ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

বিশ্বে এখন শাকিরা-জ্বর!

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১০
বিশ্বে এখন শাকিরা-জ্বর!

ওয়াকা ওয়াকা বিশ্বকাপ থিমসং দিয়ে লাতিন আমেরিকান পপ সেনসেশন শাকিরা আবারো ঝড় তুলেছেন বিশ্বজুড়ে। বলা যায়, বিশ্ব এখন শাকিরা-জ্বরে আক্রান্ত।

এরপরই নকলের অভিযোগে তাকে বিতর্কের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেন ডমিনিকান সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক উইলফেড্রো ভার্গাস। তিনি অভিযোগ তোলেন, ১৯৮২ সালে তার কম্পোজ করা এল নেগ্রো নো পিউডি গানের সুর চুরি করে এবারের বিশ্বকাপের থিমসং তৈরি করেছেন শাকিরা। ভার্গাস শাকিরার বিরুদ্ধে ১১ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৭৭ কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করার হুমকি দেন। এ বিষয়ে শাকিরা প্রতিবাদ করার আগেই গর্জে উঠেছে তার সঙ্গে ওয়াকা ওয়াকা-তে পারফর্ম করা সাউথ আফ্রিকান ব্যান্ড ফ্রেশলি গ্রাউন্ড। ব্যান্ডের মুখপাত্র সামান্থা রিউ বলছেন, এই সুরটি কারো ব্যক্তিগত কম্পোজিশন নয়। ১৯৮৬ সালে ক্যামেরিয়ন মিউজিক্যাল গ্রুপ গোল্ডেন সাউন্ডসের জংগলওয়া গানটির কম্পোজিশনের কপিরাইট নিয়েই ওয়াকা ওয়াকা তৈরি করেছেন শাকিরা। গোল্ডেন সাউন্ডস ঘোষণা করেছে, তাদের গানের মূল সুর নেয়া হয়েছে মিডল আফ্রিকান নেটিভ কান্ট্রি সং থেকে। এই বক্তব্যের পক্ষে তথ্য-প্রমাণও তাদের হাতে আছে। কাজেই শাকিরার বিরুদ্ধে উইলফেড্রো ভার্গাসের অভিযোগ হালে পানি পায়নি।

কলম্বিয়ান পপতারকা শাকিরা এরই মাঝে ওয়াকা ওয়াকার অন্যতম মিউজিশিয়ান ভারতীয় দুই ভাই সেলিম-সুলাইমানের সঙ্গে বলিউডের একটি ছবির প্লেব্যাকে কণ্ঠ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন। চাক দে ইন্ডিয়া ছবির ক্যাবার মিউজিক হিসেবে শাকিরার গানটি ব্যবহার করা হবে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি নাগাদ গানটি রেকর্ডিংয়ের জন্য মুম্বাই আসছেন শাকিরা।

শাকিরা যেভাবে শাকিরা  

আজকের বিশ্বজয়ী পপগায়িকা শাকিরার পুরো নাম শাকিরা ইসাবেল মেবারক রিপল। কলম্বিয়ার বাণিজ্যিক নগরী বারানকুইলোতে ১৯৭৭ সালের ০২ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। বাবা উইলিয়াম মেবারক সাদি আর মা নিদিয়া ডেল কারমেন রিপল মেয়ের ঝোঁক বুঝে তাকে গান শেখানো শুরু করেন খুব ছোটবেলায়। মাত্র চার বছর বয়সে শাকিরা বেলিড্যান্স পারফর্ম করতে স্টেজে ওঠেন। এই বয়সেই একদিন গোলাপফুল নিয়ে দ্য ক্রিস্টাল রোজ নামে একটা কবিতা লিখে বাবা-মাকে তাক লাগিয়ে দেন। ৭ বছর বয়সে ক্রিসমাসের উপহার হিসেবে বাবার কাছ থেকে টাইপরাইটার উপহার পান। টাইপরাইটারে চলতে থাকে তার কাব্যচর্চা। ১০ বছর বয়সেই শাকিরা উপলব্ধি করেন গান তার প্রাণের সঙ্গে মিশে আছে। মেয়ের এই উপলব্ধি বিশ্বাস করে বাবা-মা তাকে সত্যিকারের শিল্পী হতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। ১২ বছর বয়সে শাকিরা নজর কাড়েন স্থানীয় থিয়েটার প্রযোজক মনিকা আরিজার। এইটুকু মেয়ের মাঝে প্রতিভার তীব্র ঝলকানি দেখে তিনি সনি কলম্বিয়ার প্রধান কর্মকর্তা কাইরো ভার্গাসের কাছে তাকে নিয়ে যান। অডিশনেই ছোট্ট শাকিরা সবাইকে এতোটাই মুগ্ধ করেন যে সনির সঙ্গে তার তিনটি অ্যালবাম প্রকাশের বিষয়ে চুক্তি হয়ে যায়। তারপর আর কী...প্রথমে মাতৃভূমি কলম্বিয়া জয়, অতঃপর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া।

১৯৯১ সালে ১৪ বছর বয়সে বের হয় শাকিরার প্রথম অ্যালবাম। ১৯৯৩ সালে বের হয় দ্বিতীয় অ্যালবাম। ১৯৯৫ সালে বের হওয়া তার তৃতীয় অ্যালবাম পিস ডেসক্যালেজোস তাকে লাতিন আমেরিকা ও স্পেনে জনপ্রিয় করে তোলে। হোয়েন এভার হোয়ার এভার গানটি দিয়ে শাকিরা ঝড় তোলেন দেশে দেশে। ২০০১ সালে বের হওয়া লন্ড্রি সার্ভিস অ্যালবামের গান এটি। অ্যালবামটি ১৩ মিলিয়ন কপি বিক্রির নতুন রেকর্ড তৈরি করে। ২০০৫ সালে প্রকাশিত ফিক্সেশন ওরাল ওয়ান আর টু-তেও সাফল্যের ধারা বজায় থাকে। ২০০৯ সালের অক্টোবরে বের হওয়া তার সর্বশেষ অ্যালবাম সি উলফ আরেকবার কাঁপিয়ে দেয় বিশ্ব। আর বিশ্বকাপের থিম সং ওয়াকা ওয়াকা দিয়ে শাকিরা নাচিয়েছেন বিশ্ববাসীকে।

লাতিন পপ, রক, পপরক ও অল্টারনেটিভ মিউজিক শাকিরার নিজস্ব ঘরানা। তবে কাসিক আর ফিউশনেও তিনি সমান দক্ষ। সর্পিল বিভঙ্গির নৃত্য তার গানের অলঙ্কার। একাধারে শারিকা গায়িকা, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, নৃত্যশিল্পী এবং বাদ্যযন্ত্রবাদক। মানবতাবাদী এই গায়িকা শিশুদের জন্য এমন কিছু করতে চান, যাতে করে সব যুগের শিশুরা তাকে মনে রাখে। ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত শাকিরা বিশ্বের ৫০ জন দানবীর তারকাদের অন্যতম। মানবকল্যাণে তিনি প্রতি বছর দান করেন ৫৫ হাজার ইউএস ডলার, বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় চার কোটি টাকা। নিজের দেশের শিশুদের কল্যাণের জন্য তিনি গঠন করেছেন পিস ডেসক্যালজোস ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শাকিরা তার ৩২তম জন্মদিনে নিজ শহর বারানকুইলাতে ৬০ লাখ ডলার ব্যয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি ফ্রি স্কুল। কলম্বিয়ার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এ শিল্পী একাধিকবার পেয়েছেন গ্রামি ও গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড। বিশ্বসেরা পপগায়িকা শাকিরা ২০০৭ সালে ভয়াবহ সাইকোন সিডরের পর বাংলাদেশে এসেছিলেন তিন দিনের সফরে। সিডরবিধ্বস্ত অসহায় মানুষদের মধ্যে ইউনিসেফের পক্ষে তিনি ত্রাণ বিতরণে অংশ নেন।

মানবতাবাদী শিল্পী শাকিরা বিয়ে নামক সামাজিক বন্ধনে বিশ্বাসী নন। মানসিক বন্ধনটাই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ২০০০ সাল থেকে  আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্নেন্দো ডেলার ছেলে অ্যান্টেনিও ডেলা বয়রার সঙ্গে মানসিকভাবে জড়িয়ে যান শাকিরা। ২০০৭ সালে এই প্রণয়ের কথা স্বীকার করে নেন। ২০০৯ সালে তাদের বিয়ের গুঞ্জন উঠলে এক বিবৃতিতে শাকিরা বলেন, আমরা বিয়ে করিনি। তবে নয় বছর ধরে একসঙ্গে বাস করছি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমি মা হতে উদগ্রীব। শিগগিরই আমি সন্তান চাই। সন্তানের মা হওয়ার জন্য বিয়ের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

শাকিরা স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন বাহামায় । নিজ দেশে যিনি দেবীর মর্যাদা পেয়েছেন, তিনি কেনো প্রবাসী? শাকিরা মনে করেন সমগ্র বিশ্বই তার স্বদেশ। কাজেই তার কাছে কলম্বিয়া, বাহামা বা বাংলাদেশ সবই সমান।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮১৫, জুলাই ০৪, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad