ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

মাটির ময়নার আনু ও কিছু প্রশ্ন!

রাজু রহমান (অতিথি লেখক) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৩
মাটির ময়নার আনু ও কিছু প্রশ্ন!

‘মাটির ময়না’ বাংলাদেশি প্রথম চলচ্চিত্র যা কান চলচ্চিত্রে উৎসবে ‘ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট’ পুরস্কার জিতে নেয়। এ চলচ্চিত্রে অভিনয় শৈলীর মাধ্যমে দর্শক হৃদয়ে দাগ কেটেছিল ‘আনু’ চরিত্রটি।

শিশু শিল্পী আনুর প্রকৃত নাম নুরুল ইসলাম বাবলু। ‘মাটির ময়না’র মুক্তির এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও আর কোন চলচ্চিত্র কিংবা নাটকে দেখা যায়নি সেই আনুকে। মাটির ময়না চলচ্চিত্র দিয়ে মিডিয়া পাড়ায় অভিষেক হয়েছিল বাবলুর। অভিষেকের পরই বাবলু যেন হারিয়ে গেল মিডিয়া থেকে।

মাটি খুঁড়ে প্রতিভা বের করা ছিল তারেক মাসুদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তেমনি করে তারেক মাসুদ আবিষ্কার করেছিলেন নুরুল ইসলাম বাবলুর প্রতিভা। কিন্তু এই প্রতিভা স্বল্প সময়েই হারিয়ে গেল রূপালি পর্দা থেকে।

বাবলুর কি যোগ্যতা বা দক্ষতা ছিল না অন্য কোন চলচ্চিত্র বা ছোট পর্দায় কাজ করার মত? নাকি আমাদের নির্মাতারা বাবলুকে দিয়ে অভিনয় করানোর মত কোন কাজ করতে পারেনি? নাকি প্রতিভাবানদের নিয়মই হারিয়ে যাওয়া? কোনটা সঠিক ?

ভুল এবং সঠিক এর বিতর্ক থেকে বাইরে এসে তাকাই নুরুল ইসলাম বাবলুর দিকে, বর্তমানে কি অবস্থায় আছে বাবলু, কি করছেন বাবলু?

সদ্য কৈশোর পেরুনো বাবলু, মাটির ময়নায় কাজ করার সুবাদে তারেক মাসুদের তত্ত্বাবধানেই ছিলেন। কাজ করেছেন তারেক মাসুদের ইউনিটে, তবে অভিনেতা হিসেবে নয়। তারেক মাসুদ তার বিভিন্ন কাজে সব সময় নিজ সন্তানের মত আগলে রেখেছেন বাবলুকে। কিন্তু আর কোন চলচ্চিত্রে অভিনয় করান নি! কেন? এই প্রশ্নের উত্তর অজানাই থেকে যায়।

তারেক মাসুদের আকস্মিক চলে যাওয়ায় বাবলুও হারিয়ে যায়। মিডিয়ার কোন কাজেই এখন নেই বাবলু। ঢাকা ছেড়ে ফিরে গিয়েছেন আপন নিবাস নোয়াখালীতে। বাবলু প্রায় বছর খানেক যাবৎ ঢাকা ছেড়েছেন। তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাবলু কিছুদিন বাদেই তার বাবার দোকান দেখাশোনার কাজে যোগ দেবেন। এই কি নিয়তি? এত মেধা থাকার পরেও বাবলুর জায়গা হবে মুদি দোকান?

মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হয় বাবলুর সাথে। তার কথার ভেতর ছিল চাপা ক্ষোভ। কতিপয় নির্মাতা বাবলুর সাথে যোগাযোগ করেছিলেন বটে কিন্তু সেটা তেমন উল্লেখযোগ্য কোন কাজ ছিল না। তাই বাবলুও ধীরে ধীরে সরে দাঁড়িয়েছেন। উপযুক্ত কাজ না পাওয়া বাবলুকে করেছে হতাশ আর হতাশায় ভর করে বাবলু ভিড়েছে হারিয়ে যাওয়ার দলে।

প্রতিটি দেশের শিল্পী সত্ত্বাকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় দেশের সংস্কৃতিকে বাঁচানোর জন্য। গোটা পৃথিবী জুড়ে শিল্পীর সঠিক মূল্যায়ন থাকলেও শুধুমাত্র আমাদের দেশেই ব্যাতিক্রম। মরণোত্তর পদক দেওয়া ছাড়া এদেশের শিল্পীদের জন্য সরকারের যেন আর কোন দায়বদ্ধতা নেই। আমরা কেন আমাদের শিল্পী সমাজকে অবমূল্যায়নের মাধ্যমে ধ্বংস করে ফেলি?
এর কোন উত্তর নেই।

আমাদের অবমূল্যায়নের কারণেই অকালে ঝরে যায় অসীম ক্ষমতাধর শিল্পী। এটা কি আমাদের ব্যার্থতা নয়? পাশের দেশ ভারতের মিডিয়ার কথাই ধরা যাক, এক সময়কার শিশুশিল্পীরাই বর্তমানে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিচ্ছে । সেখানে আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো?

বাংলাদেশ সময় : ১৫১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৩
জিআর/বিএসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।