ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

গানের পিতা, সুরের পুত্র

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১০
গানের পিতা, সুরের পুত্র

ফেরদৌস ওয়াহিদ আর হাবিব ওয়াহিদ, পিতা-পুত্র সমানে কাজ করে আমাদের গানের জগতকে করে চলেছেন সমৃদ্ধ। এ প্রজন্ম আর সেই প্রজন্ম, এক পরিবারে বাংলা গানের দুই প্রজন্মের জনপ্রিয় দুই প্রতিনিধি ।

সম্প্রতি বাংলানিউজের আমন্ত্রণে মুখোমুখি বসেছিলেন তারা।

‘এমন একটা মা দে না...’ বা ‘আগে যদি জানতাম...’ এমনই নতুনধারার গান দিয়ে সত্তরের দশকে চমক তৈরি করেছিলেন ফেরদৌস ওয়াহিদ। বাংলাদেশে পপগান বিকাশে তার রয়েছে অবদান। তিন দশক পর ফেরদৌস ওয়াহিদেরই যোগ্য সন্তান হাবিব ওয়াহিদ তৈরি করেছেন আরেক নতুন ধারা। প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের সুরের মিশ্রণে বাংলা গানকে এগিয়ে নিয়েছেন আরও একধাপ।

শুরুতে বাবা ফেরদৌস ওয়াহিদের বলার পালা। ছেলে হাবিব সম্পর্কে তার মন্তব্য হলো, হি ইজ কমপ্লিট মিউজিশিয়ান। তিনি বললেন, সুরের মধ্যেই হাবিবের জন্ম। সুরের মধ্যেই বেড়ে ওঠা। আমি গান নিয়ে ছিলাম। ছেলের দিকে সেভাবে মনোযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি। হাবিব যা শিখেছে, তা নিজে নিজেই। তার মিউজিশিয়ান হয়ে ওঠার পেছনে আমার কোনও অবদান নেই।

বাবার কথা অবশ্য মানতে নারাজ হাবিব। তিনি বললেন, আমি যদি ফেরদৌস ওয়াহিদের সন্তান না হতাম তাহলে গান যে কতটা ভালোবাসার জিনিস তা কখনো উপলব্ধি করতে পারতাম না। গানের প্রতি বাবার ভালোবাসাই আমার ভেতর চলে এসেছে। বাবা ফেরদৌস ওয়াহিদ সম্পর্কে হাবিবের মন্তব্য, আমার বাবা যে মাপের গায়ক তার যোগ্য মূল্যায়ন এখনো পাননি।

বাবা-সন্তানের মধ্যে মিল থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ফেরদৌস ওয়াহিদ ও হাবিব ওয়াহিদের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। ফেরদৌস ওয়াহিদ কথা বলেন দরাজ কন্ঠে। যে কোনও পরিবেশ মুহূর্তে জমিয়ে ফেলেন। হয়ে ওঠেন মধ্যমণি। অন্যদিকে হাবিব মুখচোরা স্বভাবের। কথা বলার চেয়ে শুনতে বেশি পছন্দ করেন। পরিচিত মানুষ ছাড়া জমিয়ে আড্ডা দিতে মোটেও স্বাচ্ছন্দ্য পান না।

ফেরদৌস ওয়াহিদ সকাল সকাল বিছানা ছাড়েন। সকালের দিকেই যা একটু গান নিয়ে চর্চা করেন। হাবিবের পছন্দ রাত জেগে কাজ করা। সারারাত স্টুডিওতে মিউজিক নিয়ে ঘাটাঘাটি। ভোরের আজান তাকে মনে করিয়ে দেয়, এবার বিছানায় যাবার সময় হলো। বিছানা ছাড়তে ছাড়তে হাবিবের বেলা ১২টা পার হয়ে যায়।

ফেরদৌস ওয়াহিদ যে কোনও পরিবেশেই গান গাইতে পারেন। মিউজিক ছাড়া গান গাইতেও তার অসুবিধা হয় না। অন্যদিকে হাবিবের কানে আগে মিউজিক ঢুকতে হবে, তারপর তার কণ্ঠ থেকে গান বের হবে। ফেরদৌস ওয়াহিদ আপাদমস্তক একজন গায়ক। হাবিব আগে মিউজিশিয়ান, তারপর গায়ক।

কেমন হচ্ছে এই সময়ের গান? ফেরদৌস ওয়াহিদ বললেন, আমি নতুন প্রজন্মের শিল্পী ও সুরকারদের কাজ দেখে সত্যিই চমকিত। তারা সুর নিয়ে এমন ভাঙচুর করছে, যা করার সাহস আমাদের ছিল না। আমার প্রচলিত সুরের সঙ্গে কিছু ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক যোগ করে গান করতাম। ওটাই অনেকে সহজভাবে গ্রহণ করত না। নতুন প্রজন্মের মিউজিশিয়ানরা দেশ-বিদেশের সুরের মিশ্রণে বাংলা গান নিয়ে যা করছে, তা তুলনাহীন। তারা বুঝে শুনে যা করছে, তাই কাজটা ভালো হচ্ছে। তাছাড়া ওদের সামনে তো আহরণের সুযোগ অবারিত। ইন্টারনেট-অনলাইনের মাধ্যমে ল্যাটিন আমেরিকান বা আফ্রিকান মিউজিক ওরা নিয়মিত শুনছে। আমাদের সময় তো সেই সুযোগ ছিল না। সামনে ছিল বড়জোর বব ডিলান আর এলভিস প্রিসলি। তাদের একটা গ্রামোফোনের রেকর্ড পেলে আমরা হাতে আকাশের চাঁদ পেতাম।

এই সময়ের গান সম্পর্কে হাবিব বললেন, মাঝে আমাদের গানের জগতে কিছুটা অস্থিরতা বিরাজ করেছিল। অনেকেই গান নিয়ে এক্সপেরিমেন্টকে ভালোভাবে নেননি।   অবশ্য এক্সপেরিমেন্টের ফলে ভালো কিছু কাজ হওয়ায় অনেক সমালোচনা বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু ভালো শিল্পী এবং সঙ্গীত পরিচালকের কারণে আমাদের সঙ্গীত এখন ভালোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। তবে পাইরেসির কারণে আমাদের অডিও ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা শোচনীয়। পাইরেসির ব্যাপারে খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ দরকার।

অভিযোগ আছে, হাবিব ওয়াহিদ কাজের েেত্র মাত্রাতিরিক্ত পারিশ্রমিক নেন। এ কারণে অনেক নতুন শিল্পীই হাবিবের সঙ্গে কাজের সুযোগ পান না। এই প্রশ্নের উত্তরে হাবিব ওয়াহিদ বললেন, ‘প্রতিটি মানুষেরই জীবনধারণের জন্য একটা পেশা বেছে নিতে হয়। ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্য তার প্রয়োজন হয় ভালো আয়ের। আয় ভালো না হলে মন দিয়ে কাজ করা কঠিন। মাথায় অর্থনৈতিক চিন্তা নিয়ে কখনো ভালো কাজ করা যায় না। তাছাড়া আমি দশটা কাজ না করে যদি একটা কাজ সময় নিয়ে মন দিয়ে করি তাহলে কাজটা ভালো হয়। আর এ কারণেই পারিশ্রমিকের হার একটু বেশি পড়ে যায়।   হাবিবের কথার সঙ্গে ফেরদৌস ওয়াহিদ যোগ করলেন, আমার ছেলে আবার নিজের আয়ে নিজে চলতে চায়। ছাত্রজীবন থেকেই এটা ওর স্বভাব। তার পরিশ্রম করে নিজের আয়ে চলাটাকে আমি সবসময় এপ্রিশিয়েট করি।

কী করছেন এ মুহূর্তে? ফেরদৌস ওয়াহিদ বললেন, হাবিব আমার পুরনো কিছু গানের রিমেক করছে। কয়েকটি গানের ভয়েস দিয়েছি। কিন্তু হাবিবের পছন্দ হয়নি। নতুন করে ভয়েস দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

হাবিব জানালেন, আসছে ভ্যালেন্টাইন ডে-তে কিছু নতুন শিল্পীকে নিয়ে একটি মিক্সড অ্যালবামের কাজ করার পাশাপাশি একটি সিনেমার প্লে-ব্যাকের মিউজিক ট্র্যাক তৈরি করছেন।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৪০৫, নভেম্বর ২৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।