ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

তারার ফুল

আলোর মিছিলের একজন প্রাণপুরুষ

ববিতা (অতিথি লেখক) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪
আলোর মিছিলের একজন প্রাণপুরুষ (বাঁ থেকে) খলিলউল্ল্যাহ খান ও ববিতা

শক্তিমান অভিনেতা খলিলউল্ল্যাহ খান চিরবিদায় নিয়েছেন। প্রাণচঞ্চল মানুষটি ৮০ বছর বয়সে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

বাংলা চলচ্চিত্রের প্রাণপুরুষকে হারিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গন হারিয়েছে একজন অভিভাবক। বাংলা ও উর্দু মিলিয়ে খলিল প্রায় ৮০০ ছবিতে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে বিজয়ের মাসে ‘আলোর মিছিল’ ছবিটির কথা বিশেষভাবে বলা যায়। নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে। এতে ববিতার মামার চরিত্রে দেখা গেছে খলিলকে। প্রয়াত শিল্পীকে নিয়ে বাংলানিউজের কাছে স্মৃতিচারণ করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতা।

খলিলকে নিয়ে ববিতার স্মৃতিচারণ
প্রাণবন্ত হাস্যোজ্জল একজন মানুষ ছিলেন খলিল ভাই। আমরা ‘আলোর মিছিল’ ছবিতে একটানা তিন মাস কাজ করেছিলাম। এফডিসিতে তখন একটা মঞ্চ তৈরি করে কাজ হয়েছিল। ছবিটিতে খলিল ভাই চমৎকার অভিনয় করেছিলেন। আমার মনে হয়েছে, তার চরিত্রটি অন্য কেউ হয়তো এতো নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন না। প্রতিটি চরিত্র পৃথকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও খলিল ভাইয়ের চরিত্রটি ছিল ভিন্ন। অভিনয়ের দক্ষতা না থাকলে কেউ এতো সুন্দর কাজ দেখাতে পারেন না।


‘আলোর মিছিল’ ছবিতে ছিলো মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের গল্প। এখানে আলো চরিত্রে অভিনয় করেছি। মেয়েটা বেশ প্রাণবন্ত। রোজী আপা ও খলিল ভাই ছিলেন দম্পতি। অর্থাৎ তারা আলোর মামা-মামী। আলোই তাদের একমাত্র ভাগ্নি। পুরো পরিবারে খলিল ভাই একমাত্র আয় করতেন এবং গল্পের শেষ দিকে পরিবারের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য তিনি বিপথে চলে যান।

‘আলোর মিছিল’ ছবিতে সকাল হলে ‘চা গরম চা গরম’ বলে সবার ঘরে যেতাম। খলিল ভাইয়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা ছিলো দারুণ। আমার নাচ-গান কেমন শেখা হচ্ছে জানতে চাইতেন তিনি। দৃশ্যধারণের ফাঁকে আমাদের আড্ডা হতো, কথা হতো নানা বিষয়ে। অভিনয়ের বাইরে ক্যারিয়ার ও জীবনের নানা বিষয়ে আমরা কথা বলতাম। সহশিল্পী যখন এমন প্রাণবন্ত হয়, তখন ভালো কাজ করার স্পৃহা আপনাআপনি চলে আসে। এ ছবিতে অভিনয় করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি আমি।

খলিল ভাই আমুদে লোক ছিলেন। আমার বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হলেই তাকে দাওয়াত দিতাম। তিনি ছিলেন আমার অভিভাবকের মতো। আড্ডার ফাঁকে অনেক রসিকতা করতেন খলিল ভাই। আত্মীয়ের মতো সবসময় ফোনে খোঁজখবর নিতেন আমাদের। আমার হজ্বে যাওয়ার আগে তিনি ফোন করে বললেন, ‘হজ্বে গিয়ে সবার জন্য দোয়া করবেন। ’

খলিল ভাই কিছুদিন আগে অ্যাপোলো হাসপাতালে ছিলেন। আমি গিয়েছিলাম রক্ত পরীক্ষার জন্য। তখন জানতাম না, তিনি একই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে একজনের কাছে জানার পর তার সঙ্গে দেখা করতে যাই। আমাকে দেখে তিনি অনেক খুশি হয়ে বললেন, ‘আরে! আপনি আমাকে দেখতে চলে এসেছেন। আমি অনেক খুশি হয়েছি। ’

শুধু ‘আলোর মিছিল’ নয়, ‘বাঁদী থেকে বেগম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘সুখে থাকো’সহ অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি আমরা। আমার ক্যারিয়ারে ২৭৫-এর মতো ছবিতে কাজ করেছি, অনেক নায়ককে সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছি। কিন্তু খলিল ভাই, গোলাম মোস্তফা ভাই, শওকত আকবর ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিলো বেশি। আমাদের মধ্যে একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল।

খলিল ভাই আর অভিনয়ে ফিরতে পারেননি, এ বিষয়টি আমাকে পীড়া দিতো। নতুন ছবিতে আবার অভিনয় করতে চাইতেন তিনি। কিন্তু তার সেই আক্ষেপটা থেকেই গেলো চিরকালের জন্য। তবে খলিল ভাইদের মতো শিল্পীদের মৃত্যু হয় না। তিনি অমর হয়ে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে।

অনুলিখন : কামরুজ্জামান মিলু

বাংলাদেশ সময় : ১৭৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।