ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

তরুণ-নারী ভোটারেই জয়ের সমীকরণ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১২ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
তরুণ-নারী ভোটারেই জয়ের সমীকরণ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী: রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে এবার মোট ভোটার তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এরমধ্যে নতুন ভোটার ৩১ হাজার ২২১ জন। তারা সবাই তরুণ এবং প্রথমবার ভোট দেবেন।

আর মোট ভোটারের মধ্যে এক লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জনই নারী ভোটার। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন।

তাই এ হিসাবই বলে দিচ্ছে আসন্ন নির্বাচনে তরুণ ও নারী ভোটারই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মূল নিয়ামক শক্তি। তাদের সিল দেওয়া ব্যালটের রায়ই পাল্টে দিতে পারে জয়ের সমীকরণ।  

রাসিক নির্বাচনের ইতিহাস সাক্ষী- এই নতুন ও নারী ভোটাররাই প্রতিবার প্রার্থীদের জয়ের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। তাই শেষ মুহূর্তের প্রচারণা তাদেরই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বেশি।

তাদের ভোট টানতে মেয়র নির্বাচিত হলে এক লাখ বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি এরইমধ্যে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৪ দলের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

এছাড়া রাজশাহী নির্মাণাধীন হাইটেক পার্ক, মহানরের বড়কুঠি ওয়াইফাই জোন আবারও চালু, নতুন নতুন এলাকা উন্মুক্ত ওয়াইফাইয়ের আওতায় আনা, উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপের ব্যবস্থা, তরুণদের স্বাবলম্বী করতে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার তৈরির করার চমক দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি যেন তাদের ঘিরেই।  

আর নারী ভোটারদের আকর্ষণ করতে রয়েছে বন্ধ থাকা গ্যাস সংযোগ আবারও চালু, গার্মেন্টস শিল্প তৈরি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসার ঘটানোসহ নানান প্রতিশ্রুতি।

শিক্ষা নগরে কর্মমুখী তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের জন্য সহায়ক ও উপযোগী কর্মসূচি দেওয়ার কথাও বলছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। আর এতেই নৌকার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন তরুণ ভোটাররা।

প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে দেখা গেছে, এসব প্রতিশ্রুতিই মন কেড়েছে নগরের তরুণ ও নারী ভোটারদের। তাই তাদের ভাবনার জায়গায় এবার দাগ কেটেছে খায়রুজ্জামান লিটন।

কথা হয় রাজশাহী কলেজের ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফাওজুল করিম জনির সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার প্রথম ভোট দেবেন। তাই অনুভূতিটাই অন্যরকম। তবে প্রভাবিত হয়ে ধরাবাঁধা উন্নয়ন বা প্রতীক দেখে নয়, ভোট দেবেন বাস্তবতার নিরিখেই। লক্ষ্য রাখবেন তার প্রথম ভোট যেন নষ্ট না হয়।

প্রার্থীর কোন যোগ্যতাকে বিবেচনায় নিয়ে তাকে ভোট দেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে জনি বলেন, সারা দুনিয়ায় এখন তরুণদের জয়জয়কার। তরুণরাই ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসছেন। বদলে দিচ্ছে দেশ ও সমাজের চেহারা। কিন্তু রাজশাহীতে এখনও তরুণদের জন্য কাঙ্ক্ষিত জায়গা তৈরি হয়নি। তার কাছে যে প্রার্থীকে মনে হবে তিনি তরুণদের জন্য কাজ করতে পারবেন তাকেই ভোট দেবেন। এক্ষেত্রে আধুনিক রাজশাহী রূপকার খ্যাত সাবেক মেয়র লিটন তার বিবেচনায় আছেন।

মহানগরের সপুরা এলাকার অধিবাসী ফারজানা নওশীন নিশি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করেন। প্রথম ভোটার হয়েছেন। নিশি বলেন, এবার নির্বাচনে পাঁচজন মেয়র প্রার্থী থাকলেও জয়ের জন্য লড়াই হবে বড় দলের প্রার্থী লিটন ও বুলবুলের মধ্যেই।

এক্ষেত্রে গত পাঁচ বছরে বুলবুল তরুণদের জন্য কিছুই করতে পারেননি। তার আগের মেয়র লিটন বড়কুঠি এলাকায় তরুণদের জন্য যে ওয়াইফাই জোন চালু করেছিলেন তাও বন্ধ হয়ে গেছে বুলবুলের আমলে। এই অবস্থায় রাজশাহীতে এখনও কোনো তথ্য-প্রযুক্তি কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক কেবলই নির্মাণ হচ্ছে। আমি চাই না, এটার নির্মাণ কাজ থেমে যাক অথবা খুবই ধীরগতিতে চলুক। কারণ, আমরা এখানে চাকরি চাই। আর খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র হলে এর নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করতে যে ভূমিকা রাখতে পারবেন, তা আর কেউ পারবেন না। তাই ভোটটা অন্য কাউকে দেবেন না।

মহানগরের কাজলা এলাকার অধিবাসী আবু জাফরের ভাবনাটা আরও গভীর। জাফর গত বছর মাস্টার্স শেষ করে এখনও চাকরি পাননি। তিনি বলেন, রাজশাহী শিক্ষানগর। কিন্তু এখানে চাকরির জায়গা কম। হাসপাতাল আর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া এখানে তেমন চাকরি ক্ষেত্রই সৃষ্টি হয়নি। সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। তাই এবার সুযোগটা খায়রুজ্জামান লিটনকে দেওয়া উচিত বলে মনে করি। অন্তত কর্মসংস্থানের আশায় আমার মতো বেকাররা তাকে ভোট দেবে। লিটন মেয়র হলে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত চিকিৎসা কার্যক্রম চালু হবে।

এদিকে, ২০১৩ সালের ১৫ জুন নির্বাচনের ঠিক আগে তড়িঘড়ি করে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছিল মহানগরের বাসাবাড়িতে। দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ আছে আবাসিক গ্যাস সংযোগ। মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নির্বাচিত হওয়ার পরও গ্যাস সংযোগ চালু করতে পারেননি। এতেই ত্যক্ত-বিরক্ত নারীরা। তাই সেটি মাথায় রেখে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী এবার গ্যাস সংযোগ চালুর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

মহানগরের সপুরা এলাকার নারী ভোটার শাবনম মুসতারী বলেন, তারা হচ্ছেন নিরব ভোটার। যে যাই বলুক, নির্বাচনে তাদের প্রভাবই বেশি। প্রচারণার সময় মাঠে-ঘাটে দেখা না গেলেও ভোটের দিন কেন্দ্রে তারাই আগে যান, তাদের লাইনই বেশি লম্বা হয় আর তাদের সংখ্যাই বেশি। তাই যাকে ভোট দিয়ে নারীদের উপকার হবে, নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে তাকেই ভোট দেবেন। এক্ষেত্রে গ্যাস এনে দেওয়া আগের মেয়র লিটনকেই এগিয়ে রাখছেন তিনি। বাকি সিদ্ধান্ত ভোটের দিন নেবেন বলে জানান।    

বিষয়টি স্বীকার করে সামাজিক অধিকার আদায়ের সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, বিগত সময়ে রাজশাহীবাসীর দীর্ঘ আন্দোলনের পর সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন প্রধানমন্ত্রীকে রাজি করে রাজশাহীতে গ্যাস এনেছেন। বর্তমানে নানান আমলাতান্ত্রিক জটিলায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে খায়রুজ্জামান লিটন এবারও মেয়র প্রার্থী। তিনি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নির্বাচিত হলে আবারও গ্যাস সংযোগ চালু হবে। তাই আমরা আশাবাদী।

তিনি আরও বলেন, নারীদের একটি বড় অংশ গৃহিণী। ফলে তাদের টানতে প্রচারণায় এসেছে গ্যাস। এটি অবশ্যই নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেন এই নেতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৮
এসএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।