ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিনোদন

মানুষ প্রতিবাদ না করে উল্টো সাইবার ক্রাইমকে এনজয় করে : বিদ্যা সিনহা মিম

বিনোদন প্রতিবেদক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১২
মানুষ প্রতিবাদ না করে উল্টো সাইবার ক্রাইমকে এনজয় করে : বিদ্যা সিনহা মিম

গ্ল্যামার-সংকটে ভুগছে আমাদের শোবিজ। চলচ্চিত্রে-টিভিতে মিষ্টি মুখের অভাব চোখে পড়ার মতোই।

হাতেগোনা যে কজন গ্ল্যামার গার্ল আছেন, তারাও হচ্ছেন নানারকম চাপ আর চক্রান্তের শিকার। এরকমই এক বিব্রতকর পরিস্থিতি পার করলেন লাক্স-সুন্দরী বিদ্যা সিনহা মিম। অনলাইনের অশ্লীল কিছু সাইট আর ব্লগে কে বা কারা যেন দুই মিনিটের নোংরা  একটি বিদেশী ভিডিও ফুটেজ আপলোড করে ছড়িয়ে দিয়েছে তার নামে। এই নিয়ে এখনো চলছে তুমুল প্রপাগান্ডা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক ক্রিকেটারের সঙ্গে অশ্লীল এই ভিডিও ফুটেজের মেয়েটি সোনালী চুলের ইউরোপিয়ন বা আমেরিকান হলেও তাকেই বলা হচ্ছে বিদ্যা সিনহা মিম। আমাদের দেশের কিছু অতি-উৎসাহী মানুষ, ‘চিলে কান নিয়েছে’ শুনেই যেমন চিলের পেছনে ছোটা শুরু করেন, এখানেও তাই হয়েছে। সত্যিই মেয়েটি মিম কিনা তা যাচাই না করেই মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে, ‘মিমের ভিডিও.. মিমের ফুটেজ..’। গত একবছরে ঠিক একই রকম ঘটনার শিকার হয়েছেন পপগায়িকা মিলা, অভিনেত্রী বিন্দু, শখ, সারিকা, টিনেজার গায়িকা পড়শীসহ আরও কজন অভিনেতা-অভিনেত্রী, মডেল ও নির্মাতা। অথচ  প্রভা আর চৈতি ছাড়া অন্যদের নামে ছড়ানো ভিডিও ক্লিপিংসে সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায় নি।

এ পর্যন্ত সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েছেন যেসব তারকা, রহস্যজনক কারণে একমাত্র মিলা ছাড়া কাউকেই প্রতিবাদ মুখর হতে দেখা যায়নি। বড় জোর কেউ কেউ প্রমান করার চেষ্টা করেছেন কেবল, ফুটেজের মেয়েটি তিনি নন।

২০০৭ সালের লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার খেতাব বিজয়ী বিদ্যা সিনহা মিম এবার তার নামে ছড়িয়ে দেওয়া অশ্লীল ভিডিও প্রসঙ্গে সোচ্চার হয়েছেন। এ বিষয়ে মিম বাংলানিউজের কাছে খোলামেলা অনেক কথা বললেন। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, তার কাজ ও অন্যান্য প্রসঙ্গে।

লাক্সের খেতাব বিজয়ের পর বিদ্যা সিনহা মিম প্রথম মিডিয়াতে পা রাখেন রূপালী পর্দায় অভিনয়ের মধ্য দিয়েই। হুমায়ূন আহমেদের ‘আমার আছে জল’ ছবির অসাধারণ একটি চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন। এরপর বিজ্ঞাপন আর টিভিনাটকে অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেন তিনি। ২০০৯ সালে ঈদে মুক্তি পাওয়া মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র ‘আমার প্রাণের প্রিয়া’-তে শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের বিপরীতে মিমকে দেখা যায়। ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফল হবার পরও তাকে গত দু’বছর নতুন কোনো ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় নি।

সম্প্রতি মিম নতুন দুটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। যার মধ্যে খালিদ মাহমুদ মিঠু পরিচালিত ‘জোনাকির আলো’ ছবির শুটিং এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। অন্যটি ঢালিউডের একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা শাবানার এস এস প্রডাকশনের ব্যানারে নারগিস আক্তার পরিচালিত ছবি ‘সেরা সন্তান’ ।

লম্বা বিরতির পর চলচ্চিত্রে ফেরা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বড়পর্দা দিয়েই আমি শোবিজে পা রাখি। তাই বড়পর্দায় কাজ করার ইচ্ছে আমার সবসময়ই ছিল। ভালো ছবির অপেক্ষায় মাঝে কিছুটা বিরতি দিতে হয়েছে। এখন ভালো ছবির অফার পেয়েছি। তাই আবারও কাজ শুরু করেছি। খালেদ হাসান মিঠুর ‘জোনাকির আলো’ শুটিং শুরু করেছি অনেক আগেই। দশভাগ কাজ শেষ করেছি। এখন বিরতি চলছে। আগামী ১৮ মে থেকে রাঙামাটিতে আবারও ছবির শুটিং শুরু করার কথা আছে। এ ছবিতে ইমন ও কল্যান অভিনয় করছেন আমার বিপরীতে।   আর  শাবানার ম্যাডামের  ‘সেরা সন্তান’ ছবির এখনো শুটিং শুরু হয় নি। এ ছবিতে আমার বিপরীতে কাজ করবেন কলকাতার নায়ক জিৎ। কাজ নিয়ে তিনি এখন ভীষণ ব্যস্ত। তার শিডিউল অনুযায়ী ‘সেরা সন্তান’ ছবির শুটিং সিডিউল ঠিক করা হবে। তাই ছবিটির কাজ কবে শুরু হবে তা বলতে পারছি না।

কেমন হচ্ছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের চলচ্চিত্র? এ প্রসঙ্গে মিম বললেন, দেশের চলচ্চিত্র অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তনের একটা হাওয়া বইছে। অনেক নির্মাতাই এ পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও ভালো ভালো কাজ করার পরিকল্পনা করছেন। আমি মনে করি, আমাদের চলচ্চিত্র এখন একটা টার্নিং পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছে। চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে আসবে শিগগিরই। আমি আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।


মিম জানালেন, চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে সময় দেওয়ার জন্য এ মুহূর্তে কোনো ধারাবাহিক নাটকে তিনি অভিনয় করছেন না। তবে একপর্বের বেশ কয়েকটি নাটকে তিনি অভিনয় করছেন। রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুটি নাটকে কাজ করেছেন। ঈদের জন্য বেশ কয়েকটি নাটকের অফার এলেও এখনো সম্মতি দেন নি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঈদের আগে ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। তাই বোধহয় ঈদে খুব বেশি নাটকে অভিনয় করতে পারবো না। যদি সময় পাই ঈদের কয়েকদিন আগে চেষ্টা করবো কোন নাটকে শুটিং করতে। দর্শকরা ঈদে প্রিয় সেলিব্রেটিকে দেখতে পছন্দ করে। আমি আপ্রান চেষ্টা করবো আমার ভক্তদের নিরাশ না করতে।

নতুন বিজ্ঞাপনে কাজ করা প্রসঙ্গে মিম বললেন,  প্রাণ আপের নতুন একটি বিজ্ঞাপনে সম্প্রতি কাজ করলাম। এতে কাজ করেছি আমি আর আরেফিন শুভ। বান্দারবানের নীলগিরি আর কক্সবাজারে হয়েছে বিজ্ঞাপনটির শুটিং। এ মাসেই এটি অনএয়ারে আসবে।

সাম্প্রতিক সময়ে মিমকে নিয়ে যে গুঞ্জন সেই আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপিংস সম্পর্কে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বললেন, এ বিষয়ে কথা বলতেও রুচিতে বাঁধে। কিছু মানুষ আছে যারা অন্যের গুজবে আনন্দ খুঁজে পায়। ঘটনার সত্যিটা যাচাই না করেই তারা আরও নতুন কাহিনী বানিয়ে নেয়। এসব মানুষকে ভীষণ করুণা হয়। এ ধরনের জঘন্যতম কাজ যারা করেছে আজ তারাই সবার কাছে নগন্য। আর যারা এ ঘটনাকে আরও রসালো করে উপস্থাপন করেছে তাদেরকেও সবাই নিন্দা জানিয়েছেন। এটা ছিল বিদেশী এক মডেল। যার চেহারার পাশ থেকে কিছুটা আমার সঙ্গে মিলে যায়। মানসিকভাবে অসুস্থ কিছু মানুষ সেই ভিডিওটি নিয়ে খুব হৈ চৈ করেছে। ভিডিওতে আমার নামে ছেড়ে তারা মজা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। গুটি কয়েক বাতিকগ্রস্ত আর ছোট মনের মানুষ ছাড়া সবাই আমাকে সাপোর্ট করেছে। কেননা তারা সবাই আমাকে চেনেন। ঘটনার সত্যিটা সবার কাছেই পরিস্কার হয়েছে।

বাংলানিউজের কাছে মিম জানান, এই মিথ্যা ভিডিও যারা ছড়িয়েছে তাদের তিনি শনাক্ত করেছেন। শিগগিরই তিনি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া এক ফটোসাংবাদিক এবং হালের নির্মাতা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমাকে সে নতুন একটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব করে। আমি ছবির স্ক্রিপ্ট, নির্মাতা আর অন্য শিল্পীদের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সাক্ষাতে সব বলবেন বলে জানান। তারপর তিনি কয়েকজন নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করেন। দেখলাম, ছবির পরিচালক ও নায়ক দুজনেরই আগে মিডিয়ায় কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ছবির ব্যাপারে তারা আমাকে স্পস্ট কোনো ধারণাও দিতে পারলেন না। তবু ঐ বহিস্কৃত ফটোসাংবাদিক আমাকে ছবিটিতে স্বাক্ষর করতে জোরাজুরি শুরু করে। আমি তাদের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করলে যাওয়ার সময় তিনি শাসিয়ে যান, কাজটা নাকি আমি ভালো করলাম না, আমাকে দেখে নেবেন, মিডিয়ায়  আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দেবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই আমার নামে এই মিথ্যা বাজে ভিডিও ছাড়া হয়। আমি তাই নিশ্চিত কে বা কারা এই কুকর্মের হোতা। আমি এখন প্রমাণ সংগ্রহের অপেক্ষায় আছি। শিগগিরই আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব।

সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে মিম বললেন, এটি অনেক বড় অপরাধ। সাইবার ক্রাইম একজন মানুষের জীবন বিপন্ন করে দিতে পারে। এ ধরনের কাজ মিডিয়ার সবার জন্যেই ক্ষতিকর। এমন অবস্থা হলে নতুনদের মনে ভয় নামে ভাইরাসটা বাসা বাঁধবে। আর মিডিয়ায় নতুনদের আসাটা বন্ধ হয়ে যাবে। এটা আমাদের জন্যে খুবই লজ্জাজনক একা কারো পক্ষে এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব না। সবাই মিলে যদি সোচ্চার হওয়া যায়, তাহলে সেই চক্র কিছু করার আগে অবশ্যই চিন্তা করবে। কিন্তু আফসোস আমাদের দেশের মানুষ প্রতিবাদ না করে উল্টো এ ধরনের ক্রাইমকে এনজয় করে। এ বিষয়ে কঠোর আইন দরকার। যদি সাইবার ক্রাইমে জড়িত থাকা ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়, তাহলেই এর প্রতিরোধ সম্ভব।



বাংলাদেশ সময় ১৬২৫, মে ০৫, ২০১২
সম্পাদনা : অনন্যা আশরাফ (নিউজরুম এডিটর),
বিপুল হাসান, বিভাগীয় সম্পাদক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।