ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

মসিক নির্বাচন: নতুনের চ্যালেঞ্জে পুরাতনরা

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৯
মসিক নির্বাচন: নতুনের চ্যালেঞ্জে পুরাতনরা ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন এক প্রার্থী, ছবি: অনিক খান/ বাংলানিউজ

বহুল প্রতীক্ষিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ ৩৩টি ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ১১টি নারী ওয়ার্ডে ভোটযুদ্ধ হবে আগামী ৫ মে। ভোট হবে ইভিএম পদ্ধতিতে।

মেয়র পদে না হলেও মহানগর মেতেছে কাউন্সিলর নির্বাচনে। ঘনিয়ে আসা ভোট উৎসব, ছড়াচ্ছে উত্তাপ।

এসব নিয়ে ৫ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন লিখেছেন আমাদের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান। আজ পড়ুন ধারাবাহিক প্রতিবেদনের চতুর্থ কিস্তি

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনে ১৯ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আবারো ভোট করতে নেমেছেন লিয়াকত আলী। টিফিন বক্স প্রতীকের এই প্রার্থী ইতোমধ্যে একই ওয়ার্ড থেকে ময়মনসিংহ পৌরসভায় তিনবার কাউন্সিলর ছিলেন। এবার তার বিপরীতে নির্বাচন করছেন ৮ প্রার্থী।

লিয়াকতের ভাষ্য, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৬০ শতক জমি আমার মূল সম্পদ ছিলো। জীবনের প্রথম নির্বাচন করেছি বাবার জমি বিক্রি করে। একইভাবে নির্বাচনী খরচ সংগ্রহ করে আরো দুটি নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছি। গরিবের হক মেরে নিজে বিত্তবান হইনি। আমার বিপরীতে একাধিক প্রার্থী থাকলেও এলাকাবাসীর ভালোবাসায় বিপুল ভোটে বিজয় আমার হবেই।  

উন্নয়নের ধারাবাহিকতার স্বার্থেই আবারো নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডে রেডিও প্রতীক নিয়ে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মাহাবুবুর রহমান দুলাল। তার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নেমেছেন আরো ৫ প্রার্থী।

এ কাউন্সিলর প্রার্থী নিজ এলাকার সড়ক, জলাবদ্ধতা নিরসন, স্যানেটারি ব্যবস্থা ও ৪০০ সড়ক বাতিসহ ওয়ার্ডবাসীর মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়েছেন বলে দাবি করছেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রতিপক্ষ আমার কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। কিন্তু ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ আমার পাশে রয়েছেন। আগামী ৫ মে ভোটে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমেই তারা ভয়ভীতি দেখানোর প্রতিশোধ নেবেন।

শুধু এ দুই ওয়ার্ডই নয় কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে পুরনোদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এবার প্রতিটি ওয়ার্ডেই নতুনরা প্রার্থী হয়েছেন। ফলে সাবেক কাউন্সিলরদের জন্য নির্বাচন গিয়ে ঠেকেছে প্রেস্টিজ ইস্যুতে। আর নতুন প্রার্থীদের জন্য লড়াইটা অস্তিত্বের।  

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫ মে নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটযুদ্ধ হবে। সেই সাথে মহিলাদের জন্য রয়েছে ১১টি ওয়ার্ড। পুরুষ কাউন্সিলররা যেখানে একটি ওয়ার্ডে নির্বাচন করতে গিয়ে সর্বাত্মক ভোটযুদ্ধে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছেন। সেখানে নারী প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনের মাঠ বিস্তৃত।

নির্বাচনী আলোচনায় বিষয়টি উঠে এলেও এটিই নিয়ম। সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডগুলোতেও সাবেক মহিলা কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন এমনসব প্রার্থী। যারা প্রথমবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হচ্ছেন।  

নির্বাচনী অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জাদরেল প্রার্থীদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা তরুণ প্রার্থীরা আওয়াজ তুলেছেন পরিবর্তনের। পরিবর্তনের ইস্যুর সাথে পাল্লা দিচ্ছে ধারাবাহিকতার ইস্যুও।
প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে ময়মনসিংহ নগর, ছবি: অনিক খান/বাংলানিউজআর মাত্র ৯ দিনের মাথায় হতে যাওয়া বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচনে ভোটাররা কোনপথে যাবেন সেই প্রশ্নেও চলছে জল্পনা।  

জানা যায়, ময়মনসিংহ পৌরসভার ২১ টি ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের অনেকেই সিটি করপোশেনের প্রথম ভোটে নতুন প্রার্থীদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। কোথাও কোথাও অবস্থা এমন ‘কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। ’ 

আবার কোন কোন ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলরদের পক্ষেই জনমত বইতে শুরু করেছে। সার্বক্ষণিক এলাকার বাসিন্দাদের আপদে-বিপদে পাশে ছিলেন, কাউন্সিলর পদকে কেবলমাত্র টাকা কামানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেননি আবার পকেট থেকে সব সময় ওয়ার্ডের গরিব-দুঃখীদের জন্য দুই হাতে খরচা করেছেন এমন গুণের অধিকারীরা ভোটের মাঠে চালকের আসনে রয়েছেন।  

নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তিন প্রার্থী ওয়াহিদুল হাসান সুজন, মহানগর যুবলীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহবায়ক রাসেল পাঠান ও মিজানুর রহমান পৃথকভাবে অভিন্ন সুরে বাংলানিউজকে বলেন, একটি আদর্শ ওয়ার্ড গড়ে তুলতেই তারা প্রার্থী হয়েছেন।  

সাবেক কাউন্সিলর ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডবাসীর সব সমস্যার সমাধান করবেন।

সূত্র মতে, সিটি নির্বাচনে বিলুপ্ত পৌরসভার ২১ ওয়ার্ডের সাবেক বাঘা বাঘা কাউন্সিলরদের অনেকেই প্রায় আড়াই বছর ধরে ভোটের মাঠে ছিলেন। পৌরসভার মেয়াদের শেষ দিকে এলাকায় যথেষ্ঠ নির্বাচনী লক্ষ্যভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন কাউন্সিলররা।

কিন্তু নির্বাচনের সাইরেন বাজার সাথে সাথেই অনেকের জনপ্রিয়তার দরপতন ঘটে। তা কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছেন একাধিক পুরাতন কাউন্সিলর।  

বিএনপি এ নির্বাচনে বর্জন করলেও সাধারণ ও সংরক্ষিত দুটিতেই একাধিক বিএনপি নেতা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের অনেকেই বিদায়ী পৌরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। জাতীয় পার্টির একাধিক নেতাও মহানগর নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে নিজেদের ১৭ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর একটি তালিকা দিয়েছে মহানগর জাতীয় পার্টি। এর মধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডের কমপক্ষে ৫ জনকে সমর্থন দিতে পারে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।

বিশেষ করে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার ‘সিমপ্যাথি’ থেকেই এক্ষেত্রে নমনীয় হতে পারে মেয়র বলয়ের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

ইকরামুল হক টিটু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় তার সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থীরা মানসিকভাবে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। তবে নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই কোনো প্রার্থীকেই সমর্থন করতে পারছেন না টিটু। এসব বিষয়ে প্রকাশ্যেই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন তিনি।

যদিও তার বলয়ের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুরাতন ওয়ার্ডে একাধিক সাবেক কাউন্সিলর ও নতুন ওয়ার্ডে বেশ কয়েকজন নতুন মুখকে সমর্থন দিচ্ছেন।  

এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ভোটাররাও একাধিক ওয়ার্ডে মেয়র বলয়ের প্রার্থীদের পক্ষেই হেলে পড়ছেন। তাদের বিশ্বাস, মেয়র অনুসারী ভোটে নির্বাচিত হলে নিজ ওয়ার্ডে উন্নয়ন বৈষম্য থাকবে না।  

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করায় সব প্রার্থীর মাঝেই  চলছে উদ্দীপনা। তবে একাধিক ওয়ার্ডে একাধিক কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবেও মনে করছেন প্রার্থীরা।

** মসিক নির্বাচন: কাউন্সিলর পদে তীব্র লড়াই
** মসিক নির্বাচন: নতুন মহানগরে ভোটের উচ্ছ্বাস
** মসিক নির্বাচন: জনপ্রতিনিধির দৌড়ে ২৯ জন গৃহিণী

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৯ 
এমএএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।