ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

ভালোবাসার ঘর-সংসার

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১১
ভালোবাসার ঘর-সংসার

‘ভালোবাসা’ শব্দটি ছোট্ট কিন্তু বিশাল তার পরিধি। সব মানুষের জীবনেই ভালোবাসা আসে।

সব মানুষই ভালোবাসে। একজীবনে কত না ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি আমরা।

নারী-পুরুষের ভালোবাসার পরিণতি কি ঘর-সংসার? এ নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। আমরা সেই বাদানুবাদে যাব না। তারচে বরং চলুন শোবিজের এমন কিছু সেলিব্রিটি দম্পতির দিকে চোখ রাখি, যারা ভালোবেসে বিয়ে করেছেন এবং ভালোবাসা নিয়েই ঘর-সংসার করছেন। ভালোবাসা দিবসে বাংলানিউজ তাদের কাছে জানতে চেয়েছিল, ভালোবাসা সংজ্ঞা।

আলী যাকের-সারা যাকের : ঘরে-বাইরে পাশাপাশি

নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় হলো আলী যাকের ও সারা যাকের দম্পতির ভালোবাসার প্লাটফর্ম। নাগরিকের প্রতিষ্ঠা-পরবর্তী সময় থেকেই আলী যাকের জড়িত। দলের জন্য বিশ্বখ্যাত বিদেশী নাটকের বাংলা রূপান্তর আর নাটক নির্দেশনা, এসবের মধ্যেই ডুবে ছিলেন। ১৯৭৩ সালে নাগরিকে যোগ দেন সারা যাকের। চুপচাপ শান্ত স্বভাবের মেয়েটিকে শুরুতে চোখেই পড়েনি আলী যাকেরের। একটি নাটকের প্রদর্শনীর ঠিক আগের দিন একজন অভিনেত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে বিপদে পড়ে যায় দল। এ অবস্থায় সারা যাকের নিজে থেকেই এগিয়ে আসেন। আলী যাকেরের ওপর ভার পড়ে তাকে তৈরি করার। খুব দ্রুতই চরিত্রটিতে নিজেকে মানিয়ে নেন সারা যাকের। তার এই প্রতিভা মুগ্ধ করে আলী যাকেরকে। ১৯৭৫ সালের এই ঘটনার রেশ ধরেই আলী যাকের আর সারা যাকেরের কাছে আসা। দু বছর পর বিয়ে।

আমাদের শোবিজের আদর্শ দম্পতি আলী যাকের ও সারা যাকের। একসঙ্গে তারা থিয়েটার করছেন, পরিচালনা করছেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা। একসঙ্গেই অফিস আসেন, বেশির ভাগ দিন একসঙ্গেই ফেরেন। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই তারা পাশাপাশি।

ভালোবাসা সম্পর্কে আলী যাকের বললেন, অনেক রকম ভালোবাসা আছে। নারী-পুরুষের ভালোবাসা হলো মানসিক ও শরীরবৃত্তীয় রসায়ন, যা একে অন্যকে তীব্রভাবে আকর্ষণ করে। সারা যাকেরের মতে, ভালোবাসা হলো একে অন্যের প্রতি আস্থা আর বিশ্বাস। আর ভালোবাসার মূলমন্ত্র হলো, পারস্পরিক নির্ভরতা ও সহমর্মিতা।
 
 মৌসুমী-ওমর সানী : যুক্তিহীন অবোধ ভালোবাসা

আমাদের এই সময়ের চলচ্চিত্র জগতে মৌসুমী-ওমর সানী দম্পতিকে অনেকেই আদর্শ দম্পতি বলে থাকেন। তারকা দম্পতিদের মধ্যে সুখের সংসার কাটাচ্ছেন তারা। ১৯৯১ সালে চলচ্চিত্রে আসার পর মৌসুমী শুরুতে প্রয়াত নায়ক সালমান শাহের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন। এই জুটি ভেঙে যাওয়ার পর মৌসুমী জুটি বাঁধেন নায়ক ওমর সানীর সঙ্গে। প্রায় ৩০টি ছবিতে জুটি বেঁধে তারা অভিনয় করেন।

একসঙ্গে পাশাপাশি কাজ করার মাঝেই দুজনের ভালোবাসার সূচনা, পরবর্তীকালে বিয়ে  ও ঘর-সংসার । বিয়ের পর মৌসুমী অভিনয় চালিয়ে গেলেও ওমর সানী চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে আসেন। মৌসুমীকে ঘিরে দু-একবার গুঞ্জন শোনা গেলেও তাদের ভালোবাসার সংসার এখনো অটুট আছে।

কাকে বলে ভালোবাসা? জানতে চাইলে মৌসুমীর পাল্টা প্রশ্ন, কোন ভালেবাসার কথা বলবো? তিনি বলেন, ভালোবাসা তো অনেক রকম। সন্তানের প্রতি বাবা-মার ভালোবাসা, বাবা-মার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, ভাইবোনের ভালোবাসা, বন্ধুর প্রতি বন্ধুর ভালোবাসা, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা। ভালোবাসা আসলে সম্পর্কের বন্ধন। মৌসুমী আরো বললেন, ভালোবাসা এমন একটি বিষয় যার নির্দিষ্ট কোনো রূপ নেই। এটি পুরোপুরিই যুক্তিহীন ও অবোধ।

জাহিদ হাসান-সাদিয়া ইসলাম মৌ : ভালোবাসার অনুভূতি

একজন ছোটপর্দার তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা, অন্যজন তুমুল জনপ্রিয় মডেল ও নৃত্যশিল্পী। জাহিদ হাসান আর সাদিয়া ইসলাম মৌ বিয়ের আগে প্রেম করেছেন প্রায় দু বছর। তারপর পারিবারিকভাবেই বিয়ে। অবশ্য শুরুতে এই বিয়েতে মত ছিল না মৌ-এর পরিবারের। কিন্তু মৌ ততদিনে ঘরবাঁধার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। তাই সানাই বাজতে কোনো অসুবিধা হয়নি। বিয়ের কয়েক মাস পর মৌ শোবিজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন আর জাহিদ হাসান কাজ চালিয়ে যান সমানে। নাটকের পরিচালক হিসেবেও তিনি আত্মপ্রকাশ করেন। সম্প্রতি মৌ অবশ্য আবার মিডিয়ায় ফিরে এসেছেন। দুই সন্তানকে নিয়ে বেশ ভালোই দিন কাটাচ্ছেন তারা।

ভালোবাসা কী? উত্তরে জাহিদ হাসান বলেন, ভালোবাসা হচ্ছে অনুভূতি, যার অপর নাম প্রেম। ভালোবাসা অনেক রকম হলেও প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যকার সম্পর্কটিকেই আমরা ভালোবাসা বা প্রেম বলে মনে করি। একটা বয়স পার হবার পর সব মানুষই উন্মুখ থাকে ভালোবাসার জন্য। আমাদের দেশের সমাজ-বাস্তবতায় নারী-পুরুষের ভালোবাসা সাধারণত সংসার সাজানোর মধ্য দিয়ে পরিণতি খোঁজে। জাহিদ হাসান বললেন, ভালোবাসার মধ্যে আছি, ভালোবাসার মধ্যেই থাকতে চাই।

সাদিয়া ইসলাম মৌ ভালোবাসা সম্পর্কে বললেন, ভালোবাসা হলো তীব্র আকর্ষণ। এটি আসলে প্রকৃতিগত একটা ব্যপার।
 
তৌকীর আহমেদ-বিপাশা হায়াত : নির্ভেজাল সম্পর্কের বন্ধন

তারকা দম্পতি তৌকীর আহমেদ-বিপাশা হায়াত। নব্বইয়ের দশকে টিভিমিডিয়ার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে ক্রেজ ছিল তৌকীর আর বিপাশাকে নিয়ে। বহু জনপ্রিয় নাটকে তারা জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। কাজ করতে করতেই তারা একে অন্যের কাছাকাছি আসেন। একসময় টের পান, দুজনেই কখন যেন ভালোবাসার ফাঁদে আটকা পড়ে গেছেন। বিষয়টি শুরুর দিকে কেউ কারো কাছে প্রকাশ করেননি। বেশ কিছুদিন পর দুজন একসঙ্গেই জানান ভালোবাসার কথা। তারপর দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত হয় তাদের বহুল আলোচিত বিয়ে। বিয়ের পরও দুজনই মিডিয়ায় কাজ করছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তৌকীর আহমেদ নির্মাতা হিসেবেও সফল। আগের চেয়ে তুলনামূলক অভিনয় কম করছেন, নাট্যকার হিসেবে আলোচিত হয়েছেন। দুই সন্তানকে নিয়ে বর্তমানে তারা বাস করছেন সংসার নামের সুখগৃহে।

ভালোবাসা হলো নির্ভেজাল সম্পর্কের বন্ধন। বললেন তৌকীর আহমেদ। তিনি আরো বলেন, ভালোবাসা আছে বলেই  মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার প্রেরণা আছে। স্বপ্ন আছে।

বিপাশা হায়াত বললেন, ভালোবাসা হলো একে অন্যের প্রতি নির্ভরতা, পারস্পরিক বিশ্বাস আর সহমর্মিতা। পৃথিবীতে ভালোবাসা হলো সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশের সাধ্য আমার নেই। আমি চাই পৃথিবী হয়ে উঠুক ভালোবাসাময়।

তাহসান-মিথিলা : সুরে সুরে কাছে আসা

আমাদের শোবিজের মিষ্টি দম্পতি তাহসান-মিথিলা। ক্যাম্পাসে দুজনের পরিচয় হয়েছিল ২০০৪ সালে। গান নিয়ে কথাবার্তাই দুজনকে নিয়ে আসে হৃদয়ের কাছাকাছি। রিকশায় রিকশায় ঘুরে বেড়ানো আর এসএমএস বিনিময়ের মধ্য দিয়ে  দু বছর চলে তাদের প্রেম। এরপর সংসার সাজানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা। দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। তাহসান গান করেন বহুদিন। বিয়ের পর মধ্যরাতে একা একাই তাকে নিমগ্ন থাকতে হতো সুরে। এখন তার পাশে থাকেন মিথিলা।

মিথিলা মডেলিংয়ের পাশাপাশি গান করেন। গানের কথা লিখেও আনন্দ পান। এই ভালোবাসা দিবসে বের হওয়া ‘প্রত্যাবর্তন’ অ্যালবামের একাধিক গানের কথা লিখেছেন মিথিলা। পাশাপাশি একটি দ্বৈতগানেও তাহসানের সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন।

তাহসানের কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা জানতে চাইলে তিনি বললেন, ভালোবাসার সংজ্ঞা আমার জানা নেই। আমি মনে করি সত্যিকারের ভালোবাসা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্রতম সম্পর্ক। আমি ভালোবাসার গান গাইতে খুব পছন্দ করি। জীবনের শেষ দিনও যেন ভালোবাসার গান গেয়ে যেতে পারি।

মিথিলা বললেন, আবেগ-অনুভূতি-আস্থা সবকিছু মিলিয়েই ভালোবাসা। ভালোবাসার একটি বড় অধ্যায় হলো বিশ্বাস আর শ্রদ্ধাবোধ।

ফারুকী-তিশা : আবেগ আর দায়িত্ববোধ যেখানে পাশাপাশি

নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আর অভিনেত্রী তিশার মধ্যে প্রেম ছিল দীর্ঘ সাড়ে চার বছর। ২০০৫ সালের অক্টোবরে একটি নাটকের শুটিংয়ে ফারুকী তার অনুভূতির কথা তিশার কাছে প্রকাশ করেন। তবে প্রকাশ্যে তারা এই প্রেমের কথা স্বীকার করেননি কখনো, আবার অস্বীকারও করেননি। প্রেমের কথা উঠলেই তারা এড়িয়ে যেতেন। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত বছরের প্রথম দিকে তারা বিয়ের ঘোষণা দেন।

২০১০-এর ১৬ জুলাই দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। বিয়ে এই দম্পতির কর্মজগৎকে খুব একটা প্রভাবিত করেনি। বিয়ের দু দিন পরেই তিশা ছুটেছেন নাটকের শুটিংয়ে। ফারুকী তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। বিয়ের পর প্রায় সব দম্পতিই হানিমুনে গেলেও তাদের যাওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে তিশার ভাষ্য, সাড়ে চার বছর মেলামেশার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা চমৎকার। কাজেই একে অন্যকে বোঝার জন্য আমাদের হানিমুনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। স্যাটেল ম্যারেজ হলে প্রয়োজন হতো।

ফারুকীর কাছে ভালোবাসা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালোবাসা আসলে অস্থির একটা বিষয়। একেকসময় এটার রূপ ও ধরন একেকরকম। যেমন আমার কাছে বিয়ের আগে ভালোবাসা ছিল একরকম, আর বিয়ের পর হয়ে গেছে অন্যরকম। বিয়ের আগে ভালোবাসা ছিল বায়বীয়, বিয়ের পর পাল্টে গিয়ে হয়ে গেছে বস্তুগত।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বিয়ের আগে ভালোবাসায় আবেগটা থাকে বেশি আর বিয়ের পর অনেক দায়িত্ববোধ বেড়ে যায়।

কেমন চলছে আপনার সংসার? উত্তরে ফারুকী বললেন, ভালো-মন্দতে মিশানো। কারণ তিশার সঙ্গে আমার প্রায়ই ঝগড়া হয়। এটা মন্দ বিষয়। আর ভালো বিষয় হলো, এই ঝগড়া আমারা কেউ মনে রাখি না। পরের মুহূর্তে দুজনেই সব ভুলে যাই।

ভালোবাসা সম্পর্কে তিশা বললেন, ভালোবাসা এক ধরনের মানবিক অনুভূতি। প্রতিটি মানুষই জীবনের কোনো না কোনো সময় এটা অনুভব করে। বিয়ের আগের ভালোবাসা আর বিয়ের পরের ভালোবাসার মধ্যে আমি কোনো পার্থক্য আছে কিনা আমি জানি না। আমার কাছে ভালোবাসা একরকমই আছে।

বাংলাদেশ সময় ১৪২৪, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।