ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

প্রার্থীর কাছে টাকা চেয়েছেন রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং অফিসার!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২২
প্রার্থীর কাছে টাকা চেয়েছেন রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং অফিসার! অভিযোগপত্র

দিনাজপুর: ষষ্ঠধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটে জিতিয়ে দেওয়ার নাম করে তিন মেম্বার প্রার্থীর কাছে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে।  

দিনাজপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর কমলপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং অফিসারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে।

তবে নিজেদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং অফিসার।  

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী তিন ইউপি মেম্বার প্রার্থী জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর পৃথক লিখিত অভিযোগ করেছেন।  

সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা  বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন মেম্বার প্রার্থী বল প্রতীকের ইয়াছিন আলী, বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকের প্রার্থী মোকলেসুর রহমান ও টিউবওয়েল প্রতীকের আহসান হাবীব। অভিযোগটির অনুলিপি দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক, সমন্বিত জেলা দুদক অফিসে পাঠানো হয়েছে।  

নির্বাচনে ওই ইউনিয়ন পরিষদের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতাউল হক। ২ নম্বর ওয়ার্ডের কুতইড় আলহাজ্ব পিয়ার মহাম্মদ সরকার দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল্লাহ আল শামস।  

লিখিত অভিযোগে ইয়াছিন আলী বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার আতাউল হক আমার কাছে তিন লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। আমি তাকে দিতে অস্বীকার করায় তিনি অপর প্রার্থী মোরগ প্রতীক মো. নাসির উদ্দিনকে জিতিয়ে দেন।  

এছাড়া ভোট চলাকালীন সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টা ৫ মিনিট পর্র্যন্ত মোট ৪টি ইভিএম মেশিন বন্ধ ছিল। পরে আবার সচল করে কর্তৃপক্ষ। আবার দুপুর সাড়ে ৩টার সময় সবগুলো মেশিন পরিবর্তন করা হয়।

আমি খবর নিতে গেলে আমাকে রুম থেকে বের করে দেওয়া হয়। আমার জানা মতে আমার বল প্রতীকে প্রায় ৫০০ ভোট পড়ছিল, কিন্তু আমার প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়েছে ১২০। এছাড়াও আমার এজেন্টকে সঠিকভাবে ভোটের ফলাফল বুঝিয়ে না দিয়ে এবং কোনো ধরনের ফলাফল ঘোষণা না করেই নির্বাচনী সরঞ্জাম গাড়িতে তুলে নেন।  

লিখিত অভিযোগে বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকের প্রার্থী মোখলেসুর রহমান বলেন, নির্বাচনে আমাকে জিতিয়ে দেবে বলে রিটার্নিং অফিসার আতাউল হক আমার কাছে আড়াই লাখ টাকা চেয়েছিল। তাকে টাকা না দেওয়ায় ৩০ জানুয়ারি রাতে প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল্লাহ আল শামস আমার কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু আমি তাকেও টাকা দিতে রাজি হইনি। টাকা না দেওয়ায় আমার প্রতিপক্ষকে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে জিতিয়ে দেন। এছাড়াও নির্বাচন শেষে আমার পোলিং এজেন্টদের ইভিএম মেশিনের হিসাব না দিয়ে তার মনগড়া সাদা কাগজের ফলাফল দেন।  

লিখিত অভিযোগে টিউবওয়েল প্রতীকের আহসান হাবীব বলেন, রিটার্নিং অফিসার আতাউল হক আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন। পরবর্তীতে আমার কাছে ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে মনোনয়নপত্রের বৈধতা দেন। এছাড়াও ৩০ জানুয়ারি রাতে প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল্লাহ আল শামস আমাকে ভোটে জিতিয়ে দেবে মর্মে দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। আমি টাকা দিতে না পারায় আমার ফলাফল পাল্টে দিয়ে অপর প্রার্থীকে জিতিয়ে দেন।  

এ বিষয়ে প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল্লাহ আল শামস বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অসত্য। এসময় তার কর্মস্থলের নাম জানতে চাওয়া হলে তিনি তা জানাতে অনীহা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত তথ্য কাউকে দিতে পারব না।  

রিটার্নিং অফিসার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতাউল হক বলেন, তিন প্রার্থীর অভিযোগ একইভাবে লেখা হয়েছে। তারা আমার মান সম্মান নষ্ট করার জন্য এধরনের কাজ করছে। তারা আমাকে নির্বাচনের দিন মৌখিকভাবে ইভিএমে কারচুপির বিষয় জানিয়েছিল। আমি তাদের সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছি যে- ইভিএমে কোনো ধরনের কারচুপির সুযোগ নেই। এছাড়াও আহসান হাবীবের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে আমি বাতিল করেছিলাম। পরে জেলা নির্বাচন অফিসার বরাবর তিনি আপীল করেছিলেন। সেখানে তার মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছিল।  

দিনাজপুর জেলা সিনিয়র নির্বাচন কমকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামাণিককে কল করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগকারীদের ডাকা হবে, যদি তারা অভিযোগের বিষয়ে কোনো প্রমাণ দেখা পারে তাহলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  
গত ৩১ জানুয়ারি দিনাজপুরের ২১টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।