ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

খুলনার ইউপি নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-আতঙ্কে ভোটাররা

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
খুলনার ইউপি নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-আতঙ্কে ভোটাররা নির্বাচনী এলাকায় টহল দিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: রাত পোহালে প্রথম ধাপের স্থগিত খুলনার ৩৪ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।  

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে।

নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণাও শেষ হয়েছে। ভোট নেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এদিকে কড়া নিরাপত্তায় ভোটের সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে।

এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন  ভোটাররা।

ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে এলাকাবাসীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক কাজ করছে।  এ নিয়ে ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কিছু কিছু নির্বাচনী এলাকায়। সেসব ভোট এলাকায় টানটান উত্তেজনা। কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ ভোটাররা।

দিঘলিয়া, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছার বেশ কয়েকজন ভোটারদের সঙ্গে কথা এ আতঙ্কের কথা জানা গেছে।  

এছাড়া সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কয়েকজন প্রার্থীও।

স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি এ নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। একই দলের স্বতন্ত্রভাবে মাঠে রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। সবাই প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। এর কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ক্ষমতার লড়াই। আর এতে বাড়ছে সহিংসতা।

সর্বশেষ রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নির্বাচনী বিষয়কে কেন্দ্র করে দিঘলিয়া থানার ৪ নম্বর সেনহাটি ইউপি নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জিয়া গাজীর আনারস প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শেখ মাহমুদুল হাসানকে (৪৫) প্রতিপক্ষ প্রার্থীর সমর্থক রাজিব বাওয়ালীসহ (৩০) ৩/৪ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন ও আত্মীয়-স্বজন শেখ মাহমুদুল হাসানকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।

খুলনা জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইউপি নির্বাচনের প্রথম ধাপে খুলনা জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে। জেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে যেসব ইউনিয়নে ভোট হচ্ছে সেগুলো-কয়রা উপজেলার আমাদি, বাগালী, মহেশ্বরীপুর, মহারাজপুর, কয়রা, উল্টর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী। দাকোপের পানখালী, দাকোপ, লাউডোব, কৈলাশগঞ্জ, সুতারখালী, কামারখোলা, তিলডাঙ্গা, বাজুয়া, বানিশান্তা। বটিয়াঘাটার গংগারামপুর, বালিয়াডাঙ্গা, আমিরপুর। দিঘলিয়ার গাজীরহাট, বারাকপুর, দিঘলিয়া, সেনহাটি, আড়ংগাটা ও যোগীপোল। পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা, রাড়ুলী, গড়ইখালী, গদাইপুর, চাঁদখালী, দেলুটি, লতা, লস্কর ও কপিলমুনি ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৫৬ জন। ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান পদে দাকোপের লাউডোব ইউনিয়নে শেখ যুবরাজ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী ছিলেন।

এছাড়া কয়রা উপজেলার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বর পদে শেখ সোহরাব আলী বিনা প্রতিদন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। ৩৪টি ইউনিয়নে ৩০৬টি ওয়ার্ডে মেম্বর প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৪৮১ জন। সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রার্থী ৪৬৪ জন। ইউনিয়নগুলোতে এবারে মোট ভোটার ৬ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৩ জন ও পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৬ জন।

এবারের ইউপি নির্বাচনে দুটি ইউনিয়নে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট নেওয়া হবে। ইউনিয়ন দুটি হচ্ছে-বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর ও দিঘলিয়ার বারকপুর ইউনিয়ন। এ দুটি ইউনিয়নে ভোট ১৯টি কেন্দ্র ও ভোটারকক্ষ ১০৬টি।

অপরদিকে বাকি ৩২টিতে ব্যালটে ভোট নেওয়া হবে। এসব ইউনিয়নে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৩০৮টি ও ভোটারকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৭৯৪টি।

খুলনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা এম মাজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট নেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে ব্যালট পেপারেরসহ সব ধরনের নির্বাচনী সামগ্রী।  

শঙ্কা ছাড়াই ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সিনিয়র ওই কর্মকর্তা।

খুলনা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ইউপি নির্বাচন ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা পুলিশ। ভোটারদের নিরাপত্তাসহ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নেওয়ার জন্য ৫ উপজেলায় ২ হাজার পুলিশের সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। এছাড়া ভোটের দিন ও ভোট পরবর্তী সময়ে তারা সার্বিক নিরাপত্তায় থাকবেন।

তিনি বলেন, ২ হাজার পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ও কোস্টগার্ডের প্রায় ৮ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। আশা করি, সবার অংশ  গ্রহণে জমজমাট ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে ভোট।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।