ঢাকা, বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

প্রত্যেক মানুষের জীবনে প্রেম থাকা জরুরি: মন্দিরা

নাজমুল আহসান তালুকদার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৪
প্রত্যেক মানুষের জীবনে প্রেম থাকা জরুরি: মন্দিরা মন্দিরা চক্রবর্তী

ছোটবেলা থেকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে নিজেকে বিকশিত করে আসছিলেন মন্দিরা চক্রবর্তী। কত্থক নাচের জন্য পেয়েছেন তিনবার জাতীয় পুরস্কার।

২০১২ সালে নৃত্য প্রতিভা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ‘সেরা নাচিয়ে’তে অংশ নিয়ে হয়েছিলেন রানার্স আপ। এরপর নাচের পাশাপাশি নাটক ও বিজ্ঞাপনে কাজ করে আসছিলেন। এই পর্ব পেরিয়ে নাম লিখিয়েছেন চলচ্চিত্রে। অভিষেক চলচ্চিত্রেই পেয়েছেন নাম চরিত্র আর ‘মনপুরা’খ্যাত নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমকে। এই নির্মাতার ‘কাজল রেখা’র পর যুক্ত হয়েছেন ‘নীল চক্র’-এ। সমসাময়িক কাজ ও নানা প্রসঙ্গে এই নবাগত নায়িকা কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে।

বাংলানিউজ: ৪০০ বছর আগের একটি ক্লাসিক রূপকথাভিত্তিক ময়মনসিংহ গীতিকায় নির্মিত ‘কাজল রেখা’য় যুক্ত হলেন কীভাবে?
মন্দিরা: সেলিম ভাইয়ের (গিয়াস উদ্দিন সেলিম) সঙ্গে একটা নাটকে কাজ করেছিলাম, সেখানেই আমাদের দেখা। এই টিমের প্রডাকশন ম্যানেজার আমাকে কাজল রেখা বলে ডাকতেন, তখনও আমি জানতাম না এটা কী? পরে জানলাম, সেলিম ভাইয়ের একটা বড় প্রজেক্ট এটা। তখন জানার চেষ্টা করলাম, আমাকে কেন কাজল রেখা বলে ডাকা হচ্ছে? পরে জানতে পারলাম, আমার মধ্যে কাজল রেখার ব্যাপারটা রয়েছে। নাটকটির কাজ শেষ হওয়ার বেশ কিছুদিন পর আমার অডিশন নেওয়া হয়। তারপর আমাকে জানানো হয়- আমি ‘কাজল রেখা’য় নাম ভূমিকায় কাজ করছি। এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া, স্বপ্নের মতো ছিল।

বাংলানিউজ: সিনেমাটিতে কাজ শুরু আগে ময়মনসিংহ গীতিকা সম্পর্কে ধারণা ছিল?
মন্দিরা: আমি এ সম্পর্কে জানতাম, কারণ মায়ের কাছে গল্প শুনেছি। তবে গল্প শোনা একরকম, আর নিজে যখন তেমন একটি চরিত্রে কাজ করলাম তখন অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করলাম। শুটিং করার সময় মনে হয়েছে, চোখের সামনে যেন সব দেখতে পারছি আর আমার সঙ্গেই মনে হয় ব্যাপারটি ঘটছে।  

বাংলানিউজ: গিয়াস উদ্দিন সেলিমের নির্দেশনায় শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
মন্দিরা:
শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা দুর্দান্ত। প্রথম প্রথম শুটিংয়ে যাই বেশ নার্ভাস ছিলাম। কারণ সেলিম ভাই এত বড় একজন নির্মাতা আর সবচেয়ে জুনিয়র ছিলাম ওখানে। বারবার ভাবছিলাম- কীভাবে শুটিং শুরু করব, কী হবে, ভুল করলে কি বকা দেবে বা সবার সামনে ইনসাল্ট ফিল হবে- এই ব্যাপারগুলো অলওয়েজ মাথায় ঘুরত। কিন্তু যখন শুটিং শুরু হলো, দেখলাম খুব সুন্দরভাবেই সব চলছে, আমিও কাজল রেখার চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গিয়েছি। একটা সময় গিয়ে মনে হতো পরিবারের সঙ্গে আছি।  

বাংলানিউজ: সহশিল্পীদের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?
মন্দিরা:
শুটিংয়ে শরিফুল রাজ, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা আপু, ইরেশ যাকের ভাইসহ আরও অনেকে ছিলেন। তারা আমাকে এতটাই সহযোগিতা করেছে, যতটা আমি আশাই করিনি। অফস্ক্রিনে মিথিলা আপু ছোট বোনের মতো আদর করত, রাজ বন্ধুর মতো আচারণ করত।  

বাংলানিউজ: মন্দিরা থেকে ‘কাজল রেখা’, চরিত্রটি নিজের মধ্যে ধারণ করার জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি ছিল আপনার?
মন্দিরা:
সেলিম ভাই বেশ পুরনো ময়মনসিংহ গীতিকার বই পড়তে দিতেন, সেগুলো পড়ে জানার চেষ্টা করতাম। ইতিহাস ঘাটতে দিতেন চারশো, পাঁচশো বছর আগের জীবনধারণ কেমন ছিল জানার জন্য। এছাড়া নিয়মিত আমাদের লুক টেস্ট হতো, আবার শুটিংয়ের আগে রিহার্সাল করতাম।  

বাংলানিউজ: এত পুরাতন গল্প বর্তমান সময়ের দর্শকদের কানেক্ট করবে কীভাবে? 
মন্দিরা:
এ ধরণের গল্পে আগে কাজ হয়নি বাংলাদেশে। এটা যেহেতু ময়মনসিংহ গীতিকা থেকে নেওয়া আর রূপকথার গল্প, সেই জায়গা থেকে মানুষজন নতুন কিছু পাবে। আবার এটাকে মিউজিক্যাল ফিল্মও বলা যায়। এটার মধ্যে দুর্দান্ত দুর্দান্ত গান আছে। আমি আশা করছি সেই গানগুলোও মানুষের ভালো লাগবে। স্টোরি লাইনও এত পরিমাণ শার্প, সবকিছু মিলিয়ে এটা বাংলার গল্প, এতে নতুনত্ব খুঁজে পাবে।  

বাংলানিউজ: নতুন সিনেমা ‘নীল চক্র’-এ নৃত্যশিল্পীর ভূমিকায় দেখা যাবে, গল্পে নিজের অস্তিত্ব রয়েছে বলা যায়। এ সম্পর্কে কী বলবেন? 
মন্দিরা:
নতুন বছরে নতুন সিনেমা ‘নীল চক্র’-এ যুক্ত হয়েছি। এটা মিঠু খান পরিচালিত। স্টোরি আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। যেখানে একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে আমাকে দেখানো হবে। যে খুবই সুন্দর, গল্পে তাকে এলিগেন্ট টাইপের দেখানো হয়েছে। যেহেতু আমি একজন নৃত্যশিল্পী সেই জায়গায় কাজটি করতে কিছুটা হলেও সহজ হচ্ছে। এটা এই সময়ের গল্প, সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া রিলেটেড। তাই আমার কাছে মনে হয় সবার কাছে ভালো লাগবে।  

বাংলানিউজ: সিনেমায় আরিফিন শুভর বিপরীতে আপনাকে দেখা মিলবে, যিনি আপনার ক্রাশ। মন্দিরা স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে?
মন্দিরা:
আরিফিন শুভ ভাই আমার এক সময়ের ক্রাশ। ছোটবেলা থেকেই তাকে ভালো লাগতো। তার নাটক, টিভিসি, ওভিসি, সিনেমা; একটার পর একটা দেখতে দেখতে আমি তার ফ্যান হয়ে গিয়েছিলাম। তার মধ্যে একটা হিরো হিরো একটা ভাব আছে, যা আমার খুব আকর্ষণ করতো। ছোটবেলায় তো ভাবতাম না ১০-১৫ বছর পর গিয়ে আমিও নায়িকা হব! এখন এসে তার সঙ্গে কাজ করছি এটা স্বপ্ন পূরণের মতো। নিজেকে ভীষণ লাকি মনে করছি। তার সঙ্গে কাজ করতে অনেক ভালো লেগেছে। ছোট করে বললে- সে খুবই নাইস পারসন, খুবই হেল্পফুল। কাজটি বেশ ভালোভাবে হচ্ছে, শুটিং চলছে।  

বাংলানিউজ: মিডিয়ায় পদার্পণ বলা চলে এক যুগের। সিনেমায় আসতে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেল, অপেক্ষার ফল কী সুমিষ্ট হয়েছে আপনার ক্ষেত্রে?
মন্দিরা:
২০১২ সালে সেরা নাচিয়ে থেকে বের হওয়ার পরেই নাটকে কাজ শুরু করি। এরপর সিনেমায় কাজের অফার পেয়েছি অনেকে। শুধু তাই নয়, দেশের বাইরের সিনেমার অফার পেতাম। কিন্তু মনে করতাম, আমি বড় কিছু করব, যা মানুষের মন-প্রাণ ছুঁয়ে যায়। সেই স্বপ্ন মনে হয় পূরণ হয়েছে, এত বড় প্রজেক্টে (কাজল রেখা) নাম ভূমিকায় কাজের মধ্য দিয়ে। অনেকদিন অপেক্ষার পর সিনেমায়, এর ফল মনে হয় ভালোই হয়েছে।  

বাংলানিউজ: দেশের শোবিজে আরেকজন আপনার ক্রাশ রয়েছে, যার সঙ্গে একটি টিভিসিতে কাজ করেছেন। তার সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই...
মন্দিরা:
আমার বাংলাদেশে দুজন ক্রাশ। তাদের একজন তাহসান খান, আরেকজন আরিফিন শুভ। যারা ব্যক্তিত্ব বজায় রাখতে পারে, খুবই পোলাইটলি, নাইস পারসন- সেই মানুষটাকে আমার ভালো লাগে। আমার মনে হয় তাদের দুজনের মধ্যে এই গুণাবলি আছে। ছোটবেলায় যখন তাহসান ভাইয়ের গান, নাটক বের হতো সেগুলো দেখে ও শুনে ভক্ত হয়ে গেছি। তারপর আরও একটু যখন বড় হই তার পারসোনালিটি, কথা-বার্তা খুবই ভালো লাগতো।  

বাংলানিউজ: তাহসানের একটি কনসার্টে গিয়েছিলেন, সেখানে একটি মজার স্মৃতিও আছে আপনার সেই সম্পর্কে জানতে চাই?
মন্দিরা:
সেই কনসার্টে অনেক প্রিয় তারকাই ছিলেন। বন্ধুদের তাড়নায় সেই কনসার্টে যাওয়া। যখন বলা হলো, ‘‘এখন গান গাইতে আসবে তাহসান খান। সে আসার পর বললেন, ‘আমার সঙ্গে আজ একজন স্পেশাল পারসনকে নিয়ে এসেছি। তখন ভাবছি- কাকে নিয়ে এসেছে, তার জীবনে নতুন কেউ এসেছে? তখন খুবই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল, আমি তো তার জন্যই এসেছি, এটা কী হলো? তারপর দেখলাম তার মেয়ে এসেছে, তারপর খুবই ভালো লাগছিল। ’’ 

বাংলানিউজ: হঠাৎ শুনলেন ‘তাহসান খান বিয়ে করছেন’ কষ্ট পাবেন?
মন্দিরা:
কষ্ট পাব না। আমি তো আসলে তাকে বিয়ে করতে চাই না, সে আমার একজন ভালোলাগার মানুষ। তার গান ভালো লাগে, ব্যক্তিত্ব ভীষণভাবে মুগ্ধ করে, সে স্বপ্নের মানুষ হিসেবে থাকুক এটাই আমি চাই।  

বাংলানিউজ: বাস্তব জীবনে মন্দিরার প্রেম এসেছে?
মন্দিরা:
বাস্তব জীবনে প্রেম আছে, প্রেম ছাড়া তো একজন মানুষ থাকতে পারে না। আমার মনে হয়, প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে প্রেম থাকা জরুরি, প্রেম করা উচিৎ। প্রেম করলে মন ভালো থাকে, শরীর ভালো থাকে। এখন বিয়ে করার কোনও ইন্টেনশন একদম নেই, পরিবার থেকেও এখন প্রেসার নেই। এখন কাজে মনযোগ দিতে চাই।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৪
এনএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।