ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

প্রতিদ্বন্দ্বীর ছেলের বিপক্ষে মতিয়ার লড়াই

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮
প্রতিদ্বন্দ্বীর ছেলের বিপক্ষে মতিয়ার লড়াই মতিয়া চৌধুরী ও ফাহিম চৌধুরী

ময়মনসিংহ: শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। এর মধ্যে বিএনপি দলীয় প্রয়াত হুইপ জাহেদ আলী চৌধুরীকে দুইবার হারিয়েছেন। একবার অল্পকিছু ভোটের ব্যবধানে হেরেছেনও তাঁর কাছে। এবার আসনটিতে মতিয়া চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বী সেই জাহেদ আলীর ছেলে প্রকৌশলী ফাহিম চৌধুরী।

আবার ঠিক উল্টো চিত্র ইটনা, অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-৪ এবং ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে।

এ দুই আসনে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ছেলে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন।

 

তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নিজেদের পিতার কাছে পরাজিত দুই প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান ও শরীফুল আলম। ফলে এ তিন সংসদীয় আসনের ভোটযুদ্ধ নিয়েই সবার দৃষ্টি। ভিআইপি ও সৌভাগ্যের এসব আসনসমূহকে ঘিরে উত্তেজনা ও কৌতূহল রয়েছে সাধারণ মানুষের মনেও।  

জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত শেরপুর-২ আসন থেকে চারবার বিজয়ী হয়ে আসনটিকে আওয়ামী লীগের ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত করে তোলেন মতিয়া চৌধুরী।  

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য অবশ্য ২০০১ সালের নির্বাচনে মাত্র ২ হাজার ৫০০ ভোটে প্রয়াত হুইপ জাহেদ আলী চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন।

২০০৮ সালে জীবনের শেষ নির্বাচনেও জাহেদ আলী মতিয়া চৌধুরীর কাছে রেকর্ড ভোটে হেরে যান। এবার পিতার হারের বদলা নিতে উন্মুখ হয়ে আছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ফাহিম চৌধুরী। ‘বৈরী পরিস্থিতিতে’ দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়া একা একা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটতে হচ্ছে বলেও দাবি তার।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে ফাহিম চৌধুরী বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে আমার পিতা সংসদ সদস্য হয়ে রেকর্ড উন্নয়ন উপহার দিয়েছিলেন। এই আসনে আমার পিতার একটি নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। আমার পিতা পারেননি বলে আমি পারবো না এই তত্ত্বে আমি বিশ্বাসী না। আমি আশাবাদী সুষ্ঠু ভোট হলে আমি জয়ী হবো।

তবে গুরুত্বপূর্ণ এ আসন থেকে পঞ্চমবারের মতো সংসদ সদস্য হতে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। তার পক্ষে কোমর বেধে মাঠে রয়েছেন দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। এই দুই উপজেলায় প্রতিদিনই ৫ থেকে ৬টি করে পথসভা করছেন তিনি।

দেশের কৃষি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি উন্নয়নযজ্ঞে দুই উপজেলার চেহারাও বদলে দিয়েছেন মতিয়া, এমন দাবি স্থানীয় নেতা-কর্মীদের। নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় মতিয়া চৌধুরীর বিকল্প নেই। তার সততা দলমত নির্বিশেষে প্রশংসিত। আসনটিতে নৌকার চেয়েও ব্যক্তি মতিয়া চৌধুরীর ভোট বেশি। জনপ্রিয়তায় প্রতিদ্বন্দ্বী নবীন প্রার্থী তার সামনে টিকতে পারবেন না। ভোট রাজনীতিতে নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়ে আবারও সংসদে যাবেন তিনি।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-অষ্টগ্রাম-মিঠামইন) আসন থেকে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বিরল কীর্তির জন্ম দিয়েছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। কিংবদন্তি এই রাজনীতিক রাষ্ট্রপতি হবার পর উপ-নির্বাচনে প্রথমবার ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তার জ্যেষ্ঠ ছেলে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক। মানবিক ও জনকল্যাণমূলক নানা কাজের মধ্যে দিয়ে ভোটারদের ‘আস্থা’ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।  

এবার তৌফিককে লড়তে হচ্ছে পিতার সঙ্গে বার বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত প্রার্থী এক সময়কার ছাত্রলীগ নেতা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমানের সঙ্গে। বার বার দলবদল করা ফজলুর রহমান এখন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা। ভোটযুদ্ধে নিজের রাজনৈতিক সহকর্মীর সন্তানকে হারাতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে এই বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহ দেখাননি এই নেতা।  

রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিকের বিশ্বাস, তার পিতার সঙ্গে যিনি পারেননি তিনি তার সঙ্গেও ভোটে কুলিয়ে ওঠতে পারবেন না। নিজের এমন আত্নবিশ্বাসের কারণ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির এই সন্তান বাংলানিউজকে বলেন, আমি সংসদ সদস্য হওয়ার পরের দিন থেকেই পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছি। মাসে ১৫ থেকে ২০ দিন এলাকার মানুষের সঙ্গে সময় দিয়েছি। হাওরের ব্যাপক উন্নয়নে অবদান রেখেছি। নির্বাচনী প্রচারণায় আমি এর মূল্যায়ন পাচ্ছি। চারিদিকে নৌকার জোয়ার উঠেছে।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে বিএনপির শরীফুল আলমকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন জিল্লুর রহমান। ৬ বারের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। পরে তিনি রাষ্ট্রপতি হলে তার ছেড়ে দেওয়া আসনটিতে সংসদ সদস্য হন ছেলে নাজমুল হাসান পাপন।  

এবার পাপন লড়বেন পিতার সঙ্গে হেরে যাওয়া কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি শরীফুল আলমের সঙ্গে। স্থানীয় কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুসা জানান, আসনটি নৌকার শক্ত ঘাঁটি। এখানে এবারো নৌকার জয় সুনিশ্চিত।

তবে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শরীফুল আলম বলেন, এখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রতিনিয়তই হামলা ও মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮
এমএএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।