ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

সিইসিকে ‘খলনায়ক’ বললেন সুজন সম্পাদক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
সিইসিকে ‘খলনায়ক’ বললেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার(বামে),কে এম নূরুল হুদা

ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাকে এবার ‘খলনায়ক’ বলেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তার মতো লোককে সিইসি নিয়োগ দেওয়াকেও দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

শনিবার (২৯ জানুয়ারি) অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া কাজে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সিইসির দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে সুজন এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে ড. তোফায়েল আহম্মেদ, এম হাফিজউদ্দীন খান, ড. শাহদীন মালিক, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, দিলীপ কুমার সরকারসহ সুজনের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে কোন প্রক্রিয়ায় ড. শামসুল হুদা কমিশন সুজনকে কাজ দিয়েছিল-জানতে চাইলে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা ট্যাকনিক্যাল বিষয়। আমি ট্যাকনিক্যাল পদ্ধতি জানি না। আদালতের রায় আছে যে প্রার্থীদের (হলফনামা) তথ্য প্রচার করতে হবে। তখন তৎকালীন এটিএম শামসুল হুদা কমিশন এই কাজে আমাদের সহায়তা নিয়েছিল। আমরা জানি না, যেহেতু টেকনিক্যাল বিষয়, সুতরাং তারাই বলতে পারবেন কোন প্রক্রিয়ায় কাজ দিয়েছিলেন।

কোনো বিজ্ঞপ্তি বা কোনো দরপত্র ছাড়াই সুজনকে নির্বাচনী তথ্য প্রচারে কাজ দেওয়া হয়েছিল বলেও সম্প্রতি অভিযোগ তোলেন সিইসি কেএম নূরুল হুদা। এমনকি তিনি কোন প্রক্রিয়ায় কাজ দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রশ্নও করেন।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, সিইসির বক্তব্যে কেবল আমার নয়, সুজনের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন, সবার মানহানি হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে মানহানি মামলা করব কি-না, পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা অনেক। রাতকে দিন আর দিনকে রাত করা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা সব কাজ করতে পারে। আদালতের রায় আছে- নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ ওঠলে ইসি তদন্ত করতে পারে। তদন্তে সেই অভিযোগ প্রমাণ হলে নির্বাচন বাতিল করতে পারে। কিন্তু তারা কোনটাই করেনি।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, দলগুলো আদালতে যায়নি বলে সিইসি অজুহাত দেখিয়েছেন। কিন্তু ৭০টির মতো মামলা হয়েছে। একটিওর শুনানি হয়নি। ব্যালটপেপার খুললে মধ্যরাতে ভোট হয়েছে প্রমাণ হতো।

এছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) প্রিজাইডিং কর্মকর্তার হাতে ব্যালট ইউনিটে ২৫ শতাংশ ব্যালট পেপার ওপেন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এমন অনিয়মের বিষয়ও উঠে এসেছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, এরকম একজন খলনায়ককে সিইসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ড. শাহদীন মালিক বলেন, সমালোচনা এড়িয়ে যাওয়ার নিকৃষ্ট পন্থা হচ্ছে ব্যক্তি আক্রমণ। সিইসির বক্তব্য অপ্রত্যাশিত।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, একজন বিদায়ের সময় ভুল ভ্রান্তি নিয়ে মাফ চায়, সুন্দরভাবে বিদায় নেয়। কিন্তু তিনি উল্টোটা করেছেন। সুজন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া কাজ করায় কারো ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার হয়নি। সেই কমিশন অনেক বিল সরাসরি তারাই দিয়েছে। যে বই ছাপানো হয়েছে, সেটির বিলও প্রথমা প্রকাশনীকে তারাই সরাসরি দিয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যৌক্তিক সমালোচনার উপযুক্ত জবাব না থাকলে সমালোচকের চরিত্র হননের অপচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া বহুল ব্যবহৃত একটি অপকৌশল। ঠিক এমনই এক অপকৌশল ব্যবহারের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা।

প্রসঙ্গ, গত ২৭ জানুয়ারি রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমাক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত 'আরএফইডি টক উইথ কে এম নূরুল হুদা' শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে এক কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগসহ কিছু কুরুচিপূর্ণ, অশালীন, অসত্য বক্তব্য দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।

সুজন সম্পাদক বলেন, দেশের মর্যাদাপূর্ণ একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে বসে তাকে এমন মিথ্যাচার করতে দেখে আমরা হতবাক। তার এই মিথ্যাচারের প্রতিবাদেই আমাদেরএই সংবাদ সম্মেলন।

প্রথমত, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ড. বদিউল আলম মজুমদারের ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং কোনদিন ছিলও না। তিনি কমিশন থেকে কখনও কোনো কাজ নেননি, অসমাপ্ত রাখারতো কোনো প্রশ্নই আসে না।

২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের সময় হলফনামায় বর্ণিত প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ, প্রার্থীদের ভোটারদের মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজনের কাজটি করার জন্য ড. শামসুল হুদা কমিশন ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত এসইএমবি প্রকল্প থেকে সুজনকে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা দেয়। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় একই ধরনের কাজের জন্য সুজনকে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়। অর্থাৎ দুটি নির্বাচনে সর্বমোট ১২ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা সুজন নির্বাচন কমিশন থেকে পায়। অথচ ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে সিইসি কে এম নুরুল এক কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আপত্তিকর এবং মানহানিকর মন্তব্য করায় সিইসির ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও মনে করেন।

>>> আরও পড়ুন: বদিউল আলম-শামসুল হুদার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সিইসির

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
ইইউডি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।