ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

তারার ফুল

পুরনো ঠিকানায় রানা

খায়রুল বাসার নির্ঝর, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৪
পুরনো ঠিকানায় রানা এমএস রানা / ছবি: নূর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

এক সময় যারা একসঙ্গে গেয়েছেন, গিটার বাজিয়েছেন; এখন তারা আর কেউ নেই গানে। এমএস রানাও ছিলেন না।

অভিনয়, নাটক ও গান লেখা- সব অধ্যায় মাড়িয়ে তিনি আবার গানে ফিরে এসেছেন। তার পুরনো ঠিকানায়। আড্ডা হলো এসএস রানার সঙ্গে। তিনি শোনালেন তার গান-গল্প।

মন উদাস করা সন্ধ্যা নেমেছে। মিরপুরের তুরাগ পাড়ে নির্জনতার মিছিল। এই আবহ বুকে-কাঁধে নিয়ে একদল ছেলে প্রতিদিনই মাঝনদীতে নৌকা ভাসায়। তারা গলা ছেড়ে গান গায়, গিটার বাজায়, স্বপ্ন বোনে। এমএস রানাও সেই দলের একজন।

গল্পটি অনেক বছর আগের। রানার বয়স তখন কতইবা! সবে কলেজের বারান্দায় পা রেখেছেন। বয়স অল্প হলেও চিন্তায়, মননে এগিয়ে অনেক। এর আগে মাধ্যমিক পর্যায়েও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার অবাধ বিচরণ ছিলো। স্কাউটিং করতেন। সেই সূত্রে গান-বাজনা, লেখালেখি ছিলো নিয়মিত ব্যাপার। আলাপচারিতার বড় অংশ জুড়ে রানা ঘুরেফিরে তার স্কুলজীবনের কথাই টেনে এনে বললেন, ‘স্কাউটিং ছিলো আমার চর্চার সবচেয়ে বড় জায়গা। স্কুলের দলনেতা ছিলাম। তাই নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব ছিলো আমার ওপরেই। গান তো গাইতেই হতো। শেখার জায়গাটাও ছিলো। ছিলো সেই শিক্ষার প্রয়োগের সুযোগও। ’

ভালোবাসাটা তাই বেড়ে পর্বতসম হয়েছিলো। গান ছাড়া একমুহূর্ত চিন্তা করাও যেন অসম্ভব! সেটা নব্বই দশকের মাঝামাঝি। সারাদেশে তখন ব্যান্ডসঙ্গীতের জোয়ার। এক বন্ধু যুক্ত ছিলেন ব্যান্ডের সঙ্গে। রানা তার সঙ্গে ঘনিষ্ট হতে শুরু করলেন। তার সঙ্গে চলতে থাকলো গিটারটা আরও ভালো করে রপ্ত করার চেষ্টা। কলেজপড়ুয়া রানা হুট করে আরেকটি কাজ করে ফেললেন। কয়েক বন্ধু মিলে খুললেন ‘তারুণ্যের হাতছানি’। এটি ছিলো একটি একাডেমি; যেখানে শেখানো হতো গিটার, গান, তবলা, হারমোনিয়াম। ছিলো নাচ, অভিনয়, ছবি আঁকা শেখার সুযোগও।

একজন কলেজপড়ুয়া কিশোর এতকিছু করছে। রাত-দিন ডুবে থাকছে কিছু করার ভাবনায়। পরিবার থেকে কিন্তু আপত্তি ছিলো না একেবারেই। বললেন, ‘আমার বাবা ছিলেন সিআইডি অফিসার। পরিবার থেকে ‍শৃঙ্খলাবোধ শিখেছি। তাদের এতটুকু বিশ্বাস ছিলো যে, আমি যা-ই করি খারাপ কিছু করছি না। তাদের এ বিশ্বাসই আমাদের সবসময় এগিয়ে রেখেছে। ’

লেখাপড়ায় অবশ্য ঘাটতি পড়েছিলো এক সময়। ক্লাস এইটে এসে শুধরে নিয়েছিলেন নিজেকে। জানালেন সে কথাও, ‘ফলাফল খারাপ হতে হতে এক পর্যায়ে আমার ক্লাস রোল ঠেকেছিলো ২৪-এ। ’

তারপর সময় বয়ে গেছে। গানের রানা যুক্ত হয়েছেন গল্প-কবিতায়, নাটকে, উপন্যাসে, অভিনয়ে। দিন গেলেই সাংবাদিকতায় ব্যস্ততা বেড়েছে। বহুবছর পরে এসে রানা ভাবতে বসেছেন। আসলেই কী নিজের কিছু আছে তার? রানা বললেন, ‘গানের জন্য প্রচুর সময় দিয়েছি। এটা আমার সারাজীবনের স্বপ্ন। অনেক বছর পরে এসে হিসাব কষে দেখলাম, সবসময় তো অন্যের গানই গেয়েছি। আমার নিজের কোনো গান নেই!’

সেই আক্ষেপটা পূরণ হলো ‘একলা মন’ দিয়ে। হেলাল ওয়াদুদের লেখা, লুৎফর হাসানের সুর ও সুমন কল্যাণের সঙ্গীতায়োজনে গানটি এমএস রানার প্রথম গাওয়া গান যেটি রেকর্ড করা হয়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ‘ঝিনাই বন্ধু’ অ্যালবামে স্থান পায় এটি। এরপর তিনি গেয়েছেন ‘তোর জন্য’, ‘বৃষ্টি পড়ে’, ‘তোমার দু’টি হাত’, ‘রোড নম্বর এক’, ‘কেমন করে বলি’, ‘তোমার সুখের ছোঁয়া’, ‘দু’চোখের পাতায়’সহ বেশকিছু গান।

এখন এমএস রানার পরিকল্পনা হচ্ছে, তিনি একটি করে গান গাইবেন। সেটির ভিডিও তৈরি করে ছাড়বেন বাজারে। রানার যুক্তি, ‘এর মাধ্যমে প্রত্যেকটা গানের সঠিক যত্ন নেওয়া হয়। ’

আর পাইরেসি? ‘এজন্য আসলে শ্রোতাদের দোষ দেওয়া যাবে না। তারা এতবেশি প্রতারিত হয়েছে যে, এখন টাকা দিয়ে অ্যালবাম কিনতে ভয় পায়। আমাদের অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রোতাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি’-বললেন রানা।

আবার ফিরে যাওয়া যাক সেই তুরাগের তীরে। মাঝনদীর নৌকায়। সেই সময়ে যারা রানার সঙ্গে গলা মিলিয়ে গান গাইতেন। আজ তাদের কেউ প্রবাসী, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ পুরোদস্তর কর্পোরেট চাকুরিজীবী। গান তারা ছেড়েছেন অনেক আগেই। টিকে আছেন শুধু রানা। ২৪ না, গানে তার অবস্থান হোক শীর্ষে। রোল নম্বর হোক এক।

বাংলাদেশ সময় : ০১২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।