ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

তারার ফুল

হাবিবের কথা

মাঠ যতো বড় হবে খেলা ততো জমবে

কামরুজ্জামান মিলু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০১৪
মাঠ যতো বড় হবে খেলা ততো জমবে হাবিব ওয়াহিদ

এপারে অনেক বছর ধরেই শ্রোতাদের কানে ভালো লাগার গান শুনিয়ে আসছেন হাবিব ওয়াহিদ। তাই সবাই ধরেই নেন, প্রতিবারই নতুন স্বাদের সুর-সংগীত উপহার দেবেন তিনি।

শ্রোতাদের প্রত্যাশাকে চাপ হিসেবে না নিয়ে উপভোগই করেন জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পী। এখন ওপার বাংলাও ভাসছে তার সুরের মূর্ছনায়। ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে এক বিকেলে বাংলানিউজের সঙ্গে আড্ডা দিলেন তিনি।  

বাংলানিউজ :  ‘বিন্দাস’ ছবির জন্য গাইলেন। ওপার বাংলায় তো আপনার বন্দনা চলছে। অনুভূতি কী?
হাবিব : যে কোনো গান করার পর মানুষ পছন্দ করলে বা সাড়া পেলে ভলো লাগে। কিন্তু কলকাতার ছবিতে কাজ করার পর আরও বেশি ভালো লেগেছে। কারণ আমি ছোটবেলা থেকেই দুটো দেশকে নিয়ে ভাবতাম। কাজটার প্রস্তাব পাওয়ার পর মনে হয়েছে আমার জন্য সংগীতশিল্পী হিসেবে এটা ছিল ওপার বাংলা থেকে ভালোবাসার বার্তা।

বাংলানিউজ :  ভারতের বাংলার ছবির জন্য কাজ করার প্রস্তাব পেলেন কীভাবে?
হাবিব :  হঠাৎই। একদিন আমার ফোনে দেখলাম +৯১ কোডের একটি কল। বুঝলাম ভারত থেকে ফোন এসেছে। ওপ্রান্ত থেকে  বিন্দাস’ ছবির সংশ্লিষ্ট একজন বললেন, ‘আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই। আপনারই গাওয়া একটি গান নতুনভাবে রেকর্ড করতে চাই। ’ আমিও রাজি হলাম। কারণ আমাদের দুই বাংলার সংস্কৃতি প্রায় একই রকম।  

বাংলানিউজ :  পুরো অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো?
হাবিব :  এক কথায় বললে বেশ ভালো। কারণ গানটির জন্য বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি।

বাংলানিউজ :  গানটা শোনার পর নির্মাতাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া কি ছিলো?
হাবিব :  গানটির কাজ করে আসার পর নির্মাতারা কোনো সংশোধনী দেননি। তাতেই মনে হয়েছে গানটি ঠিকঠাক করতে পেরেছি।  

বাংলানিউজ :  তুলসী কুমারের গায়কী নিয়ে বলুন।  
হাবিব :  ন্যান্সির কণ্ঠ তুলসীর মতো হবে না। আবার তুলসীরটাও ন্যান্সির মতো নয়। দুটো দুই রকম। তবে তুলসী কুমারের কণ্ঠ ‘বিন্দাস’ ছবির অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর সঙ্গে মানিয়ে গেছে।  

বাংলানিউজ :  ‘বিন্দাস’-এর মাধ্যমে কলকাতার ছবিতে আপনার দরজা খুলে গেলো, প্রস্তাব পেলে নিয়মিত তাদের ছবিতে কাজ করবেন?
হাবিব :  ইচ্ছে তো আছেই। কারণ আমি মনে করি, সংগীতশিল্পীদের কোনো সীমান্ত থাকে না। বিভিন্ন দেশে কাজ করার সুযোগ পেলে অভিজ্ঞতার ঝুলি বড় হয়। আমার বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য।  

বাংলানিউজ :  কলকাতার ছবিতে কাজ করার পর এখান থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া পেলেন?
হাবিব :  এখানকার সবাই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বড়রা আশীর্বাদ করেছেন।

বাংলানিউজ :  এবারের রোজার ঈদে আপনার নতুন কোনো গান পেলো না শ্রোতারা। তারা তো আপনার নতুন গান শুনতে চায় নিয়মিত...
হাবিব : আমি সম্প্রতি দুটি ছবিতে গান করেছি। এর মধ্যে শিহাব শাহীনের ‘ছুয়ে দিলে মন’ এবং চ্যানেল আইয়ের ‘মন জানে না মনের ঠিকানা’ ছবিতে ন্যান্সির সঙ্গে গান গেয়েছি। শ্রোতারা এগুলো শিগগিরই হাতে পাবে আশা করছি।

বাংলানিউজ :  কিছুদিন আগে ক্রিকেট ও পরিবেশ বিষয়ক দুটি নতুন গান করেছেন। এগুলো কী অ্যালবামে দেওয়ার ইচ্ছে আছে?
হাবিব :  ক্রিকেট নিয়ে গানটিতে দেশাত্মবোধক বক্তব্য রয়েছে। এ রকম একে একে কয়েকটি গান জমছে। প্রাসঙ্গিক বা মানানসই মনে হলে আমার একক অ্যালবামে এগুলো রাখতে পারি।

বাংলানিউজ :  ‘কৃষ্ণ’, ‘মায়া’, ‘ময়না গো’ অ্যালবামে দেশের বেশ কয়েকজন বাউলের গান নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করে প্রশংসিত হয়েছেন। বলা যায় আপনার এই উদ্যোগের পর ফিউশনে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠেন অন্য শিল্পীরা। এ ধরনের কাজ কি আর করবেন না?
হাবিব :  মৌলিক গান নিয়েই আত্মপ্রকাশের ইচ্ছে ছিল আমার। তবে ফোকের প্রতি আমার দুর্বলতা অনেক। লোকগান হচ্ছে বাংলাদেশের শিকড়। এর বাইরে যা আছে তা আমাদের নিজের নয়। ফোক গান নিয়ে অ্যালবাম তৈরি ইচ্ছে আছে। বেশকিছু গান নির্বাচনও করেছিলাম অ্যালবামের জন্য। কিন্তু ৩-৪টি গানের স্রষ্টাকে খুঁজেই পাচ্ছিলাম না।

বাংলানিউজ :  বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানের বর্তমান অবস্থান মূল্যায়ন করুন।
হাবিব :  অবকাঠামোসহ নানা কারণে আমরা পিছিয়ে আছি। চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেশে মাত্র কয়েকটা সিনেপ্লেক্স আছে। আর ভারতে তো বেশকিছু জায়গায় ৫০-৬০টার বেশি সিনেপ্লেক্স আছে। আমাদের দেশে আরও ১০-১৫টি সিনেপ্লেক্স দরকার।

বাংলানিউজ :  গানের কোন শাখায় আশা দেখছেন এখন?
হাবিব :  আমি মনে করি, বাংলাদেশ এখন বিজ্ঞাপন শিল্পই এগোচ্ছে। তাই এখানেই বেশি কাজ করছি। আর দেশীয় সংগীতাঙ্গনে ২০০৮-০৯ পর্যন্ত ছিল সাফল্য ছিল। এরপর শুরু হয় ভরাডুবি। তবে চলচ্চিত্রের গানে সাফল্য আসবে বলে মনে হচ্ছে। দেখা যাক কি হয়।

বাংলানিউজ :  দেশের সংগীতাঙ্গনকে এগিয়ে নেওয়া যাবে?
হাবিব :  আমি তো গান নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বসেই আছি। মাঠ যতো বড় হবে খেলা ততো জমবে। আমার মনে হয়, কিছুদিন আগেও আমরা মাঠে ছিলাম। এখন সাইডলাইনে আছি। তবে এ অবস্থা থেকে উতরে উঠে ঠিকই আমরা সামনে এগিয়ে যাবো।

বাংলানিউজ :  হাবিবের গান তো অনেকে শোনে, হাবিব কাদের গান শোনে?
হাবিব :  এআর রহমানের গান শোনা হয় বেশি। আর ইন্টারনেটের সুবাদে যখন যা শুনতে ইচ্ছে করে সার্চ দিয়ে শুনি ও দেখি।

বাংলানিউজ :  আপনি বরাবরই একটু নিরিবিলি থাকেন। এটা কি আপনার সহজাত ব্যাপার? নাকি তারকা হওয়ার পর লোকারন্য এড়িয়ে চলতে অভ্যস্ত করে নিয়েছেন নিজেকে?
হাবিব :  তারকা হওয়ার পর নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করি। এর আগে ঘোরাফেরাসহ অনেক কিছু উপভোগ করতাম। এরকম ছিলাম না আমি। পরিচিতি পাওয়ার পর বিড়ম্বনা বেড়েছে। আমি ব্যক্তিগত কোনো কাজে বাইরে গেলেও ভক্তরা কথা বলতে ও ছবি তুলতে চান। এসবের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে অস্বস্তি লাগে। তাই সুযোগ পেলে দেশের বাইরে ঘুরতে যাই।

বাংলানিউজ :  আপনার ছেলে আলীম কি গান শোনে?
হাবিব :  আলিম মন দিয়ে গান শুনে কি-না জানি না। তবে দেখে বুঝি ভালো কোনো গান বাজলে বা ভালো লাগলে আটকে যায় তার মনোযোগ। গানের প্রতি আগ্রহ আছে ওর। আর এখন তো আইপ্যাড ছাড়া ওকে খাওয়ানোই যায় না!

বাংলাদেশ সময় :  ১৪০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।