ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

করোনাকালেও অনলাইনে এনআইডি সেবা পেয়েছে জনসাধারণ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২০
করোনাকালেও অনলাইনে এনআইডি সেবা পেয়েছে জনসাধারণ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম

ঢাকা: দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর টানা ৬৬ দিন বন্ধ ছিল সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম। বেশিরভাগ অফিস বন্ধ থাকলেও পুরোদমে কাজ করে গেছেন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের কর্মকর্তারা।

জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সেবাটি নিশ্চিত করতে এই অনুবিভাগের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েও সফলভাবে এনআইডির অনলাইন সেবা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন। মাত্র ৪৮ জন কর্মকর্তা দিয়ে ১১ কোটি কার্ডধারীকে আইডিইএ প্রকল্পের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে বিভাগটি।

এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম বলেন, গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারের সাধারণ ছুটির কারণে এনআইডি সেবা নিশ্চিত করতে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাই। চীনে কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পরই আমি এনআইডি সেবা নিয়ে ভাবতে থাকি। আমার টিমের বিস্তৃত চিন্তায় বর্তমানে এ বিশাল চ্যালেঞ্জটি উতরে এখন সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে সেবা। দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই এনআইডির সব সেবা নিতে পারছেন সর্বসাধারণ। এখন পর্যন্ত অনলাইন সেবায় কেউ দুর্নীতির গন্ধও পায়নি বলে জানিয়েছেন এনআইডি মহাপরিচালক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, করোনার আগেও এনআইডির সব ধরনের সমস্যা সমাধানে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) সেবাপ্রার্থীদের ভিড় লেগেই থাকতো। কিন্তু লকডাউনে অনলাইনে সেবা চালুর পর থেকে এক ধরনের জনমানবশূন্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ইটিআই ভবনে। বর্তমানে দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকদিন ইটিআই ভবন ঘুরে এনআইডির সেবায় নিয়োজিত থাকা কর্মকর্তারা ছাড়া তেমন কোন লোকজন চোখে পড়েনি।

এনআইডি মহাপরিচালক বলেন, এনআইডি সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আমাদের চেষ্টা ছিল। বর্তমানে আমরা মানুষের দোরগোড়ায় নয়, হাতের মুঠোয় সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। এ কাজটি করতে আমাদের যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। এখন কাউকে এনআইডির সব সেবা পেতে উপজেলাও যেতে হচ্ছে না। কয়েকমাস আগেও প্রধান কার্যালয়ে দেড় কিলোমিটার লাইন থাকত, কিন্তু এখন লাইন তো দূরের কথা কোন মানুষই দেখা যায় না। এই অনলাইন সেবাটা চালু করতে আমরা কার্ড ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ডেভেলপ করেছি। বর্তমানে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমেই মানুষের হাতের মুঠোয় সেবাটা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এ সেবার ফলেই দুর্নীতির সব শেকড় বা পথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কেউ অনলাইনে আবেদন করলে যদি কাগজপত্র ঠিক থাকে তাহলে তাকে কারেকশন মাইগ্রেশনের জন্য অফিসে আসতে হচ্ছে না। ওই অ্যাপের মাধ্যমেই ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে পারছেন। আর যারা নতুন ভোটার হচ্ছেন তারা অনলাইনে সব তথ্য দিয়ে আবেদন করছেন, শুধু ছবি ও আইরিশ ছাপ দিতে একবার আসতে হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম বলেন, নতুন যারা তাদের কার্ড সাথে সাথেই দিয়ে দিচ্ছি। আর যাদের সংশোধনীর প্রস্তাব আসে সেগুলোর তথ্য যাচাই-বাছাই করে দিতে কিছু সময় লাগে। তবে কাগজপত্র ঠিক না থাকলে একটু বিলম্ব হয়। তবে খুব দ্রুতই এ সেবাটা একটা টাইমলাইনের মধ্যে নিয়ে আসব। ছোটখাটো সংশোধনের জন্য উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাসওয়ার্ড ও আইডি দেওয়া হয়েছে। তারপর যে সংশোধনগুলো থাকে সেগুলো জেলা ও তারপরের সংশোধনগুলো আঞ্চলিক পর্যায়ে এবং এরপরই যেগুলো বেশি জটিল সেগুলো ‘ঘ’ শ্রেণিতে করে আমরা অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছি। এ সিস্টেমটা শুধু মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে করা হয়েছে। আগে মাত্র ১৫ জন দিয়ে সারাদেশের মানুষকে সেবা দেওয়া লাগতো, কিন্তু এখন ১৫ জনের পরিবর্তে আমাদের ১০ আঞ্চলিক অফিসে ২০ জন অতিরিক্ত আঞ্চলিক কর্মকর্তার পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন ও উপজেলা কর্মকর্তাদেরও কাজে লাগাচ্ছি। আগে যে কাজটা ১৫ জন করতো, এখন সেটা প্রায় সাড়ে ৭/৮শ’ কর্মকর্তাকে সম্পৃক্ত করে সংশোধনের কাজটা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করছি। তবে এ কাজটা করতে একটু সময় লাগবে। কারণ, নতুন সফটওয়্যার অনেকে জানেন না। তবে আমার আশা পরবর্তী তিনমাসের মধ্যে আমরা একটা ড্রাইভ দিয়ে সব পর্যায়ের সংশোধনের কাজ শেষ করতে পারব।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে ডিজি বলেন, অ্যাকচুয়ালি যখন চীনে কারোনা হচ্ছিল, তারপর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছিল, তখনই আমি উদ্যোগ নেই এবং পরিকল্পনা করে ফেলি। যদি বাংলাদেশে হয় তাহলে কী করবো, আমরা পদক্ষেপ নিতে শুরু করি। আমরা পরিকল্পনা করি করোনাকালীন দুর্যোগে কীভাবে এনআইডি সেবাটাকে স্লো না করে ত্বরান্বিত করা যায়। সেই লক্ষ্যে আমরা টিম গঠন করি এবং ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে পর্যায়ক্রমে শিফট ওয়াইজ ডিউটি করি। অনলাইন সেবা আরও ভালোভাবে দিতে আমরা পর্যায়ক্রমে দিনে-রাতে অনেক মিটিং করেছি। আমরা মাত্র একমাসের মধ্যেই সবাইকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দ্রুততম সময়ে এ সেবাটা নিশ্চিত করতে সফল হয়েছি। গত ২৬ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫ লাখ ১৫ হাজার লোক অনলাইনে সেবা নিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে। এর মধ্যে এনআইডি ডাউনলোড করেছে প্রায় ২৫ লাখ ৩৫ হাজার নাগরিক। নতুন ভোটারের জন্য নিবন্ধন করেছে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার নাগরিক। হারানো আবেদন প্রায় ৪১ হাজার এবং সংশোধনী আবেদন প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার।

করোনার প্রকোপের কারণে সরাসরি সেবা দেওয়ার পরিবর্তে অনলাইনে এনআইডি সেবা অব্যাহত রেখেছে নির্বাচন কমিশন। গত ২৬ এপ্রিল অনলাইনে নিজের এনআইডি নিজেই ডাউনলোড করার সেবা উদ্বোধন করে সংস্থাটি। এছাড়াও নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন, ঠিকানা পরিবর্তন ও এনআইডি উত্তোলন সংক্রান্ত সেবার আবেদনও জমা দেওয়া যাচ্ছে অনলাইনে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২০
এমআইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।