেন ডেভ ও অ্যারন। শোয়ের একজন ভক্ত কিম জং উন। তারা তার একটি ইন্টারভিউ নিতে আগ্রহী হয় এবং পিয়ংইয়ং যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। সিআইএ বিষয়টি জানতে পেরে ডেভ আর অ্যারনকে গুপ্তহত্যা মিশনে ঢুকিয়ে দেয়।
অ্যারি আলেক্সায় তোলা ছবিটির শুটিং হয়েছে ভ্যানকুভার, ব্রিটিশ কলম্বিয়া ও কানাডায়। আইএমডিবির (ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজ) পর্যালোচকদের একজন বলেছেন, ছবিটি দেখতে ভালো। আরেকজন বলেছেন, বারাক ওবামা গ্যাঞ্জাম না বাঁধালে এ ছবি কে দেখতো? ব্যাপারটি তাই দর্শকদের ঘাড়েই বর্তাল। শেষ কথা, নিজ দায়িত্বে ‘দ্য ইন্টারভিউ’ দেখুন।
বাংলাদেশ সময় : ১৮৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৪