ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

তারার ফুল

বক্সার প্রিয়াঙ্কা চোপড়া

আফসানা রীপা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৪
বক্সার প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ‘মেরি কম’ ছবির দৃশ্যে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া

লাস্যময়ী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, পর্দায় যার রূপ দেখে ভক্তকুল বার বার তার প্রেমে পড়েন। এবার হাজির হয়েছেন তার অভিনীত সকল চরিত্র থেকে আলাদা একটি চরিত্রে।

‘বরফি’, ‘সাত খুন মাফ’ ও ‘কামিনে’ ছবিতে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে দেখা গিয়েছিলো তাকে। এই প্রথমবারের মতো একজন খেলোয়ারের ভূমিকায় অভিনয় করলেন পিগি চপস (প্রিয়াঙ্কার আদুরে নাম)। তবে যেন তেনো খেলোয়ার নয় একজন মহিলা বক্সারের ভূমিকায়।

অলিম্পিক পদকজয়ী বক্সার মেরি কমের জীবনিমুলক ছবি ‘মেরি কম’এ নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন প্রিয়াঙ্কা। অভিনেত্রী থেকে বক্সার রূপে নিজেকে গড়তে প্রতিনিয়ত কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হয়েছে তাকে। ছবির পরিচালক উমাঙ্গ কুমার অভিনেত্রীকে রিল্যাক্সিং টেকনিক শেখাতে ভাড়া করেছিলেন একজন সাইকো থেরাপিস্ট। শুধু শুটিংয়ের ফাঁকেই নয় প্রিয়াঙ্কা কাজ চলাকালীন সময় ছাড়াও ২৪ ঘন্টাই সেই সাইকোথেরাপিস্টের ব্যাবস্থা করেছিলেন। সঞ্জয় লীলা বানসালী প্রযোজিত ‘মেরি কম’ ছবিটি টরেন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবির প্রিমিয়ারের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে।

মুক্তির প্রথম দিনেই আয় করেছে ৭ কোটি রুপি। বাস্তব জীবনের মেরি কম চারবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন এমনকি অলিম্পিকে পদকও জিতেছেন তিনি। এতো পদক ও সম্মান পেয়েও সারাজীবনের রোজগারে ৭ কোটির ঘর ছুতে পারেননি মেরি কম। অথচ তার জীবন নিয়ে তৈরি হওয়া ছবি প্রথম দিনেই আয় করে ফেললো ৭ কোটি রুপি। এ তো গেলো প্রথম দিনের হিসাব আর এই চারদিনের আয়ের পরিমান শুনলে হয়তো মুর্ছা যাবেন তিনি। ছবিটি এপর্যন্ত সবমিলিয়ে আয় করেছে ৫০ কোটি রুপি। শুরু থেকেই সমীক্ষকরা ভাবছিলেন ছবিটি বেশ ভালো ব্যবসা করবে কিন্তু এতোটাও ভালো ব্যবসা করবে কেউ আশা করেনি।

এদিকে ‘মেরি কম’ মুক্তির তিনদিন পর ছবির কলাকুশলীদের জন্য এলো এক সুখবর। বক্সঅফিসে সফলতার সঙ্গে সঙ্গে ছবিটি পেয়েছে আরেক অনন্য স্বীকৃতি। ছবিটির ‘সালাম ইন্ডিয়া’ গানটি এশিয়ান গেমস-২০১৪ এর থিম সং হিসেবে ব্যবহৃত হবে। খুব স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছসিত গানটির সঙ্গীত পরিচালক শিবম পাঠক। শুধু তাই নয় এবারের এশিয়াডে বক্সিং খেলার সুযোগও পেতে পারেন মেরি কম।  

এতো সফলতার ভীড়ে বাস্তব মেরি কমের মনে একটি চাপা দুঃখ রয়েই গেলো। কেননা তার জীবনের উঁচু নীচু মোড়ের গল্প নিয়ে তৈরি ছবিটি। অথচ তার বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনরা দেখতে পারবেননা বলে। ‘মেরি কম’ ছবিটি মণিপুরের বক্সার মেরি কমের জীবন নিয়ে। অথচ মণিপুরের বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী রেভোলউশনারি পিপলস ফ্রন্টের (আরপিএফ) নিষেধাজ্ঞার জন্য তার জন্মভূমিতেই মুক্তি পেলোনা সেই ছবি। সারা ভারত জুড়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে ‘মেরি কম’-এর দাপট চললেও মণিপুরের মানুষেরা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি ছবিটি।

বলিউডের প্রতিটি ছবিকে লড়াই করতে হয় অন্য কোনো ছবির সঙ্গে। প্রিয়াঙ্কার ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম ছিলোনা। তাকেও লড়াই করতে হয়েছে অন্য একটি বলিউড ছবির সঙ্গে। তাও আবার নিজের বোনের ছবির সঙ্গে। হ্যাঁ পরিণীতি চোপড়ার কথাই বলছি। ২০১৩ সালের পর দুই বোন আবার প্রতিযোগীতার মুখে। এবার একই দিনে ছবি মুক্তি না পেলেও প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার ‘মেরি কম’ ও পরিণীতি চোপড়ার ‘দাওয়াত ই ইশক’ ছবি দুটির ট্রেলর একই দিনে রিলিজ হয়েছিলো। ঠিক একবছর আগেও একদিনে মুক্তি পেয়েছিলো প্রিয়াঙ্কার ‘জাঞ্জির’ ও পরিণীতির ‘শুধ দেশি রোমান্স’ ছবি দুটি। সেবার বড় বোনকে পিছনে ফেলে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলেন পরিণীতি। এবছর ১৯ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাবে তার চবি। দেখা যাক এবার কতটুকু সাফল্য পান তিনি।

‘মেরি কম’ ছবির গল্পে দেখা যাবে একটি ছোট্ট মেয়ে ধ্বংসস্তুপের মাঝ থেকে কুড়িয়ে পায় একটি বক্সিং গ্লাভস। আর সেই গ্লাভসকে ঘিরেই তার বক্সার হওয়ার স্বপ্ন তৈরি হতে থাকে। এরপর ধ্যানে জ্ঞানে শুধু বক্সি আর বক্সিং। এদিকে চেহারা নস্ট হয়ে গেলে মেয়েকে কেউ বিয়ে করবেনা ভেবে মেরি কমের বাবা মেয়েকে বক্সিং খেলতে দিতে চাননা। এরপর পরিবার ও বক্সিংয়ের মাঝ থেকে মেরি কম বক্সিংকেই বেছে নেন। এর মাঝেই প্রেম হয় তারপর বিয়ে। বিয়ের পরে জমজ সন্তানের মা হন মেরি। এরপর লাগাম লেগে যায় তার স্বপ্নে। কিন্তু সব বাঁধা বিপত্তি ঠেলে আবার ফিরে আসে বক্সিং রিংয়ে। আর এসকল বাঁধা বিপত্তি কি জানতে হলে দেখতে হবে ছবিটি।

ফ্যাশন, দোস্তানার মতো ছবিতে ৩২ বছর বয়সী প্রিয়াঙ্কার গ্লামারাস চরিত্রের সঙ্গে তার ‘মেরি কম’-এর চরিত্র মেলানো খুব কস্টকর। শুধু কি তাই ছবির একটি দৃশ্যের জন্য তাকে ন্যাড়া হয়ে হাজির হতে হয়েছে। ট্রেলারে প্রথম ঝলকে প্রিয়াঙ্কার পেশিবহুল হাত দেখে দর্শকরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন ঠিক তেমনভাবেই অবাক হয়েছিলেন তার ন্যাড়া রুপ দেখে। অদ্ভূদ হলেও প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছিলেন আপত্তি তো দুরে থাক তিনি নাকি একটু বেশিই উচ্ছসিত ছিলেন দৃশ্যটি নিয়ে। তিনিই বলেছিলেন, ‘আমি আগে একজন অভিনেত্রী আর অভিনেত্রী হিসেবে প্রথম দায়িত্ব এটাই যে আমি যেই চরিত্রেই অভিনয় করিনা কেন সেটার জন্য সর্বস্ব দিয়ে করা। আমার তার জন্য ন্যাড়া হতেও কোনো অসুবিধা নেই। ’

‘মেরি কম’ ছবিটি প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার কাছে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন একটি ছবি। বক্সার মেরি কম যতোটা না নিজের জীবনকে উপলব্ধি করেছেন তার চেয়ে বেশি উপলব্ধি করেছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। ছবিটি নিয়ে তিনি এতোটাই উচ্ছসিত ছিলেন যে প্রিয়াঙ্কার বাবা মারা যাওয়ার মাত্র চারদিন পরেই কষ্টকে লাগাম দিয়ে নেমে গিয়েছিলেন শুটিং করতে।

বাংলাদেশ সময় : ১৮৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।